চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

মৃত্যুফাঁদ!

উপমিত উপমা

২৫ নভেম্বর, ২০১৯ | ১:৫৫ পূর্বাহ্ণ

দিনকয়েক আগে ২নং গেইট থেকে রিকশা নিয়ে আমি বাসার দিকে যাচ্ছিলাম। রিকশাওয়ালার সাথে দামে মিললো না। বললো যে সে বাড়ি যাচ্ছে তাই প্যাসেঞ্জার নিয়ে যাবে, না হয় যেতো না। আরো কয়েকটা রিকশা দরদাম করে মনমতো না পেয়ে আমি প্রথম রিকশাতেই উঠলাম। আফমি প্লাজার সামনে গিয়ে সে আমাকে একটা কাগজ দিলো। সে পড়ালেখা জানে না, আমি যাতে একটু পড়ে দিই। আমার মস্তিষ্ক তখনো পর্যন্ত কোন বিপদের সিগনাল দেয়নি। কাগজ খুলে দেখলাম প্রেসক্রিপশন। খুবই ছোট হাতের লেখা। চশমা ছাড়া এত ছোট লেখা আমি পড়তে পারি না তাই আমি চোখের একেবারে কাছে নিয়ে এলাম কাগজটা। ঠিক তখনোই কড়া একটা গন্ধ আমাকে অবশপ্রায় করে দিলো! মস্তিষ্ক জানান দিলো, বিপদ। সাথে সাথেই কাগজটা অনেক দূরে সরিয়ে নিলাম আমি। বড় বড় নিঃশ্বাস নিচ্ছি, নিজেকে স্থির করার প্রাণপণ চেষ্টা করছি। মাথা ঘুরছে প্রচ-, থেকে থেকে বমি আসছে। রিকশাওয়ালাকে বললাম, কাগজটা নেন।

সে জানতে চাইলো কি লেখা আছে। আমি বললাম, ওষুধের নাম, ফার্মেসিতে বললে দিবে। সে তখন আমাকে বারবার বলতে লাগলো, আপনি একটু নামগুলো বলে দেন না! তখন আমি শাসিয়ে বললাম, আমি পড়তে পারবো না! কাগজটা নেন। কাগজ নিয়ে এই পর্যায়ে সে আঁকাবাকা করে রিকশা চালাতে লাগলো। আমি প্রায় চিৎকার করেই বলে উঠলাম, “আপনার কি সমস্যা? এত জোরে চালাচ্ছেন কেনো? আমাকে ফেলে দিবেন নাকি! গাড়ি দাঁড় করান।” উনি দাঁড়ানোর পর আমি বুঝলাম রিকশা থেকে নেমে দাঁড়ানোর শক্তি আমার নেই। গা গুলিয়ে ওঠে। আমি বমি করে দিই। সে বললো তার বাড়িতে যাবার তাড়া। আমি তাকে বললাম, আমাকে নামিয়ে দিয়ে বাড়ি চলে যেতে। সে এরপর আস্তে চালাবে বলে রিকশা চালাতে শুরু করলো। তিন মিনিটের মধ্যে বাসায় পৌঁছালাম। রাস্তা বুঝতে পারছিলাম না। বাসায় এসে স্নান করার পর আমার বমি হলো খুব।

হয়তো আমি তাকে পুলিশে দিতে পারতাম, শাস্তি দিতে পারতাম, অনেক কিছুই করতে পারতাম। রাস্তায় ফেইস করা যেকোন কিছুতে আমি রিয়েক্ট করি, সীন ক্রিয়েক্ট করি। কিন্তু মাথায় শুধু একটাই চিন্তা ছিলো, যেকোন মূল্যে ঘরে ফিরতে চাই। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব। চরম অশান্তি ও অস্বিস্তিতে কেটেছে বড় একটা সময়। কাগজ দেয়ার এই ঘটনা ঢাকা শহরে নতুন নয়। আমিও ফেইসবুক থেকেই জেনেছি। তাই হয়তো এই যাত্রায় বেচেঁ গেছি। চট্টগ্রামেও শুরু হয়ে গেছে। তার প্রমাণ আমি। সবাই খুব, খুব সাবধানে থাকবেন, সতর্ক থাকবেন। সতর্ক না থাকলে এ ধরনের ঘটনা যে কাউকে সর্বনাশ করতে পারে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট