চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

নি¤œ আয়ের মানুষের চাওয়া-পাওয়ার কথা

চলমান জীবন

আবসার হাবীব

৮ মে, ২০১৯ | ১:২১ পূর্বাহ্ণ

ছবির কথা ……
ছবিটি একটি রাস্তার উপর বসা একটি দোকানের। এই দোকান নিয়ে বিক্রেতা বছরে একবার বসে জানালো এই রমজানের বাজারে। ফুটপাতের-রাস্তার পুরনো দোকানদার তার জায়গা কিছু অংশ ভাড়া দিয়ে বাড়তি আয় করে নেয়। নতুন দোকানদারও খুশী সময় বাড়তি আয়ের কারণে। এইসব দোকানের ক্রেতা সাধারণ নি¤œ আয়ের মানুষ।
এরা এখন খুবই চাপের মধ্যে আছে পরিবারের সকলকে খুশী করা নিয়ে। ছেলের টাকা যোগাড় হয়তো মেয়ের টাকার যোগাড় হয় না। এমন অবস্থায় তারা কমমূল্যে কাপড়-চোপড় কেনার জন্য ছুটে বেড়ায় রাস্তায়-ফুটপাতে গড়ে উঠা দোকানের উপর। একটি নতুন কাপড় কিনে এইসব মানুষের ছেলে-মেয়েদের ঈদের সময় ছুটে বেড়ানোর আনন্দই আলাদা।
বাড়তি আয়ের সন্ধানে ……
রোজা আসার সাথে সাথে ফুটপাতে দোকান নিয়ে বসার প্রতিযোগিতা শুরু হয়। একটি চৌকির কিংবা টুকরির জায়গা পেলেই খুশী হয়। লাভ-ক্ষতির ভাবনা থাকলেও এ নিয়ে এরা খুব একটা চিন্তা করে না কেউ কেউ। অনেকে আবার নানান ঝক্কি-ঝামেলা করেও কিছু কাপড়-চোপড়-জুতা-প্রসাধনী দ্রব্য নিয়ে রাস্তায়-ফুটপাতে বসে পড়ে এই মৌসুমে। সে লাভের একটা স্বপ্ন দেখে। বেচা-কেনার এই মৌসুমকে ধরার জন্য অনেক বিক্রেতা ঋণ নেয়, দাদন নেয়। মৌসুমে কিছু বাড়তি আয়ের জন্য।
তবে, কিছু কিছু ঠকবাজ দোকানদার থাকলেও ফুটপাতে ভালো আর মন্দেরই একটা চমৎকার সহাবস্থান। তাই, কিছু কেনার সময় যাচাই-বাছাই করে কেনা ভালো। তারপরও, এই দোকানদারদের গরীবে বন্ধু বলে ভাবতে মন্দ লাগে না। এইসব দোকানের উপর নির্ভর করে গরীব মানুষের ঘরে ঘরে ঈদের হাওয়া লাগে। আনন্দের বন্যা ভয়ে যায়।
রাস্তা ও ফুটপাতের বাজার ….
ফুটপাতে ঈদের বাজারের চরিত্রই আলাদা। ক্রেতা সাধারণ মধ্যে কিছু মানুষ আছে অর্থনৈতিক কারণে প্রতিবছর এই ফুটপাত থেকে পরিবার পরিজনের জন্য কাপড়-চোপড় কেনেন ঈদের সময় বছরে একবার। এদের দলে এসে ভিড়ে মধ্যবিত্ত, নি¤œ মধ্যবিত্ত, নি¤œবিত্তের দল। বাসে, টেম্পু, রিক্সায় এদের ভিড়। ভিড় বাড়িয়ে তোলেন শহরের আশে-পাশের শহরতলি, গ্রামাঞ্চলের ক্রেতা সাধারণ ছেলে-মেয়ে-বউ-বাচ্চার দল নিয়ে ছুটেন মার্কেটের দোকানগুলোতে। নিজের আর্থিক অবস্থার সাথে সঙ্গতি রেখে নতুন ফ্যাশনের পোষাক, চাই একটু নতুনত্ব। সংসারে একটু সুখের হাওয়া।
এই যে দল বেঁধে ছুটে চলা মানুষের কারণেই এখন মনে হচ্ছে শহরে রমজানের বাজার জমে উঠে।
ঈদের বাজার …..
ঈদের বাজার যেখান থেকে করুন ভেবে-চিন্তে করুন। সাবধানে কিনুন এবং পছন্দসই কাপড় কিনুন। ছেলে-মেয়ে এবং পরিবারের সকলই যেন খুশী হয়। তাতে, আপনারও ভালো লাগবে। যদিও, আমরা আজকাল, বিশেষ করে বর্তমান সময়ে এসে কারো উপর বিশ্বাস স্থাপন করতে পারছি না। কষ্ট লাগে না! বিক্রেতার আচার-আচরণ এবং লোক ঠকানো কৌশল দেখে। রাস্তার বা ফুটপাতের সাথে এদের তফাৎ শুধু আচরণগত দিক থেকে মানসিকতার দিক থেকে প্রায় একই মনে হয়। তবে, সব বিক্রেতা বা দোকান মালিক এরকম মানসিকতার নয় বলে আমাদের রক্ষা।
পুনশ্চ : যাকাত ও কর্মসংস্থান …..
একেবারে দরিদ্র ছেলে-মেয়েদের জন্য আমরা হয়তো আলাদা করে ভাবতে পারি কিংবা তাদের মা-বাবার জন্যও একটি ভালো আয়ের ক্ষুদ্র ব্যবসা কিংবা কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারি। এই ক্ষেত্রে ধর্মের রীতি অনুসারে যাকাত দেয়ার যে নিয়ম রয়েছে তার মধ্যেও যদি আমার দারিদ্র-পীড়িত মানুষের আয়ের একটি পথ খুলে দিতে পারি। তাদের বেঁচে থাকার ন্যূনতম সুযোগ সৃষ্টি করতে পারি। একটি রিক্সা কিংবা অল্প পুঁজি দিয়ে আয়ের সঠিক রাস্তাটা দেখাতে পারি এবং যে ব্যক্তি দান করবেন তিনি নিয়মিত ফলো-আপ করেন, তাহলে হয়তো একটি পরিবার স্বাবলম্বী হয়ে উঠতে পারবে।
এই যাকাতের টাকা দিয়ে নিজ পাড়া বা গ্রামের, নিকট আত্মীয়ের অন্তত একটি ছেলে বা মেয়ের সারা বছরের পড়াশুনার খরচের ব্যবস্থা করতে পারেন। অনেকে করেও থাকেন।
এক সাথে বেশ কিছু টাকার অভাবে যেসব অসহায় নারী বা পুরুষের থাকার জায়গা নেই, তাদের জন্য অল্প খরচে ঘর করে দিতে পারেন।
এছাড়া বেকার যুবকদেরও কর্মসংস্থানের উদ্যোগ আমরা নিতে পারি একটি যাকাত ফা- গঠনের মাধ্যমে। টাকার অভাবে যেসব দরিদ্র মানুষ চিকিৎসা করাতে পারছে না এই যাকাতের টাকা দিয়ে তাদের চিকিৎসার সুযোগ করে দিতে পারি।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট