চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

নিশ্চিত হোক জ্বালানির সুষ্ঠু ব্যবহার

নতুন গ্যাস কূপের সন্ধান

১১ মার্চ, ২০২০ | ২:১১ পূর্বাহ্ণ

জ¦ালানি বিষয়ে নানা দুঃসংবাদের মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে নতুন গ্যাসকূপের সন্ধান লাভের বিষয়টি আশা জাগানিয়া আনন্দের খবর নিশ্চয়ই। গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, ৩ মার্চ রাত ৮টার দিকে গ্যাস পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে রাষ্ট্রীয় তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি (বাপেক্স)। নবীনগরের লাউর ফতেহপুর ইউনিয়নের হাজীপুর গ্রামে অবস্থিত নতুন এ কূপটি শ্রীকাইল গ্যাস ফিল্ডের অন্তর্ভুক্ত। শ্রীকাইল পূর্ব-১ নামে ওই কূপ থেকে প্রতিদিন ১২ থেকে ১৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন সম্ভব হবে। গ্যাস উত্তোলনের জন্য তিন হাজার মিটারের বেশি গভীর কূপ খনন করা হয়েছে। ওই এলাকার কাছাকাছি শ্রীকাইলে একটি প্রসেসিং প্ল্যান্ট রয়েছে। একটি ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ পাইপলাইন স্থাপন করত পারলে সেখান থেকে গ্যাস সরবরাহ করা যাবে। আমাদের বিশ^াস, নবআবিস্কৃত গ্যাসকূপ থেকে পুরোদমে গ্যাস উত্তোলন করে জাতীয় গ্রিডে যোগ করা গেলে দেশে গ্যাসের সংকট অনেকটাই কমে যাবে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি (বাপেক্স) নবীনগর উপজেলার হাজীপুর এলাকায় গত বছরের ২৮ অক্টোবর এই স্থানে খনন কাজ শুরু করে। কূপ খননকাজ শেষ হয় গত ৩১ জানুয়ারি। এ কূপ খননে ব্যয় ধরা হয়েছে ৭০ কোটি টাকা। ৩রা ফেব্রুয়ারি কাজ শেষ করে নতুন এই গ্যাসেক্ষেত্র আবিষ্কার করেছে। গত ৩ মার্চ রাতে এই কূপ থেকে গ্যাসের সঙ্গে পানি ওঠা শুরু করে। তবে ৪ মার্চ কূপ থেকে পানি ওঠা বন্ধ হলে গ্যাস পাওয়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয় বাপেক্স। খনি থেকে গ্যাস উত্তোলনের পর প্রক্রিয়াজাত (প্রসেস প্ল্যান্ট) করে তা পাইপলাইনে সরবরাহ করা হয়। শ্রীকাইলে প্রসেস প্ল্যান্ট থাকায় নতুন কূপ থেকে উত্তোলন করা গ্যাসের জন্য নতুন করে আর প্ল্যান্ট নির্মাণের দরকার হবে না। মাটির নিচে প্রায় ৩ হাজার ৮০ মিটার গভীরে গ্যাসের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। গ্যাসের মজুত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। এই কূপ থেকে দৈনিক ১ কোটি ২০ লাখ থেকে দেড় কোটি ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা সম্ভব হবে। সংশ্লিষ্টদের ধারণা, এই কূপ থেকে প্রায় ১২ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা সম্ভব হবে। এর আগে ২০০৪ খ্রিস্টাব্দে বাপেক্স কুমিল্লার মুরাদনগরের শ্রীকাইলে নতুন একটি গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার করে। বর্তমানে সেখান থেকে সফলভাবে গ্যাস উত্তোলন করছে বাপেক্স। সেখান থেকে নতুন কূপটির অবস্থান ছয় কিলোমিটার দূরে। এই গ্যাস ফিল্ডে বর্তমানে গ্যাসের প্রেসার রয়েছে ১৯ পিএসআই।
এখনো দেশের অধিকাংশ শিল্প-কারখানা গ্যাসচালিত। বছরকয়েক ধরে গ্যাস সংকটের কারণে বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার খবর ছাপছে দৈনিকগুলো। অভিযোগ আছে, উদ্যোক্তারা ব্যাংক থেকে হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে শিল্প-কারখানা স্থাপন করলেও নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস-বিদ্যুতের সংযোগ পান না। অনেক চালু কারখানাও নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস-বিদ্যুতের সংকটের কারণে বন্ধ হয়ে যাওয়োর উপক্রম হয়েছে। তাছাড়া বহুল ব্যবহারে দ্রুত গ্যাস নিঃশেষ হয়ে পড়ার আশঙ্কাও যখন ঘনিভূত হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে নতুন গ্যাসকূপ আবিস্কারের খবরটি শিল্পমালিকদের মধ্যে নিশ্চয়ই নতুন আশার সঞ্চার করবে। সুপরিকল্পনায় এই গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ করা গেলে জাতীয় অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। জানা গেছে, নিজেদের গ্যাস সারা দেশে সরবরাহের আগে নবীনগরের প্রতিটি ঘরে গ্যাস পৌঁছানোর দাবি জানিয়েছে সেখানকার অধিবাসীরা। তারা এই গ্যাসকূপের নামকরণ ‘নবীনগর গ্যাসকূপ’ করারও দাবি তুলেছেন। ন্যায্যতা বিবেচনায় তাদের দাবিও াামলে নেয়া দরকার। কোনো ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতি যেনো সেখানে ছোবল না দিতে পারে, সেদিকে নজর রাখতে হবে। একইসঙ্গে ক্রমবর্ধমান চাহিদার বিষয়টি মাথায় রেখে আরো গ্যাসক্ষেত্র আবিস্কারেও মনোযোগ দিতে হবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট