চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪

নীতি-নৈতিকতার আকাল

২৭ আগস্ট, ২০১৯ | ১:৫০ পূর্বাহ্ণ

একজন স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে যখন দেশের সর্বপ্রান্তের খবর জানতে গণমাধ্যমগুলোতে চোখ রাখি তখনই চারিদিক ধর্ষণ, খুন, দুর্নীতি, অন্যায়, অত্যাচারের খবরই যেন গণমাধ্যমগুলোর প্রধান খবর। পত্রিকার পাতা খুললেই যেন সব অনিয়ম অবিচারের খবর। এই যেন যেমন খুশি তেমন চল দেশের চিত্র। আমাদের বর্তমান সমাজের চিত্রটা হচ্ছে রক্ষক ভক্ষকের ভূমিকায়। কেননা, সমাজের ঘুষখোরদের লাগাম টানতে আছে দুর্নীতি দমন কমিশন। কিন্তু সম্প্রতি আমরা দেখেছি আলোচিত এক পুলিশ কর্মকর্তার দুর্নীতি তদন্তের ভার যাকে দেওয়া হয়েছে উল্টো তিনি সেই পুলিশ কর্মকর্তার দুর্নীতি ধামাচাপা দিতে অফার গ্রহণ করেন মোটা অংকের টাকার। পরবর্তীতে গণমাধ্যমের সাহসী কিছু সাংবাদিকদের প্রতিবেদনে ওঠে আসে তাদের দুর্নীতির কাহিনী। তাতেই তাদের ঠাঁই হয় কারাগারে। অন্যদিকে গত কয়েকদিন আগে গণমাধ্যমের শিরোনাম হয় দেশের সর্বোচ্চ বিচার ব্যবস্থার বিচারকার্যে নিয়োজিত তিন বিচারকর্তার দুর্নীতির অভিযোগে বিচার বিভাগের কার্যক্রম থেকে তাদের সরিয়ে নেওয়ার খবর। তাতেই বিচার বিভাগ থেকে আস্থা হারাচ্ছে ন্যায়বিচার প্রত্যাশীরা।

বিগত দুয়েকদিনের সবচাইতে আলোচিত ঘটনা জামালপুর জেলা প্রশাসকের সাথে তার একই অফিসের নারী কর্মকর্তার সাথে প্রকাশিত নির্লজ্জ বেহায়াপনার ভিডিও চিত্র। যেটাই আলোচনার খোরাক হয়েছে গ্রামের চায়ের দোকান থেকে দেশের সর্বোচ্চ প্রশাসন পর্যন্ত। যদিও তিনি বলছেন তার প্রতি এটা ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। এই ভিডিও চিত্র প্রকাশের পর বেরিয়ে এসেছে ডিসি সাহেবের নারী কেলেংকারির অনেক অজানা খবর। আর তাতেই তাকে ওএসডি করতে বাধ্য হয়েছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। তাতেই দেশবাসী প্রশ্ন তুলেছে এখানেই কি সমাপ্তি তার প্রাপ্ত শাস্তির। নাকি আরও কঠিন বিচার প্রাপ্য ছিল তার। অন্যদিকে সম্প্রতি দেশের বেশির ভাগ পত্রিকার খবরের শিরোনাম হয়েছে চট্টগ্রামের সাবেক ও বর্তমানে কর্মরত সাত পুলিশ কর্মকর্তার অবৈধভাবে অঢেল সম্পত্তি তৈরির কথা। যাতে তারা তাদের স্ত্রীসহ পরিবারের সদস্যদের নামে বেনামে গড়ে তুলেছেন অবৈধ সম্পত্তি। পত্রিকায় প্রকাশিত সাতজনেই কি শুধুমাত্র অবৈধ টাকা অর্জন করেছে নাকি সংখ্যাটি আরো অধিক? সেখানেই তো শেষ নয় বরং আমরা দেখতে পাইনা ধর্মীয় গুরুর দ্বারা ধর্ষণ, কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কর্তৃক ছাত্রীর ইজ্জত হরণ ও ধর্ষণ। আর মাদ্রাসার শিক্ষকের যৌন লালসার শিকার হচ্ছে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। ঘটছে ঘৃণিত বলাৎকারের মত ঘটনা। এই ঘটনা গুলো নিত্যদিনের। তাই সাধারণ মানুষের জিজ্ঞাসা আমাদের নিরাপত্তাটা কোথায়? আর এসব ঘটনার মূল কারণটা কি, তা কি আমরা একবারো খতিয়ে দেখার চেষ্টা করেছি। নাকি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে সমালোচনায় ব্যস্ত থেকেছি। আর তাতেই আমরা নিজেদের কে প্রতিবাদী মনে করেছি। আসলেই তাতে কি সমাজে শান্তি ফিরেছে নাকি আরো বেশি অবনতি ঘটছে। তাতেই অশান্তির আগুনে পুড়ে যাচ্ছে যুবসমাজ ও দেশ। আর সকল অন্যায় অনিয়মের বিরুদ্ধে আমাদের কণ্ঠকে করতে হবে সোচ্চার। সেই সাথে জোর দিতে হবে আমাদের ধর্মীয়, পারিবারিক, সামাজিক শিক্ষার প্রতি। আর তাতেই অশান্তিময় মেঘের ছায়াকে বিদায় দিয়ে হেসে উঠবে শান্তির সূর্যটা।

মাসুম খান
সংবাদকর্মী, চট্টগ্রাম।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট