চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

বিশ্ব ভোক্তা অধিকার দিবস চাই ভোক্তাবান্ধব বাজারব্যবস্থা

১৫ মার্চ, ২০২০ | ২:৫৪ পূর্বাহ্ণ

‘মুজিববর্ষের অঙ্গীকার, সুরক্ষিত ভোক্তা অধিকার’ প্রতিপাদ্যে আজ সারাদেশে নানামাত্রিক কর্মসূচিতে পালিত হচ্ছে বিশ্ব ভোক্তা অধিকার দিবস। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীতে শুরু হওয়া মুজিববর্ষে সরকার ভোক্তা অধিকার নিশ্চিত করতে ভোক্তা অধিকার বিষয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে জনসচেতনতা সৃষ্টিসহ বছরব্যাপী বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। আর এই কর্মসূচির সূচনা হবে ‘বিশ^ভোক্তা অধিকার দিবস’ থেকেই। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের আন্তরিক প্রচেষ্টা থাকলে কাক্সিক্ষত ফল আসবে, সন্দেহ নেই। তবে, দেশের প্রতিটি নাগরিকের জন্য বিষমুক্ত, নিরাপদ এবং পুষ্টিমানসম্পন্ন খাদ্য নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের অন্যতম মৌলিক দায়িত্ব হলেও সংশ্লিষ্টরা এ দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করছে কিনা সে প্রশ্নটিও থেকে যায়।
দেশে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন আছে। ভোক্তাস্বার্থ সংরক্ষণে এটি রক্ষাকবচের ভূমিকা রাখার কথা। কিন্তু আইনটির যথাযথ প্রয়োগ কি হচ্ছে? জনবান্ধব এ আইনের যথাযথ বাস্তবায়নে প্রয়োজন জনপ্রতিনিধি, প্রজাতন্ত্রের কর্মচারি ও জনগণের সম্মিলিত প্রচেষ্টা। তবে, বাস্তবতা হচ্ছে, সাধারণ মানুষ যেমন আইনটির ব্যাপারে তেমন কিছু জানে না। তেমনি সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগও আইনটির ব্যাপারে সাধারণ মানুষকে অবহিতকরণ ও সচেতনতা সৃষ্টির জন্যে জোরালো কোনো কর্মসূচি নেয় না। আবার আইনটির কঠোর প্রয়োগেও পর্যাপ্ত তৎপরতা দেখা যায় না। এ সুযোগটি নিচ্ছে অতি মুনাফালোভী চক্রগুলো। পরিণামে একদিকে যেমন ভোক্তাশ্রেণির পকেট কাটা যাচ্ছে, অন্যদিকে তারা চরম স্বাস্থ্যহানিরও শিকার হচ্ছে। অতি মুনাফালোভী কৃষক, উৎপাদনকারী, মজুতকারী, পাইকারী ও খুচরা বিক্রেতা খাদ্যে রাসায়নিক দ্রব্যাদি, ডিডিটি, কীটনাশক, কাপড়ের রং, ফরমালিন, ক্যালসিয়াম কার্বাইড, ইথেফেন, কৃত্রিম হরমোন ব্যবহার করছে। জনগণকে বাধ্য হয়ে এসব বিষাক্ত খাবার গ্রহণ করতে হচ্ছে এবং তারা নিরাপদ এবং পুষ্টিমানসম্পন্ন খাদ্যের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
দৈনিক পূর্বকোণসহ বিভিন্ন দৈনিকে নানা সময়ে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনগুলো বলছে, অনেক ভোক্তাই পণ্য কিনতে গিয়ে নানা ধরনের প্রতারণার শিকার হয়ে থাকেন। কেউ ওজনে কম পান, কারো কাছ থেকে এমআরপির চেয়ে দাম বেশি রাখা হয়। আবার ভেজাল বা মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্যও গছিয়ে দেয়া হয় ক্রেতাদের। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মতে, মানুষের মধ্যে অভিযোগ করার প্রবণতা কম। এ ক্ষেত্রে যে একটি শক্ত আইন রয়েছে সে সম্পর্কে অনেকেই জানেন না। এমনকি দোকানে পণ্য কিনতে গিয়ে কেউ অবহেলার শিকার হলে সে ক্ষেত্রেও যে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন প্রযোজ্য, তাও জানে না অনেকেই। ফলে ঠকবাজরা সবসময় ঠকিয়ে যাচ্ছে সাধারণ ভোক্তাদের। কিন্তু প্রশ্নটি হচ্ছে, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণের সুফল প্রতিটি ঘরে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারি নিষ্ঠার সাথে যথাযথ ভূমিকা রাখলে কি এমন চিত্র দেখতে হতো? অধিকারের ব্যাপারে সাধারণ মানুষকে সচেতন ও সাহসী করার জোরালো কর্মসূচি থাকলে, পাশাপাশি ঠকবাজদের দমনে কঠোর পদক্ষেপ থাকলে ভোক্তাদের ঠকাতে কেউ দুঃসাহস দেখাতো না।
আবার, শিল্পকারখানা বিশেষ করে টেক্সটাইল ও ডাইং ইন্ডাস্ট্রির অপরিশোধিত বর্জ্য এবং পয়ঃবর্জ্য সরাসরি নদীতে ফেলা হচ্ছে। ফলে নদীগুলো এত দূষিত হয়ে পড়ছে যে, সেখানে কোনো জলজ প্রাণীর বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। নদীর বিষাক্ত পানি কৃষিকাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে শাক-সবজি ও ধান এবং মাছে ভারী ধাতু যেমন লেড, আর্সেনিক, কেডমিয়াম, মারকারি ও ক্রোমিয়াম-এর মিশ্রণ ঘটে। খাদ্যচক্রের মাধ্যমে এসব ভারী ধাতু আমাদের শরীরে প্রবেশ করে। যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এ অবস্থায় ক্রেতা-ভোক্তার স্বার্থ রক্ষায় রাষ্ট্রকে সোচ্চার হওয়ার বিকল্প নেই। দ্রব্যে ভেজালকারী, নানা প্রলোভন দেখিয়ে জনগণের টাকা আত্মসাৎকারী, মুনাফাশিকারী সিন্ডিকেটসহ ভোক্তা-সাধারণের অনিষ্টকারীদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। এসব অশুভ চক্রের ব্যাপারে রাষ্ট্র নির্লিপ্ত থাকলে নাগরিক-সমাজই শুধু ক্ষতিগ্রস্ত হবে না, সরকার ও রাষ্ট্রকেও তার চরম খেসারত দিতে হবে। তাই ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন কঠোরভাবে বাস্তবায়ন এবং অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। খাদ্যে ভেজাল দেওয়া ও রাসায়নিক দ্রব্যাদি মিশানো বা মেয়াদোত্তীর্ণ দ্রব্যাদিযুক্ত খাবার বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ ঘোষিত পণ্য আমদানিকারক ও বাজারজাতকারী এবং লেবেল ছাড়া মিথ্যা লেবেলের অধীন পণ্য বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে।
আমরা আশা করতে চাইা, মুজিববর্ষে ভোক্তার ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠায় সরকার সব পদক্ষেপই গ্রহণ করবে। অশুভচক্রের বিরুদ্ধে আইনসম্মত কঠোর পদক্ষেপ নেবে। পাশাপাশি ভোক্তাসাধারণকে তাদের সংবিধান স্বীকৃত আইন সম্মত অধিকারের ব্যাপারে সচেতন করার সুচিন্তিত কর্মসূচিও থাকতে হবে। আর ডিজিটাল বাজার ব্যবস্থায় অধিকতর স্বচ্ছতা ও ন্যায্যতা নিশ্চিত করতে অবশ্যই সাশ্রয়ী মূল্যে গুনগত মানসম্পন্ন নিরাপদ ইন্টারনেট সেবা প্রদানের বিষয়টিও বিবেচনায় নিতে হবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট