চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

লাল-সবুজের দেশ : সমাজ ও লোকমানসের চিত্র

সৈয়দা তানজিমা সুলতানা

৩ মে, ২০১৯ | ১২:৫৫ পূর্বাহ্ণ

“লাল সবুজের দেশ” ড. এস.এম এবাদ উল্লাহ’র চতুর্থ প্রবদ্ধ গ্রন্থ। গ্রন্থটির ভূমিকা লিখেছেন দেশবরেণ্য শিক্ষাবিদ চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ের সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর মোহাম্মদ আলী। গ্রন্থটিতে বস্তুনিষ্ট, জীবন ঘনিষ্ট এবং গবেষণাধর্মী ৩৩টি প্রবন্ধ রয়েছে, যেগুলো স্ব-মহিমায় ভাস্বর এবং তথ্য উপাত্তে ভরপুর।
পেশাগতভাবে ড. এস.এম.এবাদ উল্লাহ একজন স্বনামধন্য আইনজীবী হলেও সমাজের বিভিন্ন অঙ্গনে তিনি বিচরণ করেন। একজন লেখক, গবেষক এবং মানবাধিকারকর্মী হিসেবেও তিনি সুপরিচিত। এই বিষয়ে প্রফেসর মোহাম্মদ আলী লিখেছেন, “ড. এস. এম এবাদউল্লাহ একজন সফল আইনজীবী, সমাজ বিশ্লেষক এবং মানবাধিকারকর্মী। আইনের ঙ্গনে বিচরণ করা লোকদের মধ্যে লেখকের সংখ্যা অ তি নগণ্য। এই ক্ষেত্রে ড. এস এম এবাদ উল্লাহ ব্যতিক্রম। লেখালেখি তাঁর পেশা না হলেও নেশায় পরিণত হয়েছে। সেইজন্য “সময়ের কথা”, “দিন বদলের কথা” এবং “সোনালী দিনের স্বপ্ন” নামে ইতোপূর্বে তাঁর ৩(তিন) টি প্রবন্ধ গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। “লাল সবুজের দেশ” তাঁর চতুর্থ গ্রন্থ।
গ্রন্থটির নামকরণ প্রসঙ্গে লেখক বলেছেন, “লাল সবুজের দেশ মানে বাংলাদেশ, আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি। এদেশ ছায়াঘন শ্যাম ও নয়নাভিরাম। পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, সুরমা কর্ণফুলিসহ শত শত নদী-বিধৌত সবুজ চাদরে ঘেরা এদেশে জন্মগ্রহণ করে আমরা সবাই ধন্য। যুগ যুগ ধরে এদেশের মাটি বিদেশিদের দখলে ছিল। কখনো সেন বংশ, কখনো পাল বংশ, কখনো মোগল, কখনো ব্রিটিশ, সর্বশেষ পাকিস্তানি শাসকগণ এদেশ শাসন ও শোষণ করেছেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ ৯ মাসব্যাপী প্রাণপণ যুদ্ধ করে এদেশের মাটি দখলদার মুক্ত করেন। লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে এদেশ স্বাধীন হয়েছে। বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের ফসল এবং বীর শহীদদের নজরানা। এদেশের মাঠ-ঘাট, নদী-নালা, পথ-প্রান্তর শহীদদের রক্তে রঞ্জিত। যা আমাদের জাতীয় পতাকায় চিরদিনের জন্য শোভা পাচ্ছে। তাই লাল সবুজ পতাকার দেশ, বাংলাদেশ।”
লেখকের উল্লেখিত বক্তব্য থেকেই গ্রন্থটি নামকরণের সার্থকতা এবং গ্রন্থটিতে সন্নিবেশিত প্রবন্ধসমূহের বিষয়বস্তু প্রতিভাত হয়। লেখক তাঁর প্রবন্ধে বাংলাদেশকে অপার সম্ভাবনার দেশ বলে চিহ্নিত করেছেন, কামনা করেছেন এদেশ শিক্ষায় আলোকিত হোক। একুশের চেতনা ও বাংলা ভাষার ক্রমবিকাশের কথা বলেছেন। সড়ক দুর্ঘটনায় করুণ মৃত্যুর চিত্র তুলে ধরেছেন। নারী শিশু নির্যাতন ও ধর্ষণের প্রতিবাদ করেছেন। ভেজালের আগ্রাসান, রোহিঙ্গা নির্যাতন, বাল্যবিবাহ নিরোধ, শিশু গৃহকর্মীর জীবন এবং আইয়ুব শাহীর পতনের করুণ চিত্র তুলে ধরেছেন।
এছাড়াও গ্রন্থটিতে রয়েছে মানবিক মূল্যবোধের বিকাশ সংক্রান্ত কয়েকটি প্রবন্ধ, যা সকল শ্রেণির মানুষের বিবেককে নাড়া দেবে। প্রাসঙ্গিকভাবে এসেছে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিকথা। মুক্তিযুদ্ধের একজন মহান সংগঠক মরহুম জহুর আহম্মদ চৌধুরীর জীবন কথাও। লেখকের কলমের তুলি থেকে ধর্ম-কর্মও বাদযায় নি। পবিত্র হজ¦ প্রবন্ধে লেখক হজে¦র সকল নিয়মকানুনসহ হজ¦ পালনে নিজ অভিজ্ঞতার বিশদ বিবরণ তুলে ধরেছেন, যা হজ¦ পালনকারী ও হজে¦ যেতে আগ্রহীদের হৃদয় স্পর্শ করবে।
এই গ্রন্থের বিশেষ আকর্ষণীয় দিক হলো, বায়ুতশ শরফের মহান পীর হযরত মাওলানা আবদুল জব্বার (রাহ.) এর জীবনী এবং প্রফেসর ড. সামশুল হক চৌধুরী’র আল-আক্সা মসজিদ ভ্রমণের কাহিনী। এই লেখাগুলো ধর্মপ্রাণ পাঠকদের হৃদয়ে বিশেষ স্থান পাবে।
ড. এস.এম এবাদ উল্লাহ’র লেখনীতে একটি দরদী মনের পরিচয় পাওয়া যায়। সহজ, সরল ও সাবলীল ভাষায় লিখিত তাঁর প্রবন্ধগুলো প্রত্যেক শ্রেণী ও পেশার পাঠকদের আকৃষ্ট করবে। পাঠকগণ তাঁদের মনের কথা বইয়ের পাতায় খুঁজে পাবেন।
আইন ও সাহিত্য দু’টি ভিন্নধর্মী বিষয় হলেও আইনজীবীদের ইতিহাস ও সাহিত্য চর্চা নিয়ে করা প্রয়োজন। কারণ, আইন মানুষের জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করে, সাহিত্য মানুষের মনে জীবনীশক্তি সঞ্চার করে।
এই প্রসঙ্গে ডধষঃবৎ ঝপড়ঃঃ বলেছেন, “অ খধুিবৎ রিঃযড়ঁঃ যরংঃড়ৎু ধহফ ষরঃবৎধঃঁৎব রং ধ সবপযধহরপ, ধ সবৎব ড়িৎশরহম সধংড়হ.”
কাজেই ড .এস. এম এবাদ উল্লাহ শুধু আইনাঙ্গনের একজন ব্যক্তি নন, সাহিত্যাঙ্গনেরও একজন বিশিষ্ট অনুশীলনবিদ। আইনের মানুষ সাহিত্যচর্চা করলে তাতে একটি বিশেষ চমক থাকে। “লাল সবুজের দেশ” গ্রন্থে পাঠকগণ সেই চমক খুঁজে পাবেন। আমি লেখকের সাফল্য এবং গ্রন্থটির ব্যাপক প্রচার কামনা করছি।

লেখক : প্রকৌশলী ও সাবেক শিক্ষক ইউআইটিএস।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট