চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

স্বাস্থ্যসেবায় অনৈতিক বাণিজ্য বন্ধ করতে হবে

২২ নভেম্বর, ২০১৯ | ২:২৬ পূর্বাহ্ণ

দীর্ঘদিন থেকেই একশ্রেণির মুনাফাশিকারী চক্র চিকিৎসাসেবার নামে দীর্ঘদিন থেকেই মানহীন ডায়াগনস্টিক ও ক্লিনিক ব্যবসার মাধ্যমে রোগীসাধারণের পকেট কেটে অর্থের পাহাড় গড়ছে। চিকিৎসাসেবার মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়, যার সাথে একজন মানুষের বাঁচা-মরার প্রশ্ন জড়িত, তা নিয়েও তারা প্রায় নির্বিঘেœ যথেচ্ছাচার করে যাচ্ছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগের নির্লিপ্ত ভূমিকার কারণে মুনাফাশিকারী চক্র অনেকটা নির্বিঘেœ রোগীদের পকেট কাটার এই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় জনস্বাস্থ্যের প্রতি হুমকিপূর্ণ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর বিরুদ্ধে ত্বরিৎ পদক্ষেপ না নিলে স্বাস্থ্যবান জাতি গড়ার স্বপ্ন কখনো পূরণ হবে না।

প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী চট্টগ্রাম মহানগরীতে দিন দিন বাড়ছে অনুমোদনবিহীন, মানহীন ক্লিনিক ও রোগ নিরূপণ প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা। বিভিন্ন দৈনিকের অনুসন্ধানী রিপোর্টে তুলে ধরা হয়েছে কীভাবে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের চোখ এড়িয়ে নগরীতে শত শত অনুমোদনহীন ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার ব্যাঙের ছাতার মতো গজে উঠেছে। আর অবৈধ ক্লিনিকগুলো কীভাবে রোগীদের হয়রানি করছে, কিভাবে একশ্রেণির অর্থলোভী চিকিৎসক এসব প্রতিষ্ঠানকে সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে, এসব প্রতিষ্ঠান কীভাবে নি¤œমানের সেবা দিয়েও আদায় করছে উচ্চমূল্য, কিভাবে এসব প্রতিষ্ঠান রোগীর অপমৃত্যু ঘটাচ্ছে প্রভৃতিও ফুটে উঠেছে পত্রিকার রিপোর্টগুলোতে। কিন্তু দুঃখজনক বিষয়টি হচ্ছে, পত্রিকায় অবৈধ মানহীন চিকিৎসাসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে অসংখ্য অনুসন্ধানী রিপোর্ট প্রকাশেরও পরও তারা ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থেকে গেছে। গুটিকয় প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হলেও এখনো শত শত অবৈধ ও মানহীন প্রতিষ্ঠান অবাধে চালিয়ে যাচ্ছে চিকিৎসাসেবার নামে ক্লিনিক ও রোগ নিরূপণ ব্যবসা। আমরা আশা করেছিলাম খাদ্যে ভেজাল প্রতিরোধে সময়ে সময়ে যেভাবে অভিযান পরিচালিত হয়েছে এবং হচ্ছে, ঠিক সেভাবে এসব অবৈধ ও মানহীন ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে সে প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। প্রসঙ্গত, বছরখানেক আগে এক আদেশে বেসরকারি ক্লিনিক, হাসপাতাল, ল্যাবরেটরি ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে স্বাস্থ্য পরীক্ষার ফি তালিকা করে টানাতে নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট। ওই আদেশের পরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দেশের সব বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ল্যাবরেটরিতে বিভিন্ন প্যাথলজি পরীক্ষার ফি, সেবার মূল্য তালিকা এবং চিকিৎসার ফির তালিকা করে প্রকাশ্যে টানানোর আদেশ জারি করে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত উচ্চ আদালতের সে আদেশ বাস্তবায়ন করা হয়নি। সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের নির্লিপ্ত ভূমিকার কারণে একদিকে সাধারণ মানুষ হচ্ছে প্রতিনিয়ত চিকিৎসাপ্রতারণার শিকার, এমনকি অপ-চিকিৎসার কারণে জীবনও হচ্ছে হুমকিপূর্ণ; অন্যদিকে সরকার হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব। ‘থলেভর্তি’ অর্থের বিনিময়ে চিকিৎসা নিতে গিয়ে অনেকে ভুল চিকিৎসার কারণে মৃত্যুবরণও করছে। বিপরীতে মুনাফাশিকারী চক্রটি রাতারাতি ‘আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ’ বনে যাচ্ছে।

লাভজনক ব্যবসা হওয়ায় এখন মুনাফালোভীরা ক্লিনিক ব্যবসার দিকে ঝুঁকছে বেশি। কিন্তু নানা শর্ত পূরণের ঝামেলা এড়াতে অনেকে নিবন্ধন ছাড়াই শুরু করছে ক্লিনিক ব্যবসা। এসব অবৈধ প্রতিষ্ঠানগুলোর সেবার মানও হচ্ছে খুবই নি¤œমানের। এসব প্রতিষ্ঠানে রক্ত, মল-মূত্র পরীক্ষা এবং এক্সরে, আলট্রাসনো, সিটি স্ক্যানের মতো সূক্ষ্ম কাজও করানো হয়ে থাকে হাতুড়ে ও অদক্ষ লোকদের দ্বারা। পরিণতিতে তৈরি হয় ভুল রিপোর্ট। আর ভুলে ভরা রিপোর্টের ভিত্তিতে চিকিৎসার করাতে গিয়ে দেখা দেয় বিপর্যয়। রোগীরা মনলোভা প্রচার ও প্রতিষ্ঠানের চোখ ঝলসানো চেহারা দেখেই ভীড় জমায় এসব মানহীন প্রতিষ্ঠানে। শেষ পর্যন্ত রোগমুক্তি নয়, হয় অর্থের অপচয়; এমনকি ভুল চিকিৎসার কারণে অনেকের মৃত্যুও হয়। এসব অবৈধ, মানহীন প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হলে সাধারণ মানুষ ঠকতো না। বৈধ ও মানোত্তীর্ণ ভালো চিকিৎসা-প্রতিষ্ঠানগুলোর মানও আরও বাড়তো। কিন্তু সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করছে না বলেই অবৈধ, মানহীন প্রতিষ্ঠানগুলো নির্বিঘেœ চালিয়ে যাচ্ছে ক্লিনিক ব্যবসা। জনস্বার্থে বিষয়টির প্রতি সরকারের মনোযোগ দেয়া উচিত। আমরা মনে করি, জনস্বাস্থ্য নিয়ে সব ধরনের অনৈতিক বাণিজ্য বন্ধ করতে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া জরুরি।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট