চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

নীতির প্রশ্নে অবিচল অনন্য সম্পাদক স্থপতি তসলিমউদ্দিন চৌধুরী

১৫ নভেম্বর, ২০১৯ | ১:২৯ পূর্বাহ্ণ

দৈনিক পূর্বকোণের প্রাক্তন সম্পাদক এবং দি পূর্বকোণ লিমিটেডের চেয়ারম্যান স্থপতি তসলিমউদ্দিন চৌধুরীর দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ২০১৭ খ্রিস্টাব্দের এই দিনে ঢাকার ধানম-ি রেনেসাঁ হাসপাতাল এন্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেন। প্রায় ২৪ বছর দুরারোগ্য ব্যাধির সাথে লড়াই করে শেষপর্যন্ত চিরবিদায় নেন তিনি। তাঁর জীবনকালকে খুব দীর্ঘ বলা যাবে না। জন্ম ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দের ১ জানুয়ারি। কিন্তু মাত্র ৬৪ বছরের মহার্ঘ জীবনটিকে তিনি এই জনপদের মানুষের কল্যাণে এমনভাবে কাজে লাগিয়েছেন যে তা সবার কাছে শ্রদ্ধার ও ভালোবাসার, অনুসরণ ও প্রেরণার এক অনন্য দৃষ্টান্তে পরিণত হয়েছে। দু’বছর আগে তিনি এই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে গেলেও আজও তিনি সব ক্ষেত্রে, সবার নিকট প্রাসঙ্গিক।

স্থপতি তসলিমউদ্দিন চৌধুরী ছিলেন মূলত স্থাপত্যবিদ্যার এক কৃতীজন। স্থাপত্যবিদ্যাকে কেন্দ্র করেই তাঁর অ্যাকাডেমিক জগৎ তৈরি হয়েছিল। তবে দেশ ও জনসেবার মহান ব্রত নিয়ে তিনি মিডিয়া জগতকেই কর্মসাধনার ক্ষেত্র হিসেবে বেছে নেন। প্রতিভার দীপ্তি ছড়িয়ে সংবাদপত্র জগতে উপস্থিত হন একজন কুশলী সাংবাদিক হিসেবে। সাংবাদিকতা, সম্পাদনাসহ সব ক্ষেত্রেই তিনি উন্নত মেধা ও আধুনিক চিন্তার ছাপ রেখেছেন। কালে অন্য সবাইকে ছাড়িয়ে হয়েছেন সংবাদপত্র জগতের অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। প্রসঙ্গত, দৈনিক পূর্বকোণ আত্মপ্রকাশ করে ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দের ১০ ফেব্রুয়ারি। সূচনালগ্নেই সম্পাদক নিযুক্ত হন সাংবাদিক-কূটনীতিবিদ কে.জি মুস্তাফা। কে.জি মুস্তাফা বাংলাদেশের সংবাদপত্র জগতে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। তাঁর হাত ধরেই পূর্বকোণ এই জনপদের প্রথম আধুনিক সংবাদপত্র হিসেবে সচেতন পাঠকের হৃদয়ে স্থান করে নেয়। স্থপতি তসলিমউদ্দিন চৌধুরী হচ্ছেন তাঁরই সফল উত্তরসূরি। কে.জি মুস্তাফা প্রতিশ্রুত সময় পর্যন্ত দায়িত্ব পালন শেষে বিদায় নিলে ১৯৮৯ খ্রিস্টাব্দের ১ ফেব্রুয়ারি দৈনিক পূর্বকোণের স্বপ্নদ্রষ্টা চট্টলদরদী আলহাজ ইউসুফ চৌধুরী পাঠকপ্রিয় এই পত্রিকার সম্পাদনার ভার অর্পণ করেন স্থপতি তসলিমউদ্দিন চৌধুরীর ওপর। তিনি সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে দৈনিক পূর্বকোণকে আরো বেশি জনলগ্ন করার উদ্যোগ নেন। নানা মেধাবী পরিকল্পনায় তিনি পূর্বকোণকে ঢেলে সাজান। এক ঝাঁক মেধাবী ও পরিশ্রমী সংবাদকর্মীর সহযোগে তিনি দৈনিক পূর্বকোণকে জনসম্পৃক্ততার তুঙ্গ শিখরে নিয়ে যান। পাঠকচাহিদাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়ার কারণে দৈনিক পূর্বকোণ অন্য সব পত্রিকাকে পেছনে ফেলে পাঠকপ্রিয়তার শিখরে চলে যায়। শুধু তাই নয়, পূর্বকোণ এদেশের সেরা আঞ্চলিক পত্রিকার মর্যাদাও লাভ করে। এ অঞ্চলে বস্তুনিষ্ঠ ও সৎ সাংবাদিকতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত তিনি। জনস্বার্থলগ্ন সাংবাদিকতা ও সংবাদপত্রের বিকাশের আন্দোলনে অন্যতম পথিকৃৎ হিসেবে তিনি আপন কৃতিত্বে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।

স্থপতি তসলিমউদ্দিন চৌধুরী চিন্তায় ও মননে আধুনিক এবং ছিলেন স্পষ্টভাষী। ছিলেন সংস্কারমুক্ত, দায়িত্বপ্রবণ। ছিলেন ধর্মপ্রাণ কিন্তু অসাম্প্রদায়িক একজন আলোকিত মানুষ। সম্পাদকের গুরুদায়িত্ব পালনের পাশাপাশি তিনি নানা সমাজউন্নয়নমূলক কাজেও যুক্ত ছিলেন। নিজস্ব প্রাতিষ্ঠানিক দায়িত্বের বাইরেও তিনি অসংখ্য শিক্ষা ও সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত ছিলেন। মহর্ষি পিতার ন্যায় চট্টগ্রামের উন্নয়নচিন্তায় মশগুল থাকতেন সবসময়। আজীবন তিনি চট্টগ্রামের উন্নয়ন আন্দোলনে সম্পৃক্ত ছিলেন। দেশপ্রেমে ঋদ্ধ থেকে সমাজ ও রাষ্ট্রের অনেক গুরুদায়িত্বও বহন করে গেছেন। ছিলেন শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির একনিষ্ঠ অনুরাগী। প্রবল পাঠের নেশার কারণে তিনি নানা বিষয়ে অগাধ পা-িত্যের অধিকারী হয়ে উঠেছিলেন। নীতির প্রশ্নে তাঁর অবস্থান সবসময়ই ছিল আপোষহীন, দৃঢ়। দুষ্ঠুচক্রের নানা হয়রানি কিংবা প্রলোভন তাঁকে নিজস্ব অবস্থান থেকে টলাতে পারে নি। আমৃত্যু অবিচল ছিলেন নীতির প্রশ্নে। ফলে

তাঁর সাধনা ও সংগ্রামমুখর জীবনের আলেখ্য সবার কাছে পরম আদরণীয় হয়ে রয়েছে। পরলোক গমনের দু’বছর পরেও আমাদের সবার মাঝে তিনি যেমন প্রাসঙ্গিক ও স্বমহিমায় উজ্জ্বল, তেমনি সুদূর ভবিষ্যতেও তিনি প্রাসঙ্গিক ও অমলিন হয়ে থাকবেন।
আমরা আমাদের প্রিয় সম্পাদকের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানাই। তাঁর রুহের মাগফিরাত কামনা করি এবং প্রার্থনা করি, মহান আল্লাহতায়ালা তাঁকে জান্নাত নসিব করুন।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট