চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য নিয়ে গুজব

জুবায়ের আহমেদ

২২ নভেম্বর, ২০১৯ | ২:২৬ পূর্বাহ্ণ

বাংলা দেশে খুব সহজেই গুজব ছড়িয়ে পরে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকের প্রভাবে তা এখন মহামারি আকার ধারণ করলেও বাংলাদেশে ইন্টারনেট সহজলভ্য হওয়ার আগে থেকেই গুজবের প্রচলন ছিলো বাংলাদেশে। গ্রামগঞ্জে কিংবা শহরে নতুন কোন ব্রিজ নির্মাণ হলেই গুজব ছড়িয়ে পড়তো ব্রীজে শিশুদের মাথা লাগবে, সবাই যেনো সাবধান থাকে। সাধারণ মানুষ সাবধান হতো, তবে বাড়ীর আশেপাশে কিংবা এলাকায় অপরিচিত কোন মানুষ দেখলেই ছেলেধরা বলে গণপিটুনীর ঘটনা বাংলাদেশে যুগ যুগ ধরে চলে আসছে, যা এখন অসহ্যনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে।

পদ্মা সেতুতে মানুষের মাথা লাগবে, এমন গুজবের বলি হয়েছে বহু নিরীহ মানুষ। এর রেশ কাটতে না কাটতেই পেঁয়াজ সংকটের গুজব ছড়িয়ে পড়ার মাধ্যমে ২০-২৫ টাকা কেজি পেঁয়াজের দাম ২৬০ টাকা পর্যন্ত হয়েছে, যা অবিশ্বাস্য। অথচ ভারত কিংবা কোন দেশেই পেঁয়াজের সংকট দেখা দেয়নি এবং বাংলাদেশেও পেঁয়াজের সংকট দেখা দেয়নি। তার বড় প্রমাণ হলো বিগত কয়েক মাসে দেশের মানুষ যত পেঁয়াজ রান্নায় ব্যবহার করেছে, তত পেঁয়াজই মুনাফালোভীদের গোডাউনে নষ্ট হয়েছে এবং ট্রাকযোগে দেশব্যাপী নষ্ট হওয়া পেঁয়াজ নদীতে ফেলার ঘটনাই তার বড় প্রমাণ।
পেঁয়াজ সংকটের গুজব এবং দাম বৃদ্ধির রেশ কাটতে না কাটতেই লবণের দাম বৃদ্ধির গুজব ছড়িয়ে দেয় এক শ্রেণির লোকজন। অথচ বিগত ৫৭ বছরের ইতিহাসে এবারই সবচেয়ে বেশি লবন উৎপাদন হয়েছে বাংলাদেশে, যেখানে লবণের দাম আরও কমার কথা, সেখানে গুজব ছড়িয়ে ফাঁয়দা লুটে নিচ্ছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। সাধারণ নিরীহ মানুষজনও গুজবে কান দিয়ে স্বাভাবিক বাজার মূল্যের চেয়েও বেশি দামে লবন কিনে রাখছে জমা রাখবে বাসায়। যদিও লবনের দাম বৃদ্ধির গুজবটি সরকার ও দায়িত্বশীল নাগরিকগণ দ্রুতই গুজব হিসেবে প্রমাণ করতে সমর্থ হয়েছে, যার কারণে লবনের দাম বৃদ্ধির গুজব ধোপে টেকেনি।

প্রত্যেকটি বিষয়েই গুজব মূলত স্বার্থান্বেষী মহলই ছড়ায়, ফেইসবুক ও সাধারণ মানুষের অসচেতনতার কারণে যা দ্রুত দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। পেঁয়াজ, লবন, চাউলের দাম নিয়েও তা হয়েছে। যদিও পেঁয়াজের মতো সাধারণ ও কম দামী পণ্যের দামও সরকার দ্রুত নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি, যা মূলত সরকারের ব্যর্থতা। পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে সুবিধাভোগকারী ব্যক্তিরা আরো হিং¯্র হয়ে গেছে, যার মাধ্যমে লবন, চাউলের দাম বাড়ার গুজব সহজইে ছড়িয়ে দিতে পেরেছে।

বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ এখনো দৈনিকভিত্তিতে কাজের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে এবং চাকুরী করে মাস শেষে সামান্য বেতনে সংসার চালায়। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধির কারণে সে সকল মানুষজনের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। স্বার্থান্বেষী মহল সবসময়ই তাদের স্বার্থ আদায়ে ব্যস্ত, কার ক্ষতি হলো বা ক্ষতি হবে, সেসবে তাদের খেয়াল নেই। মানুষ গুজব লুফে নেয়, এই সুযোগটা স্বার্থান্বেষী মহল ব্যবহার করছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির দাম বাড়িয়ে মাত্র এক সপ্তাহ বিদ্যমান রাখতে পারলেই তাদের উদ্দেশ্য সফল। একের পর এক পণ্যের দাম বাড়িয়ে সুবিধা ভোগ করতেই মাঠে নেমেছে তারা।

কাজেই উক্ত বিষয়ে সরকারকে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি নাগরিকদের সঠিক সিদ্ধান্ত ও দায়িত্ব পালন করা জরুরী। কেউ একজন ছড়িয়ে দিলেই সে গুজবের সত্যতা যাচাই না করে নিজেরাও প্রচারে নেমে পড়া কাম্য নয়। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির মূল্যবৃদ্ধি পেলে তা সরকারী ভাবে কিংবা পণ্যের গায়েই মূল্য লেখা থাকবে, সেসব যাচাই না করে বাড়তি দামে পণ্য খরিদ করা থেকে বিরত থাকা জরুরী এবং এলাকাভিত্তিক যারা প্রথমে গুজব ছড়ায় কিংবা ফেইসবুকে যারা গুজব ছড়ায় তাদেরকে নিবৃত করা জরুরী। অন্যথায় গুজবের বলি হয়ে সাধারণ মানুষের মৃত্যুর মতো দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়িয়ে হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেবে মুনাফালোভী ব্যবসায়ীরা। এক্ষেত্রে সরকারের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ ও নাগরিক সচেতনতার কোন বিকল্প নেই।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট