চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

মাইজভান্ডার দরবার: শাহ ডা. দিদারের অনুভূতি

কালান্তরে দৃষ্টিপাত

আহমদুল ইসলাম চৌধুরী

২৯ এপ্রিল, ২০১৯ | ১:৫২ পূর্বাহ্ণ

মাইজভান্ডার দরাবর শরীফের মধ্যমণি হযরত শাহ সুফি মাওলানা সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভান্ডারী (রহ.)। তাঁর সরাসরি নাতি হযরত শাহ সুফি মাওলানা সৈয়দ দেলোয়ার হোসাইন মাইজভান্ডারী (রহ.)। তাঁর ৫ পুত্র সন্তানের মধ্যে হযরত শাহ আলহাজ্ব ডা. সৈয়দ দিদারুল হক ৪র্থ। বিভিন্ন বিয়ে মেজবান তথা নানা অনুষ্ঠানে তার সাথে মাঝে মধ্যে স্বাক্ষাৎ হয়। ক’বছর আগে নতুনভাবে আত্মীয়তার বন্ধনে উভয়ে আরও কাছে এসে যাই। ছোট ভাই জিয়াউল ইসলাম মুরাদের বড় মেয়ে ডা. সুমাইয়ার সাথে শাহ ডা. দিদারুল হকের ছোট ছেলে ডা. সাইফ বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। ফলে আমার ভাইয়ের উত্তর নালাপাড়া বাসায় রাতে দীর্ঘ সময় নিয়ে উভয়ের মধ্যে আলাপ হচ্ছিল। এতে তার ধর্মীয় অনুভূতিতে অনেক কিছু জানতে পারি, বুঝতে পারি।
তার প্রথম অনুভূতিতে, আমরা আল্লাহর রাসূল (স.)’র উম্মত, আল্লাহর রাসূলের মূল নাম মুহাম্মদ। আমাদের পিতা মাতা মুরব্বিরা মূল নামের সাথে সংযোজন করে দেন মুহাম্মদ। কিন্তু আফসোসের বিষয় আমরা ইংরেজি বা বাংলাতে নামের আগে মুহাম্মদ নাম পূর্ণাঙ্গভাবে লিখতে কার্পণ্য করি। ইংরেজি লিখলে এমডি, বাংলা লিখলে মোহাং বা মোঃ দিয়ে লিখে আমরা চরম কার্পণ্য বেয়াদবী, ধৃষ্টতা প্রদর্শন করে থাকি। গারাংগিয়া হযরত বড় হুজুর কেবলা (রহ.), ১৯৬০এর দশকে যৌবনের প্রারম্ভে তাঁর হাতে মুরিদ হওয়ার সৌভাগ্য হয়। তাঁরই অন্যতম মহান খলিফা হযরত আলহাজ্ব শাহ সুফি মাওলানা মুহাম্মদ আবদুল কুদ্দুস আল কাদেরী (রহ.)। তাঁর মুখে আজ থেকে ৪০/৫০ বছর আগে ক্ষোভের সাথে বলতে শুনেছি,“ আফসোস! আমরা আল্লাহর রাসূলের উম্মত দাবী করি, কিন্তু মূল নামের আগে মুহাম্মদ শব্দটা পুরো লিখতে বখিলি করি। যারা এ রূপ বখিলি করে তারা পরকালে কিভাবে নবীর সুপারিশ আশা করতে পারে”।
অপরটি হল আল্লাহর রাসূল (স.) বিদায় হজ্বের পর মদিনা মুনাওয়ারা ফেরার পথে গদীর নামক স্থানে হযরত আলী (ক.) কে উদ্দেশ্য করে পবিত্র খোতবা প্রদানসহ একাধিক হাদিস শরীফ রয়েছে। আমরা কেন জানি এ বিষয়ে আলোচনা করতে চাই না, পাশ কাটতে চাই। আমি প্রশ্ন করলাম, শিয়ারা এ বিষয়ে বেশি বেশি আলোচনাসহ নানা জায়গায় উপস্থাপন করে। তখন ডা. দিদার সাহেব বলেন, শিয়ারা মহান সাহাবাসহ নানা বিষয়ে বেয়াদবী করে। শিয়ারা গদীরে নবী পাকের খোতবাসহ একাধিক হাদিস শরীফ নিয়ে গুরুত্ব দেয় বলে আমরা আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতেরা এর থেকে সরে আসব তা হতে পারে না।
শিয়াদের সাথে আমাদের তথা আহলে সুন্নত ওয়াল জমাতের রয়েছে বড় ধরনের মত পার্থক্য। তারপরেও তারা আশেকে রাসূল হিসেবে আমাদের থেকে এগিয়ে মনে করি। যেহেতু ইরানের বিভিন্ন শহরে বা যে কোন জায়গায় তাদের ধর্মীয় মাহফিলে আল্লাহর রাসূল (স.)’র নাম তথা মুহাম্মদ যতবারই উচ্চারিত হয় ততবারই উপস্থিত সকলে সমস্বরে তথা বড় স্বরে বলে উঠে “আল্লাহুম্মা সল্লি আলা মুহাম্মদ ওয়ালা আলি মুহাম্মদ”। যে কোন সাধারণ বৈঠকে, সভায়, ধর্মীয় মাহফিলে ১০/১৫/২০ তথা যতবারই আল্লাহর রাসূল (স.)’র নাম আসে ততবারই তারা উচ্চ স্বরে এ দরূদ শরীফ পড়তে কোন সময় কার্পণ্য বা অবহেলা করতে দেখি নাই। যা আমাদের দেশে একদম দেখা যায় না বললেই চলে।
হযরত আলী (ক.)’র জন্ম কাবা শরীফে। আহলে বায়েতসহ আল্লাহর রাসূল (স.)’র মুখে হযরত আলী (ক.) কে নিয়ে অনেক হাদীস শরীফ রয়েছে। ডা. সাহেব দুঃখ করে বলেন, এক ধর্মীয় অনুষ্ঠানে তিনি অতিথি হয়ে যান। এতে তিনি গদীরে খোম নিয়ে বক্তব্য রাখতেই আয়োজক যে বিব্রতবোধ করতেছেন তা বুঝতে পারেন।
ডা. সাহেব বলেন, শিয়ারা গুরুত্ব দেয় বলে আমরা সত্যকে পাস কাটার সুযোগ নেই। নবী পাক (স.) এর হাদিস শরীফ নিয়ে পর্যালোচনা করতে আমাদের বিব্রতবোধ করাটা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। তিনি হজ্ব ও ওমরায় মক্কা শরীফ গেলে দুই সফরে দুই বার গদীরে যেয়ারতে আসেন।
মাইজভান্ডার দরবারের নানা বিষয় নিয়ে ডা. সৈয়দ দিদার সাহেবের সাথে নানা বিষয়ে আলাপ হয়। আলাপে তিনি বলেন, শরীয়ত মানা সকল মুসলমানের জন্য বাধ্যতামূলক। তরিক্বত সবার জন্য নয়। মানুষভেদে তরিক্বত।
মাইজভান্ডার দরাবরে কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ বাদেও মাজার শরীফ সংলগ্ন নামাজের ব্যবস্থা রয়েছে। এতে মাইজভান্ডারে আসলে যেয়ারতের পাশাপাশি সময়ে হলে নামাজ পড়ার সুবিধা রাখা আছে।
বস্তুতঃ মাইজভান্ডার উত্তর চট্টগ্রামে ফটিকছড়ি উপজেলার একটি প্রত্যন্ত গ্রামের নাম। কিন্তু বিশ্বখ্যাত মহান অলি হযরত আলহাজ্ব শাহ সুফি মাওলানা সৈয়দ আহমদ উল্লাহ (রহ.) এ প্রত্যন্ত গ্রামকে দেশ পেরিয়ে বিশ্বের বুকে আলোচিত পরিচিত করেন। তিনি ছিলেন মহান আলেমেদ্বীন শরীয়তের কঠোর পাবন্দ। ২৩ জানুয়ারী ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে ৮০ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন। বিশাল মাজার কমপ্লেক্স নিয়ে এ মহান অলি শায়িত।
তাঁর ভাতিজা হযরত শাহ মাওলানা সুফি সৈয়দ গোলাম রহমান (রহ.) তথা বাবা ভান্ডারীও মহান অলি। তিনিও মাইজভান্ডার দরবারে শায়িত রয়েছেন।
শাহ ডা. দিদারুল হকের আমন্ত্রণে আমাদেরও যেয়ারতের অতীব আগ্রহে গত ৩ এপ্রিল বুধবার মাইজভান্ডার গমনের সুযোগ হয়। সাথে ছিলেন আলহাজ্ব আলমগীর আলম, এডভোকেট মুহাম্মদ ইলিয়াস, আলহাজ্ব মুহাম্মদ শরীফ, মনসুর আলম ভান্ডারী ও রেজাউল করিম বাবুল। ছোট ভাই জিয়াউল ইসলাম মুরাদ ও ভাগিনা হাসান তথায় ছিলেন।
যেয়ারতে বেয়াই ডা. সৈয়দ দিদার সাহেবের রাজকীয় আতিথেয়তার পাশাপাশি বিশাল এরিয়া নিয়ে মাজার কমপ্লেক্স ঘুরে ফিরে দেখি। এখানে শায়িত বংশধর মহান অলিগণের যেয়ারতেও সময় দিই।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট