চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

আর নয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি

১৪ অক্টোবর, ২০১৯ | ১:০৯ পূর্বাহ্ণ

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) উপাচার্য সাইফুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়টিতে সাংগঠনিক ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করার যে সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছেন তা সময়ের দাবির বিবেচনায় সঠিক, সন্দেহ নেই। সাম্প্রতিক সময়ে বিশ^বিদ্যালয়গুলোর ছাত্ররাজনীতি টেন্ডারবাজি, ভিন্নমতের ওপর পাশবিক কায়দায় নির্যাতন-নিপীড়ন এবং হানাহানি ও বর্বরতা ছাড়া ভালো কিছুই দিচ্ছে না। এখন অসুস্থ রাজনীতি গ্রাস করে ফেলেছে শিক্ষাঙ্গনকে। এসব বিবেচনায় আবরার-হত্যাকে কেন্দ্র করে দেরিতে হলেও বুয়েট কর্তৃপক্ষ ক্যাম্পাস থেকে অপরাজনীতি বিতাড়নের যে উদ্যোগ নিয়েছে তা সাধুবাদযোগ্য। তবে সাংগঠনিক ছাত্ররাজনীতি বন্ধের পাশাপাশি লেজুড়বৃত্তীয় শিক্ষক রাজনীতি বন্ধেও কঠোর পদক্ষেপ দরকার।

অস্বীকারের সুযোগ নেই যে, বুয়েটের তড়িৎ ও ইলেক্ট্রনিক প্রকৌশল (ইইই) বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের মেধাবী শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ অপরাজনীতিরই বলি হয়েছেন। যদি ক্যাম্পাসে অপরাজনীতির চর্চা না হতো, গণতন্ত্র চর্চা ও ভিন্নমত প্রকাশের অধিকার অবারিত হতো, বিশ^বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ক্যাম্পাসে সন্ত্রাসী রাজনীতির মূলোৎপাটনে আগেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতো তাহলে আবরারকে মর্মান্তিকভাবে জীবন দিতে হতো না। অমানবিক নির্যাতনের শিকার হয়ে হাজারো মেধাবী শিক্ষার্থীকে অকালে ঝরে পড়তে হতো না। যারা টর্চারসেলে পাশবিক নির্যাতনের শিকার হয়ে বিশ^বিদ্যালয় ত্যাগ করেছেন তারাও আজ স্বপ্ন পূরণের মাধ্যমে দেশ ও দশের সেবা করতে পারতেন। কিন্তু তা সম্ভব হয়নি ক্যাম্পাসে অপরাজনীতির চর্চা ও বিশ^বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দায়িত্বজ্ঞানহীনতার কারণে। এখন আবরারের মৃত্যু বিশ^বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষা ও শিক্ষার্থীবান্ধব পরিবেশের অভাবটি সবার চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিলো। সাধারণ শিক্ষার্থীরাও মাঠে নামলো কোনো ধরনের নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার না হয়ে নিরাপদে, কোনো ধরনের বাধাহীন পরিবেশে শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ নিশ্চিত করার দাবিতে। শিক্ষার্থীদের এই দাবি বাংলাদেশের সংবিধান স্বীকৃত, মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হলেও এতোদিন সে বিষয়ে নজর দেয়া হয়নি। অপরাজনীতির শিকার আবরারের মৃত্যুর পর সে বিষয়ে নজর দিলেন কর্তৃপক্ষ। শিক্ষার পরিবেশ সুনিশ্চিতকরণ ও শিক্ষার্থীদের জীবন নিরাপদ করার যে ১০টি দাবি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের কাছে পেশ করা করেছেন তার সবই তিনি মেনে নিলেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংগঠনিক ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করা ছাড়াও তাদের দাবির মধ্যে ছিলো আবরার হত্যার দ্রুত বিচার, হত্যাকারীদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার ও আবরারের পরিবারকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেয়ার কথা। এখন দাবিগুলোর বাস্তবায়ন হলে বুয়েটে শিক্ষার পরিবেশ ফিরে আসবে। যদিও বৈঠকে উপাচার্য শিক্ষার্থীদের সব দাবি মেনে নিলেও বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া নিয়ে মতভেদ আছে। তবে কথা ও কাজে বুয়েট উপাচার্যের মিল থাকলে এবং শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে সব সমস্যার সমাধানে ভিসি আন্তরিক হলে সংকট নিরসনের পথ মসৃণ হয়ে যাবে। আমরা আশা করতে চাই, শুক্রবার বুয়েটের আন্দোলনরত চারটি ব্যাচের ৩ হাজার শিক্ষার্থীর সঙ্গে বৈঠকে ভিসি সাংগঠনিক ছাত্ররাজনীতি বন্ধসহ যেসব সিদ্ধান্তের ঘোষণা দিয়েছেন দেশ ও জনস্বার্থে তা তিনি পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নে মনোযোগী হবেন।

আর ছাত্ররাজনীতির নামে সরকারি ছাত্রসংগঠনের অপতৎপরতা যেমন শিক্ষাঙ্গনকে কলুষিত করেছে, তেমনি লেজুড়ভিত্তিক অসুস্থ শিক্ষকরাজনীতিও শিক্ষার পরিবেশকে দূষিত করছে। এর বেশুমার নজির আছে। দেশের প্রায় সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েই এখন অসুস্থ শিক্ষকরাজনীতি বিদ্যমান। তারা নীতি-নৈতিকতা বিসর্জন দিয়ে দলীয় আনুগত্যের আড়ালে স্বার্থসিদ্ধির প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। স^ার্থ হাসিলের জন্য তারা অনৈতিকভাবে সরকারি ছাত্রসংগঠনের নেতা-কর্মীদের ব্যবহার করছেন। তারা জ্ঞানচর্চা ও শিক্ষাদানের পরিবর্তে রাজনীতিকেই প্রাধান্য দিচ্ছেন। এতে চরম ক্ষতির মাসুল গুণছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিক্ষার্থীরা। পরিণামে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এখন জ্ঞানচর্চা ও জ্ঞান সৃষ্টির আধার না হয়ে অসুস্থ ছাত্র ও শিক্ষকরাজনীতি চর্চার ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। এটি মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থি। টেকসই উন্নয়নেরও প্রধান প্রতিবন্ধক। তাই লেজুড়ভিত্তিক ছাত্ররাজনীতি বন্ধের পাশাপাশি শিক্ষকরাজনীতি বন্ধেও কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। বুয়েট শিক্ষক সমিতি এ ব্যাপারে ইতিবাচক পদক্ষেপ নিয়েছে। এ ব্যাপারে রাষ্ট্রীয় ও কর্তৃপক্ষীয় উদ্যোগও দরকার। আর শুধু বুয়েটে নয়, সারাদেশের কলেজ-বিশ^বিদ্যালয়সহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র ও শিক্ষকরাজনীতি বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া উচিত। এটি সময়ে দাবি। দেশস্বার্থে এ দাবি পূরণ করতে হবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট