চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪

বিশেষ সম্পাদকীয়

চট্টগ্রামবাসীর পাশে দাঁড়াতে হবে বিগ বিজনেস হাউসগুলোকে

৪ জুন, ২০২০ | ৪:৫৪ পূর্বাহ্ণ

শুরুর দিকে কিছুটা ধীর গতিতে সংক্রমণ ছড়ালেও চট্টগ্রাম ইতিমধ্যেই করোনার হটস্পট হিসেবে নজরে চলে এসেছে। দিন যতো গড়াচ্ছে, চট্টগ্রামে করোনার চিকিৎসার নাজুক চিত্রই বেশ ভালভাবেই ফুটে ওঠছে।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, চট্টগ্রামের চারটি হাসপাতালে পুরোদমে এখন করোনা আক্রান্ত রোগীদের সেবা প্রদান করা হচ্ছে। এসব হাসপাতালে প্রায় ৪শ শয্যা রয়েছে। আর আইসিইউ সুবিধার শয্যা রয়েছে ১৪টি।
অথচ, চট্টগ্রামে প্রতিদিন গড়ে পৌনে দুইশ লোক করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। নানা কারণে এই পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। সংবাদ মাধ্যমের তথ্যমতে, চট্টগ্রামে নতুন করোনা রোগীকে চিকিৎসা সেবা দেয়ার মতো শয্যা আলোচ্য হাসপাতালগুলোর কোনটাতেই নেই। বরং মেঝে এবং বারান্দায় রেখেও চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। করোনা রোগীর অব্যাহত চাপের কারণে সরকার আরও চারটি হাসপাতাল অধিগ্রহণ করে চিকিৎসা দেয়ার পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু সেগুলো চালু হওয়ার আগে এখন যে রোগীগুলো প্রতিদিনই শনাক্ত হচ্ছেন, তারা চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন না বললেই চলে।
অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, নাজুক চিকিৎসা ব্যবস্থার কারণে প্রতিদিনই অসহায়ভাবে প্রাণ হারাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। ইতিমধ্যে চট্টগ্রামের একটি প্রতিষ্ঠিত শিল্প গ্রুপের অন্যতম কর্ণধার এবং একাধিক সামর্থ্যবান বিশিষ্ট ব্যবসায়ী বলতে গেলে বিনা চিকিৎসায় বেঘোরে প্রাণ হারিয়েছেন। অথচ, চট্টগ্রামে চিকিৎসা ব্যবস্থার শক্ত অবকাঠামো থাকলে অন্ততঃ তাদেরকে বিনা চিকিৎসায় মরতে হত না।
এই যে অবস্থা, তা সামাল দিতে চট্টগ্রামে করোনা চিকিৎসায় এখনই কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার। অগ্রাধিকারভিত্তিতে দ্রুত বেশ কিছু ফিল্ড হাসপাতাল স্থাপনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। সেগুলোতে পর্যাপ্ত অক্সিজেন সিলিন্ডার, পালস-অক্সিমিটার, হাই-ফ্লো ন্যাজল ক্যানুলা, অক্সিজেন কনসেন্ট্রেটর ও সি-প্যাপ মেশিনের ব্যবস্থা করা, স্বাস্থ্যকর্মীদের স্বল্প-মেয়াদি প্রশিক্ষণ দিয়ে অক্সিজেন-চিকিৎসা দিতে সক্ষম করে তোলা এবং স্থায়ী হাসপাতালগুলোতে দ্রুততম সময়ে সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইনের ব্যবস্থা করা।
স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন, কালক্ষেপণ না করে এখনই আলোচ্য পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করার মাধ্যমে করোনার চিকিৎসা নাগালের মধ্যে নিয়ে আসা সম্ভব।
লক্ষ্য করা যাচ্ছে, করোনা পরিস্থিতি বিবেচনা করে সরকার সামর্থ্যের সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে এবং তা অব্যাহত রেখেছে। এর পাশাপাশি কয়েকটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানও করোনা চিকিৎসায় বিভিন্ন হাসপাতালে সরঞ্জাম প্রদানসহ সামর্থানুযায়ী সহায়তা দিয়েছে। কিন্তু পরিস্থিতি যেভাবে ভয়াবহ রূপ পাচ্ছে, তাতে চট্টগ্রামে করোনা চিকিৎসা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে বড় বিনিয়োগের প্রয়োজন হবে। বিশেষ করে কয়েকটি ফিল্ড হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করতে হলে সম্মিলিত উদ্যোগ ও বিপুল অর্থের বিনিয়োগ দরকার। এই বিনিয়োগের জন্যই চট্টগ্রামের বিগ বিজনেস হাউসগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। এক্ষেত্রে ব্যবসায়িক সংগঠনগুলো অর্থাৎ চিটাগাং চেম্বার, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বার, ওমেন চেম্বার ও জুনিয়র চেম্বার নেতৃবৃন্দ যৌথ উদ্যোগ নিয়ে ফিল্ড হাসপাতাল করার জন্য বিজনেস হাউসগুলোকে সংগঠিত করার উদ্যোগ নিতে পারে।
আমরা মনে করি, করোনাকালের এই দুঃসময়ে চট্টগ্রামের বিগ বিজনেস হাউসগুলোকে সামর্থ্য উজাড় করে দিয়ে চট্টগ্রামবাসী পাশের দাঁড়ানোর এখনই সময়। এছাড়া আপাততঃ আর কোন বিকল্প নেই।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট