চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

স্মরণ : সৈয়দ আমিনুল হক শাহ্ ফরহাদাবাদী (রা.) পারশেদ বিন আনোয়ার

১১ ডিসেম্বর, ২০১৯ | ২:৩২ পূর্বাহ্ণ

হযরত মাওলানা শাহসুফি সৈয়দ আহম্মদ উল্লাহ মাইজভান্ডারী (কু.) প্রকাশ হযরত কেবলা থেকে খিলফাত প্রাপ্ত এবং গাউসুল আযম মাইজভান্ডারীর বিশিষ্ট খলিফা আলেমকুল শিরোমণি বাহারুল উলুম, শায়কুল ইসলাম যিনি ইসলাম প্রচার ও প্রসারের জন্য অনেকগুলো কিতাব স্বহস্তে লিখেছেন এবং উক্ত কিতাব এখনো মিসরের ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে সংরক্ষিত রয়েছে। সেই কিতাবগুলোর রচয়িতা হচ্ছেন মুফতি আল্লাম সৈয়দ মাওলানা আমিনুল হক শাহ ফরহাদাবাদী রা.।

হযরত মাওলানা সৈয়দ আহম্মদ উল্লাহ প্রকাশ হযরত কেবলা হতে খেলাফত প্রাপ্ত মুফতি সৈয়দ মাওলানা আমিনুল হক শাহ ফরহাদাবাদি একজন বড় মাপের আলেম ছিলেন। তাঁর দরবার শরীফে অনেক দূর-দুরান্ত থেকে ভক্তরা আসেন। তিনি আজীবন ইসলামী ভাবধারার প্রচার-প্রসার ও তরীকতের মৌলিক সাধনা করে গেছেন। তাঁর লেখনি ছিল ক্ষরধার। প্রগাঢ় জ্ঞানের কারণে হযরত কেবলা তাঁকে মুফতি উপাধি দিয়ে মাইজভান্ডারী তরিকতের অধিকারী ভুষিত করেন।

সৈয়দ আমিনুল হক ফরহাদাবাদি তাঁর সুযোগ্য পিতা সৈয়দ আব্দুল করিম (রহ.) এর কাছে থেকে পবিত্র কুরআন ও নামায শিক্ষা গ্রহণ করেন। পবিত্র কুরআন শিক্ষা শেষ করে তিনি স্থানীয় মাদারাসায় ভর্তি হন এবং সেখানে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা শেষ করার পর উচ্চশিক্ষা লাভের জন্য চট্টগ্রাম শহরের সরকারী মহসনীয়া মাদারাসায় ভর্তি হন। ইসলামি জটিল বিষয়ের উপর তার ফতুয়া প্রণয়নের দক্ষতা, কুরআন, ইলমে হাদীছ, উসুলে হাদীছ ফিক্হ উসুলে ফিক্হ তাফসীর আকাইদ কালাম নাহু সরফ মনোযারা, মানতিক ফরায়েজ ফার্সি ও পদ্য লিখন পদ্ধতিতে দক্ষতা দেখে সমসাময়িক আলমগণ তাঁকে যোগ্য মর্যাদা দেন এবং সর্বসাধারণের কাছে তিনি বড় মাওলানা সাহেব নামে পরিচিতি লাভ করেন। তিনি বিভিন্ন ভাষায় পারদর্শী ছিলেন। বাংলা, হিন্দি, উর্দ্দু, ফারসিসহ অসংখ্যা ভাষায় তাঁর পা-িত্য ছিল।

মিলাদে মোস্তফা (সা.) এর বিষয়ে ‘নাজ মে দিল কেবলা ফি মিলাদে মোস্তফা সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম’ নামক একটি অতি মূল্যবান কিতাব রচনা করার পর লেখক হিসেবে তাঁর সুখ্যাতি চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এলাকায় বড় মাওলানা সাহেব নামে পরিচিতি লাভ করেন। ইমামে আলা হযরত আহমদ রেযা খান বেরলভী (রা.) পত্রের মারফত তার দফতরে আল্লামা সৈয়দ মাওলানা আমিনুল হক শাহ ফরহাদাবাদীকে আমন্ত্রণ জানান। গাউছুল আজম মাইজভান্ডারী তাঁকে খেলাফত প্রদানকালে কালাম করেন, ‘আমার ৬টি কিতাব হতে একটি তোমাকে দিয়েছি। আমার ১২ টি কাছারী আছে, তৎমধ্যে ১টি তোমাকে দিয়েছি। আমার ১২টি বাতি আছে তৎমধ্যে একটি বাতি তোমাকে দিয়েছি এবং আমার ১২ জন ইমামের মধ্যে একজন তোমাকে নিযুক্ত করেছি।’

অছিয়ে গাউছুল আজম হযরত মাওলানা সৈয়দ দেলাওর হোসাইন মাইজভান্ডারী রচিত ‘বেলায়তের মোতলাকা’ নামক কিতাবে সৈয়দ মাওলানা আমিনুল হক শাহ ফরহাদাবাদীকে ‘একজন জবরদস্ত মহান কামেল অলি ও ইসলামী বিধান শাস্ত্র বিশারদ মুফতি’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

ধর্মশাস্ত্রে প্রগাঢ় জ্ঞানের কারণে তিনি মিসরের জামেউল আজহার বিশ্ব বিদ্যালয়ের আলেমগণ কর্তৃকও প্রসংশিত হয়েছিলো। শাওয়াহিদুল ইবতালাত ফি তারদীদে মা-ফি রাফিউল ইশকালাত, দাফিউশ শোবহাত ফি জাওয়াজিল ইস্তিজারে আলাত তোয়াআত (এটি ধর্মীয় কাজ করে পারিশ্রমিক লওয়া সম্পর্কে), রাফিউল পেশাবী ফি তারদীদে মাফি ইশা আতিল ফতাবী, মের আতুল ফান ফি শারহে মোল্লা হাছান, গায়তুত তাহকীক ফিমা ইতায়াল্লুকু বিহি তালাকুত তায়ালীক (এটি স্বামী-স্ত্রী তালাক প্রসঙ্গে ফাতোয়া), আত তওজিহাতুল বহ্যিাহ ফি তারদীদে মা-ফিত তানকিহাতুছ ছুন্নিয়া (এই ফতোয়া মিসর জামেউল আজহার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশংসিত ও মনোনীত হয়েছিল)সহ বেশকিছু কিতার রচনা করেছেন।

এই মহান অলিয়ে কামেল ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দের ২৭ শে জিলহজ্ব মোতাবেক ২৭ শে অগ্রহায়ণ বুধবার যোহরের নামাযের পর ৭৯ বছর বয়সে রাব্বুল আলামিনের এর ডাকে সাড়া দিয়ে ইহলোক হতে পর্দা করেন। আজ ১১ ডিসেম্বর তাঁর ৭৫তম ওফাত দিবস। এই মহামনিষীর ওরসে পাকে মহান আল্লাহ আমাদেরকে শায়খুল ইসলাম বাহারুল উলুম এর রূহানী ঈমানী ইলমি ফজুয়াত ও বরকত নসীব করুক এবং তার রওজা শরীফে আল্লাহ পাকের অগণিত রহমত বর্ষিত হোক। আমিন, ছুম্মা আমিন।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট