চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

আষাঢ়েও দারুণ দাবদাহে দগ্ধ জনজীবন

১ জুলাই, ২০১৯ | ১২:৩৫ পূর্বাহ্ণ

ঋতুক্রম অনুযায়ী এখন চলছে বৃষ্টিরকাল। কিন্তু বৃষ্টির দেখা নেই। উল্টো প্রচ- গরমে অতিষ্ঠ হয়ে উঠছে জনজীবন। দেশজুড়ে তীব্র দাবদাহ জনজীবনকে বিপর্যস্ত করছে। গরম বাতাস শরীরে লাগছে আগুনের হলকার মতো। ঘরে-বাইরে কোথাও স্বস্তি নেই এতটুকু। শিশু ও বৃদ্ধরা গরমে কাবু হয়ে পড়ছে সবচেয়ে বেশি। কর্মজীবী মানুষ বাইরে বের হলেই অতিরিক্ত ঘামে ক্লান্ত হয়ে পড়ছেন। ক্লান্তি দূর করতে কেউ পান করছেন ডাবের পানি, কেউবা খাচ্ছেন শসা, ক্ষীরা। তারপরও স্বস্তি মিলছে না। গরমের তীব্রতায় শুধু মানুষ নয় হাঁসফাঁস করছে প্রাণিকুলও। এ অবস্থায় সাধারণ মানুষকে দাবদাহের ছোবল ও ডায়রিয়াসহ নানা গরমজনিত রোগ-ব্যাধি থেকে রক্ষা করতে কিছু জনসচেতনতামূলক কর্মসূচি গ্রহণ এবং নাগরিকসাধারণকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে পদক্ষেপ থাকা দরকার।
আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী এই দাপদাহ আরো কয়েকদিন চলবে। সাধারণত বাংলাদেশে এপ্রিল এবং মে মাসে গরমের প্রভাব সবচেয়ে বেশি থাকে। কিন্তু ইদানিং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে শীত, বর্ষায়ও তাপমাত্রার উর্ধগতি লক্ষ করা যাচ্ছে। পঞ্জিকার হিসেবে এখন ভরবর্ষাকাল। এখন ঝড়বাদলের কাল। অথচ মধ্য আষাঢ়েও বৃষ্টির দেখা নেই। ফলে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে প্রতিদিনই। আষাঢ়ের চিত্র আঁকতে গিয়ে কবি বলেছিলেন, ‘আষাঢ়ে বাদল নামে নদী ভর ভর, মাতিয়া ছুটিয়া চলে ধারা খরতর’। কবিতার সেই আষাঢ় এখন কি দেখা যাচ্ছে? বিপরীতে দেশজুড়ে অসহ্য তাপদাহই পরিলক্ষিত হচ্ছে। আবহাওয়া অফিস বলছে, তাপমাত্রার পারদ এখন ৩৫ থেকে ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। কড়া সূর্যের তেজে ভ্যাপসা গরমে-ঘামে মানুষ হাঁপাচ্ছে। যোগ হয়েছে বিদ্যুৎবিভ্রাট ও লোডশেডিংয়ের দুঃখ-কষ্টও। ঘরে-বাইরে কোথাও স্বস্বি নেই। রাতের তাপমাত্রাও তেঁতে আছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেড়ে গেছে। পাশাপাশি বেড়েছে সূর্যের তাপ। এছাড়া আকাশে নেই কোনো মেঘের বলয়। সংগতকারণে এই গরম আরো কয়েকদিন থাকতে পারে। বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ বেশি থাকায় তাপমাত্রার চেয়ে একটু বেশিই গরম অনুভূত হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে না যাওয়া এবং বেশি বেশি পানি পান, স্যালাইন ও লেবুর শরবত খাওয়ার ব্যাপারে সাধারণ মানুষকে সচেতন করার সরকারি ও নাগরিক উদ্যোগ থাকা দরকার। প্রসঙ্গত, এখন গরমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ডায়রিয়াসহ গরমজনিত নানা রোগ। ব্যক্তিগত ও সামাজিক অসচেতনতার কারণে সহজেই এসব রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
এ অবস্থায় সাধারণ মানুষকে রক্ষা করতে বিশুদ্ধ পানি পানের সুব্যবস্থাসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। বিশুদ্ধ পানি পানের ব্যাপারে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। পানি ফুটানোর সঙ্গে ফিল্টারিং করে খেতে পারলে আরো নিরাপদ। শিশুদের বাইরের খাবার থেকে বিরত রাখার বিষয়ে মা’দের সতর্ক থাকতে হবে। ঘরের তৈরি খাবার ছাড়া বাইরের খাবার পরিহার করতে হবে। ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে ওরস্যালাইনের পাশাপাশি পানি জাতীয় খাবার অনুযায়ী ওষুধ খাওয়াতে হবে। বিভিন্ন প্রচার মাধ্যম ব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে বুঝাতে হবে ডায়রিয়া হলে শরীর থেকে পানি চলে যায় এবং গরমের কারণে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। তাই যত দ্রুত সম্ভব রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। বারবার পাতলা পায়খানা হলে সঙ্গে সঙ্গে খাবার স্যালাইন খাওয়া শুরু করতে হবে। ঘরের পরিবেশ যতটা সম্ভব ঠা-া রাখা গেলে ডায়রিয়া ও শ^াসজনিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কম থাকে।
একই সঙ্গে তাপদাহের এ সময়ে স্কুলগামী শিশুদের বাড়তি পরিচর্যা নিতে হবে। বেশি করে বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে। খোলা বা বাসি খাবার খাওয়া যাবে না। রাস্তা বা ফুটপাতের শরবত ও এ ধরনের পানীয় পান করা থেকে বিরত থাকতে হবে। সরকারের পাশাপাশি নাগরিক উদ্যোগ থাকলে গরমজনিত রোগব্যাধি মোকাবেলা করার কাজটি সহজ হবে। তাই নাগরিকসাধারণ এবং বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থাকেও দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেয়া উচিত। জনস্বাস্থ্যের পাশাপাশি জলবায়ুর এই পরিবর্তন বাংলাদেশের বিশেষত খাদ্য ও কৃষিখাতে বিরূপ প্রভাব ফেলছে। তাই এর নেতিবাচক প্রভাব মোকাবেলায় সুনির্দিষ্ট ও যুগোপযোগী কর্মপরিকল্পনা তৈরি করা প্রয়োজন।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট