চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

অষ্টম কলাম

ইনফ্লুয়েঞ্জার সমস্যা ও সমাধান

অধ্যক্ষ ডা. রতন কুমার নাথ

১২ মার্চ, ২০২০ | ২:৫৬ পূর্বাহ্ণ

প্র থ ম বিশ^ যুদ্ধে র সময় মিত্র শক্তিসমূহের পক্ষে আমেরিকা যোগদান করলে স্পেন রাজ্যের রাজধানী মাদ্রিদ নগরে জার্মানদের কোন বিরাট পরীক্ষাগারে বিজ্ঞানীরা ইনফ্লুয়েঞ্জা জীবাণু উৎপাদন করতে আদিষ্ট হন। উদ্দেশ্য উক্ত জীবাণুপুঞ্জ আমেরিকার বন্দরে ছেড়ে দিলে তথাকার মাঝি মাল্লারা পীড়িত হয়ে পড়বে। সুতরাং আমেরিকান সৈন্য ইউরোপে আসতে পারবেনা। কিন্তু সঙ্কল্পটি কার্যে পরিণত হবার পূর্বেই বিজ্ঞানীদের মধ্যে কলহ ঘটায় জীবাণুকূল স্পেন দেশে ছড়িয়ে পড়ে, তাই সেখানে প্রথমে দারুণ ইনফ্লুয়েঞ্জা রোগ উপস্থিত হয় এবং সহসাই তাবৎ পৃথিবীতে এটার আধিপত্য বিস্তার করে। ইনফ্লুয়েঞ্জা একটি বহুব্যাপক ও স্পর্শ সংক্রামক পীড়া। চঋঊওঋঋঊজ’ঝ ইঅঈওখখটঝ নামক একপ্রকার জীবাণু এ রোগে বিদ্যমান থাকে। রোগ কীটানু প্রবেশের পর একদিন পর্যন্ত গা ম্যাজ ম্যাজ করা ছাড়া রোগী অন্য কোন রূপ বিশেষ অসুবিধা অনুভব করে না। পরে হঠাৎ অল্প শীত করে জ¦র আসে এবং মাথায়, কোমরে ও চোখে অত্যন্ত যন্ত্রণা হতে থাকে। কারো কারো বমি হতে পরে। সাথে সাথেই সর্দিকাশির লক্ষণ এসে পড়ে এবং হয় বঙ্কোনিমোনিয়া বা ব্রঙ্কাইটিস অথবা পেটের দোষ বা মস্তিস্ক বিকার প্রধান উপসর্গ রূপে দেখা দেয়। এটার কারণ এ রোগে শরীরের নানাস্থানের আভ্যন্তরিক ঝিল্লি গাত্রের প্রদাহ উপস্থিত হয় এবং প্রায়ই দেখা যায় যে, ভিন্ন ভিন্ন বৎসরে এ প্রকার প্রদাহ শরীরের ভিন্ন ভিন্ন স্থানে প্রকাশ পায়। সে জন্য দেখা যায় যে, কোন বৎসর সমস্ত রোগীতেই কেবল সর্দি ও হাঁচি হয়, কোনও বৎসর ভয়ানক উদরাময় হয়, আবার কোন বৎসর নিউমোনিয়ার ন্যায় লক্ষণাদি বা মস্তিষ্ক বিকারের চিহ্ন সকল প্রকাশ পেতে দেখা যায়। এ জ¦রের বিচিত্র লক্ষণ এটা যে, দেহের উত্তাপ যথেষ্ট থাকলেও চর্ম প্রায় শুষ্ক থাকে না Ñ বারে বারে ঘাম বের হতে থাকে। কখন কখনও মনে হয় জ¦র কমবে, কিন্তু বস্তুত তা হয় না। তাছাড়া আর এক বৈশিষ্ট্য এ যে, জ¦রের অনুপাতে নাড়ী স্পন্দন কম বৃদ্ধি পায়। এ রোগে হৃদপিন্ড ভয়ানক দুর্বল হয়ে পড়ে এবং সে কারণে রোগীর শারীরিক দুর্বলতা, রোগের প্রাবল্যের তুলনায় আশ্চর্য রকমের বেশী ও অধিকদিন স্থায়ী হয়। মাত্র ৭ দিনের জ¦রে রোগীকে বায়ু পরিবর্তনে পাঠানোর প্রয়োজনে হয় কেবলমাত্র ইনফ্লুয়েঞ্জাতেই। কখনও বা পাকাশয় ও অন্ত্রের দোষ , উদরাময় বা আমাশয়, প্রদাহে হ্রাস বা বৃদ্ধি বা অপর কোন দোষ, বুক ধড়ফড় করা, বিমর্ষতা বা বঙ্কোনিউমোনিয়া প্রভৃতি লক্ষণ দেখা দেয়। ফুসফুস প্রদাহ বা নিউমোনিয়া কেশিক নালী প্রদাহ বা ক্যাপিলারী ব্রঙ্কাইটিস কর্ণমূল প্রদাহ, নাক মুখ ও মলদ্বার দিয়ে রক্তপড়া, ঝিল্লিক প্রদাহ বা ডিফথেরিয়া সন্নিপাত বিকার, প্রলাপ, তন্দ্রা (ঈঙগঅ) আক্ষেপ, শ^াসক্লেশ, অতিসার, শোথ বা পচন (এঅঘএজজঊঘঊ) প্রভৃতি উপসর্গ ঘটলে পীড়া জটিল আকার ধারণ করেছে এটা বুঝতে হবে। এ রোগে শরীরের তাবৎ যন্ত্রই আক্রান্ত হতে পারে। অতএব প্রথম হতেই সুচিকিৎসিত না হলে রোগীর বিপদের সম্ভাবনা বেশী।
খৃষ্টীয় নবম শতাব্দী হতে সারা পৃথিবী জুড়ে এ রোগের বিবরণ পাওয়া যায়। ১৮৯০ খৃষ্টাব্দের শীতকালে এ দুরন্ত ব্যাধি রাশিয়া থেকে আরম্ভ করে সমগ্র ভূম-লে ছড়িয়ে পড়ে। ১৯১৮-১৯ খৃষ্টাব্দে এটা “সমর জ¦র” (ডঅজ ঋঊঠঊজ) নামে প্রথমে স্পেন দেশে প্রকাশ পায় এবং অল্প দিনে পৃথিবীব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। এ রোগের পর অনেক সময় যক্ষারোগ হবার সম্ভাবনা থাকে। এটার পর অনেক সময় কর্ণপ্রদাহ বা কানের পাশে সাংঘাতিক জাতীয় ফোঁড়া হতে পারে। অথবা ৩ নানা প্রকার চক্ষুরোগ হবার সম্ভাবনা থাকে।
হোমিওপ্যাথিক প্রতিবিধান : হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে বহু ব্যাপক সর্দি বা ইনফ্লুয়েঞ্জা রোগীর আরোগ্য সংকেত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। পীড়ার প্রাদুর্ভাব কালে ইনফ্লুয়েঞ্জি নাম নামক ঔষধের ৩০ বা ২০০ শক্তি দু একদিন অন্তর এক একমাত্রা প্রতিষেধক হিসেবে সেবন করা যেতে পারে। ঞঐঊ ঐঙগঙঊঙ ডঙজখউ ১৯২৫ সালের এপ্রিল সংখ্যায় প্রকাশিত তথ্যে ইংল্যান্ডের কোন কোন চিকিৎসক এটার উৎকৃষ্ট প্রতিষেধক হিসাবে আর্সেনিক ৩য় শক্তি প্রত্যেক তিন/চার মাত্রা ব্যবহারের উপদেশ দিয়েছেন। এছাড়াও ব্যাপ্টিসিয়া কোন কোন ক্ষেত্রে ব্যবহার হয়ে থাকে। লক্ষণভেদে ১) জেলসিমিয়াম ২) ব্রাইয়োনিয়া ৩) আর্সেনিক ৪) সারকোল্যাকটিক এসিড ৫) ইউপ্যাটোরিয়াম-পার্ফোলেটিয়াম ৬) নেট্রাম সালফ ৭) এস্টম টার্ট ৮) ইপিকাফ ৯) হাড্রসিয়ালিক এসিড ১০) মেলিলোটাস ও ১১) ড্রমেরা উল্লেখযোগ্য।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট