চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

শিশুর উপযোগী খেলনা বাছাই

মুহাম্মদ আবু নাসের

২১ নভেম্বর, ২০১৯ | ২:১৪ পূর্বাহ্ণ

খেলনা দিয়ে ছোট বাচ্চারা খেলে। যে পরিবারের আর্থিক সামর্থ্য যেমন সে পরিবারের শিশু সে রকম খেলনা দিয়ে খেলে। আমরাও খেলেছি, বন্ধুরা খেলেছে। আশির দশকে খেলনা হিসেবে গাড়ি, হেলিকপ্টার, বিল্ডিং সেট, রুবিকস কিউব জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। সে সময় মেয়েরা খেলত পুতুল ও হাঁড়িপাতিলের সেট দিয়ে, অন্যান্য খেলনার পাশাপাশি ছোট ক্যারামবোর্ড ও মার্বেল দিয়ে খেলা বা গাডুলি বেশ জনপ্রিয় ছিল। অথচ আমাদের শৈশবে গরিব শিশুরা তেমন কোন খেলনা পেত না। তারা মাটির খেলনা দিয়ে খেলত। এখন কম দামের খেলনাও পাওয়া যায় যা গরিব পরিবারও কিনে দিতে পারে। তাছাড়া একজনের ফেলনা আরেকজনের খেলনা কর্মসূচিতে কিছু কিছু সুবিধাবঞ্চিত শিশু খেলনা পাচ্ছে।

আজকের দিনের অভিভাবকরা জানেন কোন্ খেলনাটা শিশুর উপযোগী আর কোনটা নয়। প্রথম যখন ট্যাব বাজারে আসে তখন স্বপ্নেও কেউ ভাবেনি এই ডিভাইসটা গুরুত্বপূর্ণ কাজের পাশাপাশি শিশুদের খেলনা হিসেবও ব্যবহৃত হবে। অথচ আজকের দিনের প্যারেন্টরা জানেন খেলনা হিসেবে ট্যাব কতটা ক্ষতিকর শিশুর জন্য। তারপরও আভিজাত্য প্রকাশে দুধের শিশুরাও ট্যাব ব্যবহার করছে অভিভাবকদের প্রণোদনায়। একইসঙ্গে প্রয়োজনের অতিরিক্ত খেলনা পাচ্ছে ছোটরা। এই ছোট শিশুরা একটু বড় হলেই সচেতন গার্জিয়ানরা তাদের হাতে তুলে দিচ্ছে পিস্তল-বন্দুকসহ ভয়ংকর সব দামি মারণাস্ত্র! আজকের দিনের শিশুরা যে সব আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে খেলে সেগুলো অবিকল আসল অস্ত্রের আদলে গড়া।

বলা যায় অনেকটাই রেপ্লিকা। যে সব শিশু খেলনা অস্ত্র হাতে পায় তারা শিশু বয়স থেকেই নিজেকে শক্তিশালী ও আক্রমণাত্মক হিসেবে গড়ে তুলেছে। ‘খেলনা মারণাস্ত্র’ শিশুদের হাতে তুলে দেওয়ার অর্থই হচ্ছে অপরাধপ্রবণতার জন্য তাদের মানসিকভাবে প্রস্তুত করা, তাদের মানসিকতার পরিবর্তন ঘটানো। এসব খেলনা অস্ত্র পেলে শিশুরা একে স্বাভাবিক ভাবে গ্রহণ করে, খেলা করে। কিন্তু এর নেতিবাচক দিক বিবেচনা করলে বিষয়টি একেবারেই অনুচিত। বিক্রেতারা এসব বিক্রি করবেন, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু অভিভাবকদের আরো সচেতন হওয়া উচিত।

শুধু ধনীর সন্তানরা খেলছে তা নয়, নি¤œবিত্ত পরিবারের শিশুরা ও কিশোররা খেলছে। পাড়ার মোড়ে গড়ে ওঠা ভিডিও গেমসের দোকানে। খেলার টাকা জোগতে গিয়ে তাদের অনেকেই অপরাধ প্রবণ যেমন হয়ে উঠছে তেমনি নানা ধরনের শারীরিক মানসিক সমস্যায় ভুগছে।

খেলনা ছাড়া শিশুকাল কল্পনাই করা যায় না। আজকের দিনে কিন্তু শিশুদের কাঁড়ি কাঁড়ি খেলনা দিয়েও তাদের মানসিক বিকাশ ঘটানো যাচ্ছে না। আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থায় লেখাপড়ার পরিবর্তে ‘খেলাপড়া’র কথাই জোর দিয়ে বলা হচ্ছে। খেলাপড়ার জন্য চাই সঠিক খেলনা নির্বাচনের মানসিকতা। সামাজিক ও পারিবারিক সচেতনতা এক্ষেত্রে জরুরি। শিশুর খেলার উপকরণ হতে হবে নিরাপদ, আনন্দময় ও মানসিক বিকাশ সাধনের পরিপূরক।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট