চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

সম্পাদকীয়

সম্প্রীতির বন্ধন হোক সুদৃঢ় পবিত্র ঈদুল ফিতর

২৩ মে, ২০২০ | ১১:১৬ পূর্বাহ্ণ

‘ও মন রমজানের ওই রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ’। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবিতার মতো মৃন্ময়ী রূপে মাহে রমজান শেষে ঈদুল ফিতর আমাদের মাঝে হাজির হয়েছে। রহমত, বরকত ও মাগফেরাতের মাস ‘মাহে রমজান’র একেবারে শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে বিশ্বমুসলিম আবেগাপ্লুত কণ্ঠে উচ্চারণ করছে, ‘আলবিদা, মাহে রমজান’। আর সে সঙ্গে তারা অপেক্ষা করছে একটি দিনের। অপেক্ষা করছে ঈদ-উল-ফিতরের। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামীকাল বা পরশুই পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর। বৈশিষ্ট্য ও তাৎপর্যে এই দিনটি বিশ্বমুসলিমের জীবনে অনন্যসাধারণ। দিনটি একদিকে যেমন হাসি-খুশী ও আনন্দের, অন্যদিকে দরিদ্র ও দুস্থদের ফিতরা বিতরণের দিন। উৎসবকে সম্পদবণ্টনের সাথে এক সূত্রে বেঁধে দেয়াতে দিনটি হয়ে উঠেছে মহান ও অতিশয় পবিত্র। এবার করোনাকালে যদিও ঈদের থাকবে না তেমন কোনো আনুষ্ঠানিকতা, তবে অন্যান্য বারের চেয়ে গরীব-দুখির মধ্যে সামর্থবানদের যাকাত-ফিতরা বন্টনের কর্মসূচি বেশি থাকাসহ নানা কারণে এবারের ঈদ ভিন্নমাত্রা পাবে।
ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের আনন্দ ও মাগফিরাতের, ভ্রাতৃত্বের ও সহানুভূতির, ভালোবাসা ও মানবিকতার এক অপূর্ব মিলন আয়োজন হচ্ছে ঈদ-উল-ফিতরের পবিত্র দিন। দীর্ঘ এক মাস কঠিন সিয়াম সাধনার পর মহান আল্লাহ নিয়ামত হিসেবে দিনটি মুসলমানদের জন্যে নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন। ঈদের সার্থকতা নিহিত রয়েছে অন্যের প্রতি দরদ, দায়বোধ ও সমভাবে সুখ-দুঃখ ভাগ করে নেয়ার মধ্যেই। ইসলাম নিজের খুশী, নিজের আনন্দ এবং নিজে ভোগ-বিলাসের মধ্যে জীবনযাপনকে কোনভাবেই অনুমোদন দেয় না। কঠোর সিয়াম সাধনা আমাদেরকে একজন উপবাসীর, একজন তৃষ্ণার্তের, একজন কাতর মানুষের দুঃখ-কষ্টকে জানার ও অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ করে দেয়। রাব্বুল আলামিন রমজান মাসকে বরকত, রহমত এবং মাগফিরাতের মাস হিসেবে বিশেষভাবে ঘোষণার মাধ্যমে প্রকৃতপক্ষে তার বান্দাদের জন্যে নাজাত ও আত্মশুদ্ধির এক মহামহিম সুযোগ করে দিয়েছেন। আত্মা ও চিত্তের শুদ্ধিই হচ্ছে রোজার মুখ্য উদ্দেশ্য। মোমিন মুসলমান তিনিই, যিনি নিজেকে পরিবার, সমাজ ও দেশের জন্যে উৎসর্গীত করেছেন। শুধু নিজের জন্যে বাঁচা সত্যিকারের মোমিন মুসলমানদের লক্ষ্য হতে পারে না। বাঁচতে হবে সমাজ, জাতির কল্যাণ ও মঙ্গলের জন্যেই। আর এটিই সত্যিকারের মুসলমানদের জন্যে নির্দেশিত পথ। বস্তুত পক্ষে সিয়ামের উদ্দিষ্ট লক্ষ্য হচ্ছে এটিই।
মহান আল্লাহ প্রকৃত রোজাদারের পুরস্কার তিনি নিজেই প্রদান করবেন এমন অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন পবিত্র কোরান মজিদে। আর রোজার শেষে যে খুশির ঈদ, তা অবশ্যই নতুন জামা-কাপড় আর উপাদেয় খাবারের আয়োজনের মধ্যে নয় বরং তার মহিমাত্ব নিহিত রয়েছে সবার মধ্যে নিজেকে বিলিয়ে দেয়ার মধ্যে। অভাবী, গরীব ও বঞ্চিতদের প্রতি সামর্থ্যবানদের অধিকার প্রতিষ্ঠার মধ্যে। ইসলাম বলেছে, ধনীদের সম্পদে গরীবদের হক আছে। তাই ধনীদেরকে গরীব ও এতিমদের হক আদায় করতে হবে। এ কারণেই ইসলামে যাকাত ফরজ করা হয়েছে। প্রকৃত মুসলমানরা ইসলাম নির্দেশিত পথে অক্ষম ও অভাবী মানুষদের মধ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণ যাকাত বন্টন করে তাদের স্থায়ীভাবে অভাব মুক্ত করে। অথচ দুঃখজনক হলেও সত্য যে, যাদের ওপর যাকাত প্রদান ফরজ হয়েছে তাদের বেশির ভাগই যাকাত দেন না। যদি সামর্থবান সবাই যাকাত দিতো তাহলে দেশে গরীব ও বেকার জনসংখ্যার পরিমাণ দিন দিন কমে যেতো। এভাবে এক সময় দেশ পুরোপুরি দারিদ্রমুক্ত হতো। আবার অনেক সম্পন্ন ও ধনাঢ্য ব্যক্তি যাকাত দেন লোক দেখানোর জন্যে, সামাজিক মর্যাদা লাভের আশায় ঢাকঢোল পিটিয়ে। এতে অনেক সময় দরিদ্র জনগণ যাকাত নিতে গিয়ে ভিড়ে পদপিষ্ট হয়ে মারা যায়। এটি ইসলাম বিরোধী। যারা নিজেদের মোমিন মুসলমান দাবি করেন তাদের উচিত গরীবের হক আদায়ে ইসলাম নির্দেশিত পথ অনুসরণ করা।
আমরা মনে করি, পবিত্র ঈদ-উল ফিতরকে সামনে রেখে অবশ্যই নিজেদের জীবন যাপনে এবং অন্যের সুন্দর জীবন পরিচালনায় আমাদের দায়িত্ব পালন করার বিষয়টি গুরুত্বের সাথে ভাবতে হবে। ধর্মীয় আদেশ-নিষেধের প্রতি হতে হবে আরো বেশি যতœবান। সিয়াম সাধনা এবং পবিত্র ঈদ-উল ফিতর উদযাপনের আনন্দ-উল্লাসের মধ্য দিয়ে যদি উৎসবের মূল শিক্ষাই আমাদের জীবনে কোনো ছায়াপাত না করে, তবে তা হবে আমাদের জন্যে বড় ব্যর্থতা। ঈদ উৎসব সফল হবে তখনই, যখন ইসলামের সাম্যে ও ভ্রাতৃত্বের সকল মর্মবাণী ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে প্রতিফলিত হবে। আসুন, সামাজিক ও শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ইবাদতবন্দেগী হই। ইসলামের মূল শিক্ষাকে ধারন করে সব বিলাসিতা পরিহার করে করোনাপীড়িতদের পাশে দাঁড়াই।
আমাদের প্রিয় পাঠক, লেখক, বিজ্ঞাপনদাতা, এজেন্ট, শুভানুধ্যায়ী- সবাইকে পবিত্র ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট