চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

ছাত্রীনিবাসে অমানবিকতা

৩০ আগস্ট, ২০১৯ | ১:০৩ পূর্বাহ্ণ

আমাদের সমাজ দেশ সবকিছুই এখন উন্নত। এটা আমাদের মানতেই হবে। আগেকার সময় ছেলেরাও ভালো করে অষ্টম শ্রেনী পর্যন্ত পড়াশুনা করতো না। আমার বাবাদের সময়ও শতকরা ৩০ শতাংশ মানুষ ম্যাট্রিক পর্যন্ত পড়াশুনা করতো। আর মেয়েরাতো সেখানে ৫ম শ্রেনী পর্যন্ত পড়লে অনেক বেশী।

কিন্তু বর্তমান সময় সেই অন্ধকার ধাঁধাঁ থেকে বের করে এনেছে মানুষকে। এখন পড়াশুনা করে নিজের উপর নিজে নির্ভরশীল হতে চায় সকলে। ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েরাও এখন অনেক এগিয়ে। সবস্থানেই মেয়েরা সমান পারদর্শী। তাই বাবা-মায়েরাও এখন ছেলেদের সমান গুরুত্ব মেয়েদের দিচ্ছে। পড়াশুনার শেষ স্তর পর্যন্ত এখন মেয়েরা পৌঁছে যাচ্ছে সাফল্যের সাথে।
কিন্তু এসব সাফল্যের পেছনে থাকে অনেক কষ্ট, অমানবিকতা এবং নির্যাতন। হয়তো মেয়ে বলেই এমনটা সম্ভব। যাই হোক মূল কথায় আসি। উচ্চশিক্ষার জন্য একটি মেয়ে পরিবার-স্বজন রেখে অচেনা শহরে এসে স্থান খুঁজে নেয় হোস্টেলে। আমাদের শহরে এখন এমন অনেক ছাত্রী হোস্টেল রয়েছে। পরিবারের সদস্যরাও এখন মেয়েদের পড়াশুনা করার জন্য হোস্টেলে রেখে নিরাপদে বাড়ি যায়। কারণ এখানে তারা ভালো থাকবে। তাই বেশিরভাগ মেয়েরাই হোস্টেলে থাকে। শুধু মাত্র পড়াশুনার জন্য।

যদি ছেলে হতো তাহলেও বাবা-মা এতো চিন্তা করতো না, কিন্তু মেয়ে বলেই এতো চিন্তা। কারণ চারিদিকে যেভাবে নরপশুরা ওঁৎ পেতে রয়েছে তাতে সব বাবা-মা’রাই চিন্তা করবেন। যেখানে ২ বছরের শিশু রেহাই পাচ্ছে না সেখানে আর কিইবা বলবো। তাই বলে তো পড়াশুনা থেমে থাকবে না! জীবন যুদ্ধে পড়াশুনাটাও জরুরি। এজন্যই সব ছেড়ে অচেনা একস্থানে এসে নিজেকে মানিয়ে নিতে হয় এসব মেয়েদের। ছেলেদের বেলায়ও একই। তবে আমাদের সমাজে একটা ছেলে যা করে একটা মেয়ে তা করতে পারে না। যেমন আমার হোস্টেলের খাবার ভালো লাগলো না, আমি হোটেলে গিয়ে খেয়ে আসলাম। আমার ক্ষুধা লাগলো, আমি নাস্তা করে আসলাম। আমার চা খেতে ইচ্ছে করছে আমি চা খেয়ে এলাম। কিন্তু একটা মেয়ে হলে? আমাদের এ সমাজে সেটা অনেক কিছু হয়ে যাবে। একটা মেয়ে হোটেলে বসে চা খেলে পুরো হোটেলের মানুষ তার দিকে তাকিয়ে থাকে। এবার আসি মূল বিষয়ে। যদিও বর্তমান প্রেক্ষাপটে পুরো পৃথিবীটাই অনিরাপদ। তবুও এসব ছাত্রীরা যখন হোস্টেলে থাকে তখন বাবা-মা’রাও একটু নিশ্চিন্তে থাকেন। কিন্তু এসব নিরাপদ হোস্টেলেও যখন চলে অন্যায় আর নির্যাতনের মতো কা-, তখন বাকশক্তিটাও হারিয়ে ফেলি। একদিন আগের বাসি নষ্ট ছোলা দিয়ে পরেরদিন সকালেও যখন নাস্তা করতে হয় হোস্টেলের ছাত্রীদের, তখন বলতে ইচ্ছে করে হে মানবতা, তুমি কি সত্যিই হারিয়ে গেছ?। হ্যাঁ এমনও অমানবিক কাজ করা হয় এখনকার হোস্টেলগুলোতে। চট্টগ্রাম নগরীর একটি ছাত্রীনিবাসের বিরুদ্ধে সম্প্রতি এমন অভিযোগ উঠে। অথচ, এসব ছাত্রীদের অভিভাকরা প্রতি মাসের শুরুতেই টাকা করে দিয়ে যায়। বিনিময়ে ২ বেলা ভাত, এক বেলা নাস্তা। আসলে এখন ছাত্রী নিবাস কিংবা ছাত্র নিবাস বলতে কিছু নেই। সবকিছুই এখন মানুষের টাকা মেরে খাওয়ার ফন্দি।

এতে স্পষ্ট প্রমাণ হয় এখন মনুষ্যত্ব বলতে কিছু নেই। মানবতা তো দূরের বিষয়। আমরা এখন মানুষকে তার ন্যায্য পাওনাটাই দিই না। তবুও বাধ্য হয়ে থাকতে হচ্ছে এসব ছাত্রীদের। কারণ পড়াশুনা আর কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে যাতায়ত সুবিধা আছে বলে। অনেক ছাত্রী খেয়ে না খেয়ে একমাত্র স্বপ্ন পূরণের জন্য থেকে যাচ্ছে এমন নির্মম পরিস্থিতিতেও। এ বিষয়ে প্রশাসনের দৃষ্টি দেওয়া উচিৎ। সমাজের উচ্চ মহলের এবং অভিভাকদের সজাগ হতে হবে। নতুবা এভাবেই অপরাধগুলো বড় হতে থাকবে। তাই সময় থাকতে এসব অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে হবে।

আজহার মাহমুদ
চট্টগ্রাম।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট