চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

জোরদার করুন মশকনিধন কার্যক্রম চট্টগ্রামে মশার উৎপাত

১০ মার্চ, ২০২০ | ২:৪১ পূর্বাহ্ণ

নগরীতে মশার উৎপাত চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। অবশ্য রাজধানী ঢাকার ন্যায় বন্দরনগরী চট্টগ্রামেও সারাবছরই মশার উৎপাত থাকে। এটি কোন নতুন কথা নয়। মশার আক্রমণ চলে শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা, বসন্ত সব ঋতুতেই। তবে সময়ে-সময়ান্তরে মশার দৌরাত্ম্যের ঊনিশ-বিশ হতে দেখা যায়। তাও আবার অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক কারণে। সিটি কর্পোরেশনের মশক নিধন অভিযানেও মাঝে মাঝে মশার দাপট কিছুটা হ্রাস পায়। তবে চসিকের চেয়ে প্রাকৃতিক অভিযানেই বেশি মশা ধ্বংস হয়। এখন মশার উৎপাতে নগরবাসী অতিষ্ঠ। কিন্তু এ বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টি ও মশক নিধনে চসিকের জোরালো কর্মসূচি দৃষ্টিগোচর হচ্ছে না। এতে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা বিঘিœত হওয়ার পাশাপাশি মশাবাহিত নানা রোগের বিস্তারের সুযোগ তৈরি হচ্ছে। এমন চিত্র মোটেও নাগরিককাম্য নয়।
একটি সহযোগী দৈনিকে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত এক খবরে দেখা যাচ্ছে, সিটি করপোরেশনের উদাসীনতায় নগরীর অনেক স্থানে নালা-নর্দমা ও বদ্ধ জলাশয় পরিণত হয়েছে মশার নিরাপদ প্রজননক্ষেত্রে। মহানগরীর ৪১টি ওয়ার্ডের মধ্যে অধিকাংশই মশককবলিত। রাতে ঝাঁকে ঝাঁকে মশার বেপরোয়া আক্রমণে নগরবাসী অতিষ্ঠ। দিনের বেলাতেও মশার দল আক্রমণ করছে মানুষকে। কয়েল জ্বালিয়ে, নানা ধরনের কীটনাশক ঘরের কোণায় কোণায় ছিটিয়েও পরিত্রাণ মিলছে না মশার আক্রমণ থেকে। ঘরের বাইরে বদ্ধ ডোবা-জলাশয়, নালা-নর্দমা ও ভরাট হয়ে যাওয়া খালের স্থানে স্থানে মশক প্রজননের যেন মহোৎসব চলছে চট্টগ্রাম মহানগরীতে। যদিও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্ন বিভাগের দাবি সীমিত আকারে হলেও নিয়মিত ওষুধ ছিটানো হচ্ছে। তবে প্রায় ৬০ লাখ মানুষের এই মহানগরীর জনবসতিগুলোর আশপাশে দীর্ঘদিন ধরে মশার ওষুধ ছিটানো কার্যক্রম নেই বলে প্রায় প্রতিটি ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের অভিযোগ আছে। প্রসঙ্গত, চলতি বছর চট্টগ্রাম মহানগরীতে মশক নিধন কার্যক্রমের জন্যে ৬ কোটি টাকা বরাদ্দ আছে। তবে এ ক্ষেত্রে কোনো ধরনের দৃশ্যমান তৎপরতা নেই বলে অভিযোগ আছে । অথচ অর্থবছর শেষ হতে আর দুই-আড়াই মাস বাকি আছে। ঘরে ঘরে মশানাশক কৌটার স্প্রে পৌঁছে দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হলেও, সবাই তা পায়নি বলেও অভিযোগ রয়েছে। যদিও অভিযোগগুলোর সত্যতা নিয়ে চসিকের পরিচ্ছন্ন বিভাগে আপত্তি আছে, তবে ফগার, স্প্রে মেশিনের স্বল্পতা এবং লার্ভিসাইট ও এডাল্টিসাইটের পর্যাপ্ত মজুত না থাকার কথা স্বীকার করা হয়েছে। জানা গেছে, ওষুধ ও আনুষঙ্গিক সরঞ্জাম কেনার জন্য সম্প্রতি দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। এটা নিশ্চয়ই সুখবর, তবে সময় ক্ষেপণের সুযোগ নেই। এমনিতে নগরবাসী করোরনাভাইরাস আতঙ্কে আছে, তার সাথে ডেঙ্গুসহ বিভিন্ন মশাবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটলে পরিস্থিতি জটিল আকার ধারন করবে।
প্রসঙ্গত, আগে মশক নিয়ন্ত্রণে প্রতি বছর নগরীর বিভিন্ন বাসা-বাড়িতে ‘এডাল্টটিসাইট’ নামে পূর্ণাঙ্গ মশা ধ্বংসকারী ওষুধ ছিটানো হত। বর্ষা মৌসুম ছাড়া বছরের অন্য সময়ে নালা-নর্দমায় ‘লাইট ডিজেল এবং লিমব্যাক’ নামক মশার ডিম ধ্বংসকারী তেল ছিটানোর ক্রাশ প্রোগ্রামও ছিল। নগরীর প্রতিটি ওয়ার্ডের জন্য প্রতি মাসে ৪শ’ লিটার করে মশার ডিম ধ্বংসকারী তেল বরাদ্দ থাকতো। আর চসিকের পরিচ্ছন্ন কর্মীরাই তা সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের নালা-নর্দমায় নিয়মিত ছিটাতেন। মশা নিয়ন্ত্রণের এসব কার্যক্রম থেকে যদিও জনকাক্সিক্ষত ফল আসতো না। তবে, মশার উৎপাত কিছুটা হলেও কমতো। এখন সেসব কার্যক্রম পর্যাপ্ত পরিমাণে না থাকায় নগরীতে মশার উৎপাত অসহনীয় পর্যায়ে চলে গেছে।
আমরা মনে করি, মশার উৎপাত বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে চসিকের উচিত হবে মশানিধনে সুচিন্তিত কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়নে মনোযোগ দেয়া। মশা বংশ বিস্তারের সুযোগ নেয় যেসব স্থানে, মশক নিধন-কর্মীদের সেসব স্থানে পাঠিয়ে সফল অভিযান চালনার পাশাপাশি শহরপরিচ্ছন্ন অভিযানও জোরদার করতে হবে। একই সঙ্গে ম্যালেরিয়া এবং ডেঙ্গুজ্বর বিষয়ে ব্যাপক প্রচার চালানোর মাধ্যমে নগরবাসীকে সচেতন করার কর্মসূচিও হাতে নিতে হবে। মনে রাখতে হবে, মশা ক্ষুদ্র পতঙ্গ হলেও একে হেলাফেলা করার সুযোগ নেই। মশার কামড় থেকে ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, এনসেফেলাইটিস, চিকুনগুনিয়া, জিকা ভাইরাস সংক্রমণসহ নানা জটিল রোগ হয়ে থাকে। তাই মশক নিধনের ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের আন্তরিকতা ও দায়িত্বশীলতার বিকল্প হতে পারে না। নগরীর নালা-নর্দমা, ঝোপঝাড়সহ সাধারণত যেসব জায়গায় মশার প্রজনন ও বংশ বৃদ্ধি হয়, সে সব স্থান পরিস্কার করার পাশাপাশি ওষুধ ছিটাতে হবে প্রতিটি স্থানেই। মশার বংশবিস্তার রোধে নাগরিকদায়িত্ব সম্পর্কেও প্রচারণা চালাতে হবে। চসিক কর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ জনগণও যাতে নালা-নর্দমা, বাড়ির আনাচে-কানাচে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখে সে ধরনের সচেতনতা তৈরি করতে হবে। কারণ এ বিষয়ে গণসচেতনতা সৃষ্টি করতে না পারলে কোন পদক্ষেপই কার্যকর ফল দেবে না। আর চসিকের পাশাপাশি এ ব্যাপারে দায়িত্ব পালন করতে হবে সচেতন ব্যাক্তিবর্গ এবং সামাজিক নানা সংস্থাকেও।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট