চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

সমুদ্র অর্থনীতির সম্ভাবনা কাজে লাগান

১৯ মে, ২০১৯ | ২:০৬ পূর্বাহ্ণ

পৃথিবীর চার ভাগের তিন ভাগই জল আর এক ভাগ স্থল। এই বিশাল জলসীমায় রয়েছে নদ-নদী, সমুদ্র, মহাসাগর ইত্যাদি। এগুলোকে কেন্দ্র করে পৃথিবীর ভবিষ্যৎ অর্থনীতির কথা চিন্তা করা হচ্ছে। শুধু অর্থনীতি নয়, দৈনন্দিন সুষম খাদ্য, পানি ও প্রোটিনসহ বিভিন্ন চাহিদা মেটাতে আগামী দিনে মানুষকে সমুদ্রের ওপর নির্ভরশীল হতে হবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। সেক্ষেত্রে আমাদের অবস্থা কোথায়? বাংলাদেশে আছে অসংখ্য নদ-নদী, আছে সমুদ্রসীমা। শুধু তাই নয়, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সমুদ্র্রসৈকত বাংলাদেশে অবস্থিত। আর আমাদের জলসীমার পরিমাণ প্রায় ২৪,১৪০ বর্গকিলোমিটার। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের অর্থনীতি ছিল কৃষিনির্ভর। সেই জায়গা থেকে আজ আমরা বেরিয়ে এসে বহুমাত্রিক অর্থনীতির দিকে ধাবিত হচ্ছি, যার অন্যতম হচ্ছে গার্মেন্টসহ শিল্প খাত, প্রবাসী আয় এবং সমুদ্রঅর্থনীতি।
বর্তমানে আমরা চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের কথা ভাবছি। এর মাধ্যমে শিল্প অর্থনীতিতে বিরাট পরিবর্তন আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যেখানে মানুষের পরিবর্তে কাজ করবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা অর্থাৎ রোবট। এর ফলে অনেকে বেকার হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কিন্তু ভবিষ্যতে যে সমুদ্র অর্থনীতির কথা ভাবা হচ্ছে, তাতে কর্মসংস্থান হারানোর কোনো আশঙ্কা নেই, বরং ব্যাপক হারে বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে সমুদ্রকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠবে নতুন নতুন শিল্প, যা দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখবে। বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন, বঙ্গোপসাগরের তলদেশে জ্বালানি তেল ও গ্যাসের বিশাল মজুদ রয়েছে, যে কারণে এই অঞ্চলটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এ সম্পদ উত্তোলন করা সম্ভব হলে বাংলাদেশ হবে এশিয়ার অন্যতম জ্বালানি ও গ্যাস শক্তিধর দেশ। দেশের চাহিদা মেটানোর পর অতিরিক্ত তেল ও গ্যাস বিদেশে রফতানি করার মাধ্যমে বিপুল অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হবে।
দেশে সমুদ্রতীরবর্তী অঞ্চলের প্রায় ৩ কোটি মানুষের জীবন-জীবিকা নির্বাহের প্রধান উৎস হবে মৎস্য আহরণ। পর্যটন খাতেও সমুদ্র বড় অবদান রাখতে পারে। কারণ সাগরপাড়ে সময় কাটাতে কার না ভালো লাগে! এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখতে পারেন বিদেশি পর্যটকরা। প্রতি বছর হাজার হাজার বিদেশি পর্যটককে কুয়াকাটা ও কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে ভিড় জমাতে দেখা যায়। কিন্তু তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতসহ বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা প্রদানের ক্ষেত্রে আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, নিরাপত্তার অভাব, উন্নতমানের হোটেল-মোটেলের অভাবে পর্যটন খাত সেভাবে এগোতে পারছে না। দেশের আমদানি-রফতানির ৯০ শতাংশ সম্পাদিত হয় সমুদ্রপথে। ভবিষ্যতে আমাদের সমুদ্রবন্দরের সক্ষমতা ও কর্মদক্ষ জনবল বৃদ্ধি করা হলে বৈদেশিক মুদ্রার আয় যেমন বাড়বে তেমনি বাড়বে নতুন কর্মসংস্থান। ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে জলসীমা নিয়ে বিরোধ মীমাংসার পর অপার সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও বিভিন্ন সমস্যার কারণে আমরা আমাদের সমুদ্রসীমাকে খুব বেশি কাজে লাগাতে পারিনি। অথচ ইন্দোনেশিয়ার অর্থনীতির সিংহভাগ সমুদ্রঅর্থনীতিভিত্তিক। কাজেই আমাদের বিশাল জলসীমাকে কাজে লাগাতে পারলে অর্থনীতির নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। নতুন শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠার মাধ্যমে কর্মসংস্থান বাড়বে। সেই সঙ্গে ২০২১ সালে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালে উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্যে সমুদ্রঅর্থনীতি হতে পারে আগামী দিনের প্রধান হাতিয়ার।

মো. রাশেদ আহমেদ
শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট