চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

সরকার নকল-ভেজাল ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করুন কঠোরভাবে

৫ মে, ২০১৯ | ১:১২ পূর্বাহ্ণ

প্রতিবারের ন্যায় এবারও মাহে রমজানের আগেভাগেই মুনাফা লুটেরার দল তাদের অপতৎপরতা শুরু করে দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর আহবানকে উপেক্ষা করেই তারা অকারণে খেজুর, ছোলা, ডাল, চিনি, পেঁয়াজ-রসুনসহ বিভিন্ন দ্রব্যের দাম বাড়িয়ে মুনাফা লুটছে। বাজার নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে অবৈধ মওজুদ, ভেজাল মেশানোসহ নানা অপকর্মেও যুক্ত হয়ে পড়েছে তারা। এ অবস্থায় বাড়ছে সাধারণ মানুষের আতংক, উদ্বেগ, উৎকন্ঠা। তবে আশার কথা হচ্ছে, রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে ১৫টি উদ্যোগ নিয়েছে সরকারে। সন্দেহ নেই, এসব উদ্যোগ বাস্তবায়নের মাধ্যমে মুনাফাশিকারী চক্রের অপতৎপরতা বন্ধ করে দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখতে পারলে জনমনে স্বস্থি বিরাজ করবে।
মুসলিমবিশ্বের বিভিন্ন দেশে পবিত্র রমজান মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম কমিয়ে দেয়া হয়, যাতে দরিদ্র মানুষগুলো নির্বিঘেœ সিয়াম সাধনা করতে পারেন এবং পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করতে পারেন। সরকার এবং ব্যবসায়ীদের এই মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির ফলে রমজানে ধনী ও দরিদ্র মানুষের মধ্যে ক্রয়-বৈষম্য যেমন কমে যায়, তেমনি পুরো রমজানেই দেশে বিরাজ করে এক ভ্রাতৃত্বপূর্ণ উৎসবমুখর পরিবেশ। যা শান্তি ও সাম্যপূর্ণ সমাজ বিনির্মাণের সহায়ক এবং যা জাতীয় অগ্রগতিকে করে বেগবান। এবারও আসন্ন রমজান উপলক্ষে নিত্যপ্রয়োজনীয় ৫০০টি পণ্যের দাম কমিয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতার। দেশটির বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রণালয় এমন নির্দেশনা কার্যকর করেছে দিনকয়েক আগে। এসব পণ্যের দাম রমজানের শেষ পর্যন্ত কম থাকবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে বাংলাদেশে এমন উদ্যোগ দেখা যায় না। ব্যবসায়ীরা সারাবছরই ভেজাল মিশিয়ে কিংবা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে ক্রেতাসাধারণের পকেট কাটেন। তারপরও রোজার সময় তাদের অপতৎপরতা থামে না। বরং বেড়ে যায় কয়েকগুণ। তাদের অতি মুনাফালোভী মনোবৃত্তির কারণে রমজানে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের সীমা থাকে না। পরিণতিতে রমজান মাস সাধারণ মানুষের জীবনে আশীর্বাদ না হয়ে যেনো ‘মরার উপর খাড়ার ঘা’ হয়েই দেখা দেয়।
জানা গেছে, সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মুখ্যসচিব নজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত একটি জরুরী বৈঠকে রমজানে দ্রব্যমূল্য স্বাভাবিক রাখতে ১৫টি উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বৈঠকে বাণিজ্যমন্ত্রণালয়, খাদ্যমন্ত্রণালয়, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, স্থানীয়সরকার মন্ত্রণালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, সড়ক ও পরিবহন মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বিদ্যুত মন্ত্রণালয়, ঢাকা সিটি কর্পোরেশন, টিসিবি, ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদফতর ও নিরাপদ খাদ্য অধিদফতরের সংশিষ্ট কর্মকর্তারা অংশগ্রহণ করেন। উদ্যোগগুলো হলো- পর্যাপ্ত আমদানি ও মজুদের বিষয়টি নিশ্চিত করা, ম্যানুপুলেটের সুযোগ বন্ধ করে বাজারে চাহিদামতো পণ্যসরবরাহ নিশ্চিত করা, বাজারগুলোতে গোয়েন্দাসংস্থা, র‌্যাব ও পুলিশের তদারকিকার্যক্রম বাড়ানো, ফেরি পারাপারে পণ্যবাহী ট্রাক অগ্রাধিকার দেয়া, মহাসড়কে চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করে পণ্যবাহী ট্রাক নিরাপদে বাজার পর্যন্ত নিয়ে আসা, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ সরকারের সংশিষ্ট দফতর ও অধিদফতরের নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা, ট্রাকসেলে টিসিবির বিক্রি কার্যক্রম অব্যাহত রাখা ও পণ্যের পরিমাণ বাড়ানো, ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদফতরের কার্যক্রম বাড়ানো, ভেজালরোধে নিরাপদ খাদ্য অধিদফতরের উদ্যোগ গ্রহণ, বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশন ভর্তুকি মূল্যে বাজারে চিনি বিক্রি করবে, পণ্যসরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে রাস্তায় ট্রাফিকজট কমানো, ভোগ্যপণ্যের উৎপাদন প্রক্রিয়া স্বাভাবিক রাখতে বিদ্যুত সরবরাহ নিশ্চিত করা, এক মাস রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি বন্ধ, স্থলবন্দরগুলোতে পেঁয়াজ, রসুনসহ মসলা জাতীয় পণ্যের দ্রুত ছাড়করণ, বাজারে সবজির সরবরাহ বাড়ানো এবং প্রয়োজনীয় নিত্যপণ্যের মূল্য তালিকা টানানো প্রভৃতি। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে জরুরী ভিত্তিতে উদ্যোগগুলো বাস্তবায়নের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
পণ্যমূল্য সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে রাখার এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। তবে কাক্সিক্ষত ফল নির্ভর করছে সুচারু বাস্তবায়নের ওপর। অতীতের তিক্ত অভিজ্ঞতা হচ্ছে, মূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকার নানাবিধ উদ্যোগ নিয়ে সুচারু বাস্তবায়নের অভাবে কাক্সিক্ষত ফল আসে না। আমরা আশা করতে চাই, এবার তার ব্যতিক্রম হবে। কোনো ধরনের কৃপণতা দৃষ্টিগোচর হবে না গৃহীত উদ্যোগগুলোর কঠোর বাস্তবায়নে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট