চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

একজন পথিকৃৎ কর্মবীর চট্টলবন্ধু মোহাম্মদ ইউসুফ চৌধুরী

লায়ন এ.কে জাহেদ চৌধুরী

৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ | ১২:৫০ পূর্বাহ্ণ

সৃষ্টি কর্তার অপূর্ব সৃষ্টি এই পৃথিবী। পৃথিবী সৃষ্টির পর থেকে কোটি কোটি মানব সন্তানের জন্ম হয়েছে এই পৃথিবীতে, আবার অবধারিত মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করে চলেও গেছেন অনেকে। যারা চলে গেছেন তাঁদের মধ্যে কিছু মানুষকে মানবকূল এখনও স্মরণ করে তাঁদের কর্মের গুণে এবং স্মরণ করে যাবে অনন্তকাল ধরে। ঠিক তেমনই একজন স্মরণযোগ্য মানুষ মরহুম ইউসুফ চৌধুরী। একজন সমাজকর্মী ও লেখক হিসাবে মাঝে মধ্যে পূর্বকোণ অফিসে আমার যাওয়া হত। সেই সুবাদে খুব কাছ থেকে এই গুণী মানুষটিকে আমার দেখার ও তাঁর সাথে আলাপচারিতার সৌভাগ্য হয়েছিল। বয়োবৃদ্ধ মানুষটিকে দেখে মনে হতো মনের দিক দিয়ে তিনি খুবই সবল ও তারুণ্যদীপ্ত ছিল তার পদচারণা। আধুনিক চট্টগ্রামের রুপায়ণে যে সকল ব্যক্তি নিজেদেরকে নিবেদিত করেছিলেন আলহাজ্ব মোহাম্মদ ইউসুফ চৌধুরী ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম ও প্রথম সারির একজন।

চট্টগ্রামবাসী দীর্ঘদিন ধরে একটি আধুনিক ও মানসম্মত পত্রিকার জন্য অপেক্ষায় ছিলেন। ১৯৮৬ সালে দৈনিক পূর্বকোণ সৃষ্টির মাধ্যমে মরহুম ইউসুফ চৌধুরী চট্টগ্রামবাসীর সেই আকাক্সক্ষা পূরণ করেছেন। শুধু তাই নয়, দৈনিক পূর্বকোণ একটি আঞ্চলিক পত্রিকা হলেও পত্রিকাটি জাতীয় পত্রিকার চাহিদা পূরণে সক্ষম হয়েছে এবং বর্তমানেও তা অব্যাহত রেখেছে। দৈনিক পূর্বকোণ ইউসুফ চৌধুরীর একটি অমূল্য সৃষ্টি। অবহেলিত চট্টগ্রামের উন্নয়নের জন্য তিনি নিজেকে নিবেদিত করেছিলেন। বাংলাদেশের অর্থনীতির সিংহভাগ চট্টগ্রাম যোগান দিলেও সমকালীন সরকারের আমলে চট্টগ্রামের প্রতি বিমাতাসূলভ আচরণ তাঁকে ব্যথিত করেছিল। সেইজন্য তিনি বৃহত্তর চট্টগ্রাম উন্নয়ন সংগ্রাম কমিটির দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন। তিনি বৃহত্তর চট্টগ্রাম উন্নয়ন সংগ্রাম কমিটির ব্যানারে মাঠে-ময়দানে যেমন আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন তেমনি দৈনিক পূর্বকোণ পত্রিকায় চট্টগ্রামের বিভিন্ন সমস্যা চিত্রিত করে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণের মাধ্যমে সমস্যাগুলো সমাধানে ভূমিকা রেখেছিলেন। তিনি ছিলেন আপাদমস্তক একজন চট্টগ্রামপ্রেমী। তাঁর মতো নিখাঁদ পুরোধা মানুষের অভাব এখন চট্টগ্রামবাসী তীব্রভাবে অনুভব করছে। নিজ কর্মগুণে ইউসুফ চৌধুরী চট্টলবন্ধু হিসাবে পরিচিতি লাভ করেছিলেন। ১৯৮৯-৯০ সালে দেশের ডেইরী শিল্পের প্রসার ঘটাতে চট্টগ্রামে একটি ভেটেরিনারী কলেজের প্রয়োজন অনুভব করেন তিনি। তাঁর অক্লান্ত ও নিরলস প্রচেষ্টায় এবং তৎকালীন পশুসম্পদমন্ত্রী আব্দুল্লাহ আল নোমানের আন্তরিক সহযোগিতায় ১৯৯৫-১৯৯৬ সালে চট্টগ্রামে ভেটেরিনারী কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। তথাপী মরহুম ইউসুফ চৌধুরী ও তাঁর সহযোগীরা এতটুকুতে থেমে না থেকে কলেজটিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যান।

বিভিন্ন সময়ে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে সফল যোগাযোগের মাধ্যমে তিনি ও তার সহযোদ্ধারা কলেজটিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত করতে সফলকাম হন। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. নিতীশ চন্দ্র দেবনাথ বলেছেন, ‘চট্টগ্রাম ভেটেরিনারী কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত করতে মরহুম ইউসুফ চৌধুরী ও তার সহযোগীরা বিশ্ববিদ্যালয় বাস্তবায়ন পরিষদ গঠন করে সরকারের শুভদৃষ্টি অর্জনে সক্ষম হন। যার ফলশ্রুতিতে বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা লাভ করে এবং প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে চট্টগ্রাম শুধু নয় বাংলাদেশের একটি সম্পদে পরিণত হয়েছে।’ চট্টগ্রাম ও সারাদেশের ডেইরি ও পোল্ট্রি শিল্পের প্রসারেও মরহুম ইউসুফ চৌধুরীর অবদান চির স্মরণীয় হয়ে থাকবে। তিনি ডেইরি ও পোল্ট্রি শিল্পের নেতৃত্বের আসনে বসে দেশে স্বেতবিপ্লবকে (দুগ্ধ ও ডিম উৎপাদন) তরান্বিত করেছেন।

বহুধা গুণের অধিকারী মরহুম ইউসুফ চৌধুরীর মহাপ্রয়াণে চট্টগ্রাম তথা বাংলাদেশ একজন গুণী ও সৃষ্টিশীল মানুষকে হারিয়েছে। তরুণ প্রজন্ম তার কর্মকে পাথেয় হিসাবে গ্রহণ করলে দেশ ও জাতি অনেক উপকৃত হবে। মরহুম ইউসুফ চৌধুরী বিরল প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে নশ্বর পৃথিবী ত্যাগ করলেও তাঁর সৃষ্টি ও কর্ম তাঁকে যুগ যুগ ধরে বাঁচিয়ে রাখবে। মরহুম চৌধুরীকে মহান আল্লাহ জান্নাতবাসী করুন। আমীন।

লেখক : কলামিস্ট, রাজনৈতিক বিশ্লেষক

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট