চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

বিভিন্ন খামারে গরু ডাকাতি প্রতিরোধে কঠোর পদক্ষেপ নিন

৬ নভেম্বর, ২০১৯ | ২:০৬ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামের বিভিন্ন ডেইরীফার্ম থেকে একের পর গরু ডাকাতির ঘটনা খুবই উদ্বেগকর। এমনিতেই খামারিরা পশুখাদ্যের দামের উল্লম্ফনসহ নানা কারণে সংকটে আছে, তার ওপর গরু ডাকাতির ঘটনাগুলো তাদের আরো শংকিত করে তুলবে, একইসঙ্গে পশুপালনে সংশ্লিষ্ট সবাকে অনাগ্রহী করে তুলবে। দেশীয় পশু উৎপাদনের ক্ষেত্রে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে, সন্দেহ নেই।

দৈনিক পূর্বকোণে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত এক প্রতিবেদন বলছে, দুগ্ধখামার এলাকা হিসাবে খ্যাত কর্ণফুলী ও পটিয়া এলাকায় কয়দিন পরপর ঘটছে গরু ডাকাতির ঘটনা। খামারের কর্মচারীদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে রীতিমতো মিনিট্রাক এনে গরু নিয়ে যাচ্ছে ডাকাতদলগুলো। উল্লেখ্য, ডাকাতির শিকার একেকটি গরুর বাজারমূল্য দুই থেকে তিন-সাড়ে তিন লাখ টাকা। মাত্র দুইদিনের ব্যবধানে পটিয়া ও কর্ণফুলীতে তিনটি খামারে নয়টি গরু নিয়ে গেছে ডাকাতদল। এ বিষয়ে থানাকে অবহিত করার পর বিভিন্ন স্থানে পুলিশী অভিযান পরিচালিত হলেও কোন খামারের গরু উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। পত্রিকায় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, এর আগে গত ২৮ অক্টোবর কর্ণফুলী থানা এলাকার একটি ফার্মে অস্ত্রের মুখে কর্মচারীদের জিম্মি করে তিনটি গরু ডাকাতি করে নিয়ে যায়। এর আগের দিন পটিয়ার ভাটিখাইনে ছয়টি গরু ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। গত আগস্ট মাসেও পটিয়ার কমলমুন্সিরহাটে একটি খামারে গরু ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এর আগে ১২ আগস্ট রাতে চক্রশালায় জলুর দিঘির পাড়ে ওয়াহিদ ডেইরী ফার্ম থেকে পাঁচটি গাভী ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এভাবে প্রায় প্রতি রাতেই গরু ডাকাতির ঘটনা ঘটছে। কিন্তু ডাকাতির শিকার হওয়া কোনো গরু উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। এতে খামারিদের শঙ্কা আরো বেড়ে গেছে।

উল্লেখ্য, বর্তমান সময়ে পশুখামারের প্রতি সাধারণ মানুষ বিশেষ করে শিক্ষিত তরুণদের আগ্রহ বেড়েছে। পশু উৎপাদনে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে। দেশ এখন পশুসম্পদে সমৃদ্ধ। এক সময় কোরবানির ঈদের চাহিদা পূরণে পাশর্^বর্তী দেশগুলো থেকে পশু আমদানি করতে হতো। এখন দেশেই উৎপাদন হচ্ছে পর্যাপ্ত পশু। ফলে বিদেশি পশুর উপর নির্ভরতা এখন একেবারেই নেই। শুধু তাই নয়, দেশের চাহিদার তুলনায় বেশি পশু উৎপাদন হওয়ায় রফতানির অমিত সম্ভাবনাও হাতছানি দিচ্ছে। বিভিন্ন দেশে পশুর মাংসের ব্যাপক চাহিদার আলোকে সুচিন্তিত পদক্ষেপ নিতে পারলে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হবে। একইসঙ্গে পশু উৎপাদনকে একটি আন্দোলনে পরিণত করা গেলে প্রচুর কর্মসংস্থানেরও সুযোগ তৈরি হবে। এতে একদিকে বেকারত্ব ঘুচবে ও দারিদ্র্যরেখা সংকুচিত হবে; অন্যদিকে দেশের পুষ্টিচিত্রেও ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে। টেকসই উন্নয়নের পথকে প্রশস্ত করতে এবং দেশকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাক্সিক্ষত সোনার বাংলায় পরিণত করতে এ খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। কিন্তু খামারি ও তার বিনিয়োগ নিরাপদ না হলে এ খাতে জন-আগ্রহ দিন দিন হ্রাস পাবে। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে জাতীয় অর্থনীতি, পুষ্টিচিত্র, জনকর্মসংস্থানসহ নানা ক্ষেত্রে। এমন অবস্থা নিশ্চয়ই কারো কাম্য নয়।

আমরা আশা করবো সবদিক বিবেচনায় নিয়ে সরকার পশুখামারগুলোর নিরাপত্তা বিধানে যথোপযুক্ত পদক্ষেপ নেবে। একইসঙ্গে পশুখাদ্য ও পথ্যসহ সবকিছুর দাম ও প্রাপ্তি সুলভ এবং যুক্তিসঙ্গত করতেও নিতে হবে সুচিন্তিত পদক্ষেপ।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট