চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

নিয়ম মানতে বাধ্য করতে হবে সংক্রমণের চতুর্থ স্তরে বাংলাদেশ

১২ এপ্রিল, ২০২০ | ১:০২ পূর্বাহ্ণ

করোনার বিস্তার ঠেকাতে নানামাত্রিক পদক্ষেপ সত্ত্বেও ভাইরাসটির গতি রোধ করা যাচ্ছে না। দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে সারাদেশে। গতকাল পর্যন্ত বাংলাদেশে ৪২৪ জন আক্রান্ত ও ২৭জন মারা যাওয়ার খবর দিয়েছে আইইডিসিআর। চলতি এপ্রিল মাসকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণে বাংলাদেশে ‘পিক টাইম’ (সর্বোচ্চ ব্যাপ্তির সময়) মনে করছেন ভাইরাস বিশেষজ্ঞরা। প্রথম আক্রান্ত শনাক্ত, আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং বিদেশফেরতদের আসার ওপর নির্ভর করে এ আশঙ্কা করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীও এ মাসে বাংলাদেশে ব্যাপক হারে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। এ অবস্থায় ভাইরাসটির বিস্তার রোধে সর্বোচ্চ সতর্কতার বিকল্প নেই।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, করোনাভাইরাসের বংশবিস্তারে সময় লাগে ৫.৫ দিন। আক্রান্ত হওয়ার ১২ দিনের মধ্যে মানুষের শরীরে এর লক্ষণ দেখা দিতে শুরু করে। লক্ষণ দেখা যাক বা না যাক আক্রান্ত মানুষ ভাইরাসটির বিস্তার ঘটাতে সক্ষম। এর অর্থ হলো আক্রান্ত হওয়া থেকে ১৪ দিন পর্যন্ত কোনো ব্যক্তি সংক্রমণের বিস্তার ঘটাতে পারে। গত ৮ মার্চ বাংলাদেশ প্রথম ঘোষণা করে, দেশে কোভিড-১৯ আক্রান্ত ব্যক্তির সন্ধান পাওয়া গেছে। করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি ছিলেন বিদেশফেরত। সে হিসেবে এখন করোনারোগী শনাক্ত হওয়ার পর ১মাস ৫দিন চলে গেছে। স্বাস্থ্যসেবা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রথম আক্রান্ত শনাক্ত থেকে ভাইরাসের সংক্রমণের সংখ্যা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছতে প্রায় দেড় থেকে দুই মাস সময় লাগে। সে হিসেবেও বাংলাদেশে এখন করোনার পিক টাইম শুরু হয়ে গেছে। মধ্যএপ্রিল বা শেষের দিকে অনেক বেশি আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা আছে। অর্থাৎ পুরো এপ্রিল মাসটাই খুবই স্পর্শকাতর। আবার বিভিন্ন এলাকায় করোনারোগী শনাক্ত হওয়ার খবর অনুযায়ী ভাইরাসটির কমিউনিটি ট্রান্সমিশনও (ব্যাপক জনগোষ্ঠীতে সংক্রমণ) হয়ে গেছে ইতোমধ্যে। প্রসঙ্গত, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও এর ব্যাপকতার ওপর ভিত্তি করে বিশ্বের দেশগুলোকে চারটি স্তরে ভাগ করেছে। একজনেরও সংক্রমণ শনাক্ত না হওয়া দেশ স্তর ১-এ। বিদেশ থেকে আসা ব্যক্তি শনাক্ত হওয়া ও তাঁদের মাধ্যমে দু-একজনের সংক্রমণ, স্তর-২। নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় সংক্রমণ সীমিত থাকলে তা স্তর-৩। আর স্তর-৪ হলো সংক্রমণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়া। ৫ এপ্রিল সংক্রমণের তৃতীয় স্তরে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশ, এমন বক্তব্য দিয়েছেন আইইডিসিআরের পরিচালক। তার কথায় কয়েকটি এলাকায় গুচ্ছ আকারে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য নজরুল ইসলাম বলেছেন, সংক্রমণের যে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে, তাতে একে কমিউনিটি ট্রান্সমিশন বলতে বাধা নেই। অর্থাৎ প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্তর পেরিয়ে বাংলাদেশ এখন সংক্রমণের চতুর্থ স্তর বা চূড়ান্ত স্তরে প্রবেশ করেছে। এখন প্রতিদিনই সংক্রমিত ও মৃতের সংখ্যা বাড়ছে। জার্নাল অব ক্লিনিক্যাল মেডিসিনে প্রকাশিত এক গবেষণা নিবন্ধ বলছে, একজন করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি গড়ে ২ দশমিক ৫ জনেরও বেশি মানুষকে আক্রান্ত করতে পারে। সতর্ক পদক্ষেপ না থাকলে একজন করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি ১০ জন বা ১০০ জনের মধ্যেও রোগটি ছড়িয়ে দিতে পারে। চীন, ইতালি ও যুক্তরাষ্ট্রে এর প্রমাণ মিলেছে। বিভিন্ন দেশের সংক্রমণের ধারা পর্যালোচনা করে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রথম রোগী শনাক্ত হওয়ার পরবর্তী এক মাসের কিছু আগে-পরে সংক্রমণের মহাবিস্তার ঘটে। বাংলাদেশ এখন সেই সময়ের মুখোমুখি। প্রধানমন্ত্রীও বলেছেন, ‘সারাবিশ্বে যেভাবে করোনা রোগী বৃদ্ধি পেয়েছে, বৃদ্ধি পাওয়ার একটা ট্রেন্ড (প্রবণতা) আছে। তাতে আমাদের সময়টা এসে গেছে।’ গণমাধ্যমের খবরেও বাংলাদেশে এখন সংক্রমণ পরিস্থিতির ক্রান্তিকাল শুরু হওয়ার, অর্থাৎ দেশ সংক্রমণের তৃতীয় স্তর থেকে চতুর্থ স্তরের প্রবেশ করার কথা বলা হচ্ছে। আর রোগ সংক্রমণের চতুর্থ স্তরে পৌঁছানোর অর্থ, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হবে বহু মানুষ, বহু মানুষকে হাসপাতালে যেতে হবে, মৃত্যুর সংখ্যা বাড়বে। সংগতকারণে এসময়ে কোনো ধরনের খামখেয়ালি দেশের জন্যে বড়ো বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এই ক্রান্তিকালে করোনা মোকাবিলায় আমাদের প্রস্তুতি কোন পর্যায়ে। সংক্রমণের হার কি প্রস্তুতির তুলনায় বেশি? স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেছেন, সব দেশের মতো বাংলাদেশও এই ভাইরাসের পেছনে আছে। ভাইরাসটি এমন যে এর আগে থাকার কোনো সুযোগ নেই। রোগ শনাক্তকরণ, আইসোলেশন ব্যবস্থা বা চিকিৎসা সবই করতে হচ্ছে সংক্রমণ ঘটে যাওয়ার পর। কিন্তু এই তিন ক্ষেত্রে পেছনে থাকতে হলেও জনসচেতনতা ও সামাজিক দূরত্ব তৈরির ক্ষেত্রে সামনে থাকার সুযোগ আছে। সে কাজটি সবাই মিলে করতে পারি। আর এটিই করোনাযুদ্ধে জয়ের সবচেয়ে বড়ো উপায়। প্রতিদিন আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যাবৃদ্ধি আমাদের জন্য বড় ধরনের বিপদের আলামত। এহেন বাস্তবতায় অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করে সবাইকে ঘরে রাখার পন্থা কঠোরভাবে বাস্তবায়নের কোনো বিকল্প নেই। এক্ষেতে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলাবাহিনীকে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করতে হবে। প্রয়োজনে বেপরোয়া লোকদের প্রতি সর্বোচ্চ কঠোরতা অবলম্বন করতে হবে। মেঘে মেঘে অনেক বেলা গড়িয়েছে। দেশের অবস্থা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠার আগেই যা যা করার করতে হবে। স্থান ও ক্ষেত্রবিশেষে প্রয়োজন হলে কারফিউ জারি করার বিষয়টিও ভেবে দেখা যেতে পারে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট