চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের বিস্তার প্রতিরোধ ও প্রতিকারে চাই সর্বাত্মক প্রস্তুতি

৯ মার্চ, ২০২০ | ৩:৪২ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশের সব প্রতিবেশি দেশসহ বিশ্বের ১০৩টি দেশ ও অঞ্চলে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) ছড়িয়ে পড়ার খবর উদ্বেগকর। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের খবর বলছে, করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রতিনিয়ত বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। প্রাণঘাতী হয়ে ওঠা এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গতকাল পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে তিন হাজার ৬০০ জনে। অপরদিকে ৬০ হাজার ১৯০ জন চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। বিশ্বে মোট আক্রান্তের সংখ্যা এক লাখ ৬ হাজার ১৯৩ জন। বিশ^ব্যাপী মহাবিস্তারের কারণে চীনের প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবকে বৈশ্বিক জরুরি অবস্থা হিসেবে ঘোষণা করেছে ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন বা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। এক জরুরী বৈঠকের পর এই ঘোষণা দেয় ডব্লিউএইচও। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উদ্বেগের বিষয় হলো, নিয়ন্ত্রণে জোরালো পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হলে খুব দ্রুত সারাবিশ^কে গ্রাস করবে ভাইরাসটি। যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞরা বলছেন, চীনের হুবেই প্রদেশের উহানে সৃষ্ট প্রাণঘাতী এ ভাইরাসটির বিস্তার প্রতিরোধে ব্যর্থ হলে ছড়িয়ে পড়ার পর পরবর্তী ১৮ মাসের মধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে সাড়ে ছয় কোটি মানুষ উজাড় হয়ে যাবে। বাংলাদেশও নতুন এই ভাইরাসের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। সংগতকারণে এ বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক পদক্ষেপ গ্রহণের বিকল্প নেই।
সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা (হু) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, চীনের বাইরে ১৭ গুণ দ্রুতগতিতে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে। প্রাণঘাতী এই ভাইরাসে শুধুমাত্র চীনের মূল ভূখ-েই আক্রান্ত হয়েছেন ৮০ হাজার ৬৯৬ জন। আর মারা গেছেন ৩ হাজার ৯৭ জন। চীনের বাইরে সবচেয়ে বেশি আক্রান্তের সংখ্যা দক্ষিণ কোরিয়ায় এবং সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা গেছেন ইতালিতে। দক্ষিণ কোরিয়ায় এখন পর্যন্ত ৭ হাজার ১৩৪ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন এবং মারা গেছেন ৫০ জন। ইরানে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৫ হাজার ৮২৩ এবং মারা গেছে ১৪৫ জন। অপরদিকে ইতালিতে আক্রান্তের সংখ্যা ৫ হাজার ৮৮৩ এবং মৃত্যু হয়েছে ২৩৩ জনের। এছাড়া ফ্রান্স, জার্মানি, স্পেন, সিঙ্গাপুর, কুয়েত, বাহরাইন, যুক্তরাজ্যে, মালয়েশিয়া, কানাডা, সুইজারল্যান্ডসহ ১০৩টি দেশ ও অঞ্চলে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারত ও নেপালেও করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীর সন্ধান মিলেছে। উল্লেখ্য, ২০১৯ খ্রিস্টাব্দের ৩১ ডিসেম্বর চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ শনাক্ত করা হয়। নিউমোনিয়ার মত লক্ষণ নিয়ে নতুন এ রোগ ছড়াতে দেখে চীনা কর্তৃপক্ষ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে সতর্ক করে। এরপর ১১ জানুয়ারি প্রথম একজনের মৃত্যু হয়। ঠিক কীভাবে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরু হয়েছিল সে বিষয়ে এখনও নিশ্চিত নন বিশেষজ্ঞরা। তবে ধারণা করা হচ্ছে, উহানের একটি সি ফুড মার্কেটে কোনো প্রাণী থেকে এ ভাইরাস প্রথম মানুষের দেহে আসে। তারপর মানুষ থেকে ছড়াতে থাকে মানুষে। করোনাভাইরাস মূলত শ্বাসতন্ত্রে সংক্রমণ ঘটায়। এর লক্ষণ শুরু হয় জ্বর দিয়ে, সঙ্গে থাকতে পারে সর্দি, শুকনো কাশি, মাথাব্যথা, গলাব্যথা ও শরীর ব্যথা। সপ্তাহখানেকের মধ্যে দেখা দিতে পারে শ্বাসকষ্ট। উপসর্গগুলো হয় অনেকটা নিউমোনিয়ার মত। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো হলে এ রোগ কিছুদিন পর এমনিতেই সেরে যেতে পারে। তবে ডায়াবেটিস, কিডনি, হৃদযন্ত্র বা ফুসফুসের পুরোনো রোগীদের ক্ষেত্রে ডেকে আনতে পারে মৃত্যু। মানবমৃত্যুর পাশাপাশি ভাইরাসটি বিশ^অর্থনীতিতেও চরম নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) বলেছে, করোনার কারণে বৈশ্বিক অর্থনীতির ৭ হাজার ৭০০ কোটি থেকে ৩৪ হাজার ৭০০ কোটি ডলারের ক্ষতি হতে পারে। অর্থনৈতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান অক্সফোর্ড ইকোনমিকস তাদের পূর্বাভাসে বলেছে, করোনা ভাইরাস এশিয়ার বাইরে ছড়িয়ে পড়লে বিশ্বঅর্থনীতির ক্ষতি হবে ১ লাখ ১০ হাজার কোটি (১ দশমিক ১ ট্রিলিয়ন) ডলারের, যা বিশ্বের মোট অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ১ দশমিক ৩ শতাংশ।
এখনও করোনাভাইরাসমুক্ত থাকলেও উচ্চঝুঁকির ২৫টি দেশের মধ্যে ইতোমধ্যেই নাম চলে এসেছে বাংলাদেশের। সঙ্গতকারণেই দেশের সাধারণ মানুষ শঙ্কিত হয়ে পড়ছে। এ আতঙ্ক দূর করার উদ্যোগ নিতে হবে। নানামাত্রিক প্রচেষ্টার পরও করোনাভাইরাসের কোনো টিকা বা ভ্যাকসিন এখনো তৈরি হয়নি। ফলে এমন কোনো চিকিৎসা এখনও মানুষের জানা নেই, যা এ রোগ ঠেকাতে পারে। এ অবস্থায় সতর্কতাই রোগটি থেকে নিরাপদ থাকার একমাত্র উপায়। এ ব্যাপারে সরকারের সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক পদক্ষেপই কাম্য। একইসঙ্গে করোনাভাইরাসের বৈশি^ক বিস্তারের কারণে অর্থনীতি মন্দার ধাক্কা সামলানো এবং তা কাটিয়ে ওঠার ব্যাপারেও বাংলাদেশকে প্রস্তুত ও দৃঢ় থাকতে হবে। তবে সবকিছুর আগে চাই ভাইরাসটির প্রতিরোধ ও প্রতিকারে সর্বাত্মক প্রস্তুতি এবং পরিস্থিতির মোকাবিলায় সর্বোচ্চ সক্ষমতা।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট