চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

ফুটপাত দখল ও পথচারীর বিড়ম্বনা

২৮ আগস্ট, ২০১৯ | ১২:৪৫ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম মহানগরীর ফুটপাতগুলো এখনো ‘দখলমুক্ত’ হয় নি। এখনো কিছু সন্ত্রাসী-মাস্তান ফুটপাত দখলে রেখে তা অর্থ উপার্জনের উৎস হিসেবে ব্যবহার করে যাচ্ছে। তারা ‘ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ী’ হিসেবে পরিচিতদের একাংশকে ফুটপাত ভাড়া দিয়ে প্রতি মাসেই হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। মাসোহারার বিনিময়ে একশ্রেণির পুলিশও তাদের অবৈধ কাজে সমর্থন যুগিয়ে যাচ্ছে। তবে এই তিন শ্রেণির মানুষ অবৈধভাবে ফুটপাতের বিনিময়ে ‘আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ’ হয়ে গেলেও ফুটপাতের আসল মালিক সাধারন জনগণ চরম ক্ষতির শিকার হচ্ছে।

ফুটপাত দিয়ে চলাচল বঞ্চিত হয়ে রাজপথ দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে সময় নষ্ট, নানামুখী দুর্ভোগ তো আছেই, পথচারীদের নানা দুর্ঘটনারও শিকার হতে হয়। এক্ষেত্রে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) এবং চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (চউক) ভূমিকাও পথচারীবান্ধব নয়। ফুটপাতকে স্বার্থান্বেষীদের দখল থেকে মুক্ত করে সেখানে পথচারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় এই দুই কর্তৃপক্ষের ভূমিকা খুবই ন্যাক্কারজনক। এই দুই সংস্থার নির্লিপ্ততা দেখে মনে হয় তারাও ফুটপাত দখলকারীদের স্বার্থ রক্ষায় ব্যস্ত।
‘ফুটপাত’ শব্দটি দ্বারাই বুঝা যায় পথটি জনগণের জন্যেই। পায়ে হেঁটে চলাচলের জন্যে। ফুটপাত ব্যবহার করবে শুধু পথচারীই। পথচারীদের চলার পথে বিঘœ সৃষ্টি করা আইনত দ-নীয় অপরাধ। যে জন্যে হাইওয়ে, সাবওয়ে এবং অলি-গলির রাস্তাসমূহের দু’পাশে ফুটপাত রাখা হয়। কিন্তু দীর্ঘদিন থেকেই একশ্রেণির অর্থলোলুপ চক্রের দখলে চলে যাচ্ছে চট্টগ্রাম মহানগরীর ফুটপাতগুলো। তারা ফুটপাতের পাশাপাশি সুযোগ বুঝে রাজপথও দখলে নিতে দ্বিধা করে না। চউক, সওজ বা চসিক সময়ে সময়ে অভিযান চালিয়ে দখল হয়ে যাওয়া রাজপথের অংশবিশেষ উদ্ধার করলেও একশ্রেণির দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজসে তা ফের বেহাত হয়ে যায়। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোর খামখেয়ালির কারণেই এমনটি হয়। আর এর জন্যে দুর্দশা ভোগ করতে হয় নাগরিকসাধারণকে।

ফুটপাত ও রাস্তা অবৈধ দখলে নিলে কী দ- হবে তা আমাদের অনেকেরই জানা নেই। এমনকি এ বিষয়ে কোনো আইন কারো ক্ষেত্রে কঠোরভাবে প্রয়োগ হওয়ার দৃষ্টান্ত নেই। আর আইনের কঠোর প্রয়োগের রেওয়াজ না থাকায় দোকানদার হকার কিংবা নির্মাণকারীরাও ফুটপাত এবং রাস্তা দখলের সাহস পাচ্ছে। অভিযোগ আছে, একশ্রেণির পুলিশ ফুটপাত এবং রাস্তা দখলকারীদের কাছ থেকে নিয়মিত চাঁদা নিয়ে থাকে। যার কারণে কোনো সময় ফুটপাত দখলমুক্ত করা হলেও কয়েকদিন পর ফের তা বেদখল হয়ে যায়। ফুটপাতে শুধু দোকান নয়, বাজার পর্যন্ত বসানো হয়েছে। খোদ সিটি করপোরেশনের পাশেই আন্দরকিল্লায় সব ফুটপাত বেদখল হয়ে মূল সড়ক পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। নগরীর আইস ফ্যাক্টরি রোডসহ নানাস্থানে ফুটপাত ছাড়িয়ে মূল রাস্তায় পর্যন্ত বাজার বসে নিয়মিত। এ অবস্থায় পথচারীরা চলাচলের জন্যে নির্ধারিত ফুটপাত ছেড়ে বাধ্য হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়েই যানবাহন চলাচলের রাস্তা ব্যবহার করছেন। এতে শুধু যানজটই সৃষ্টি হচ্ছে না, পথচারীরাও দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন। দুর্ঘটনার শিকার হয়ে অনেকের জীবনও সাঙ্গ হয়ে যাচ্ছে নির্মমভাবে। নগরীতে যানজটের অন্যতম প্রধান কারণও ফুটপাত ও রাস্তা বেদখল হওয়া। পরিণামে প্রয়োজনের অতিরিক্ত পেট্রোল পুড়ছে, চালকদের শ্রম বৃদ্ধি পাচ্ছে, যাত্রীসাধারণের গন্তব্যে পৌঁছতে দেরী হচ্ছে, আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে পরিবহনমালিকদের। সাকুল্যে চরম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে জাতীয় অর্থনীতি।

আমরা মনে করি, ফুটপাত দখলমুক্ত করতে এখনই অভিযান পরিচালনা করা উচিত। এ ব্যাপারে সময় ক্ষেপণের সুযোগ নেই। ফুটপাতে পথচারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত না করে উন্নয়নকে টেকসই করা কঠিন হবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট