চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

ভারতের মালদা মুসলিম ইনস্টিটিউট

আহমদুল ইসলাম চৌধুরী

৯ মার্চ, ২০২০ | ৩:৪২ পূর্বাহ্ণ

ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য। এ রাজ্যের কলকাতা ও মালদা এ দুই শহরে মুসলিম ইনস্টিটিউট রযেছে। মালদা শহরের প্রাণকেন্দ্রে ইংরেজ বাজার। সাবেক নাম ইঙ্গলেজাবাদ। এখানে সেই ব্রিটিশ আমলে ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে মুসলিম ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা লাভ করে।
১৮১৩ খ্রিস্টাব্দের আগে মালদা জেলার কোন অস্তিত্ব ছিল না। পূর্ণিয়া, দিনাজপুর ও রাজশাহী জেলার কিছু কিছু এলাকা জেলা সদরের বহুদূরে অবস্থিত হওয়ার কারণে অরাজকতা বৃদ্ধি পায়। ফলে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী আইন শৃংখলা সুন্দর থাকার জন্য পূর্ণিয়া দিনাজপুর ও রাজশাহী জেলা থেকে কিছু আলাদা কেটে নিয়ে ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিল মাসে মালদা নামে একটি জেলা স্থাপন করে।
বাংলার প্রাচীন রাজধানী গৌঢ় ও পান্ডুয়ার মধ্যবর্তী স্থানে এ মালদা শহরের অবস্থান। শহরের প্রাণকেন্দ্রে ইংরেজ বাজারের কেন্দ্রীয় মসজিদ সংলগ্ন দুইটি দালান সগর্বে দাঁড়িয়ে আছে এ মুসলিম ইনস্টিটিউট। দ্বিতল বিশিষ্ট পুরানো ভবনটি সেই ব্রিটিশ ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে সমাজহিতৈষী ছালেহা খাতুন চৌধুরাণীর সন্তান-সন্ততির বদান্যতায় নির্মিত। ঢুকতেই বারান্দা পেরিয়ে গোলাকৃতির হল রুম। হলের দুই দিকে একাধিক কক্ষ রয়েছে। হলের পশ্চিমে দেয়ালে ছালেহা খাতুন চৌধুরাণী মেমোরিয়াল হল মালদা ১৯৩৮ ইংরেজি ভাষায় পাথর লাগানো আছে। ইহা আমাদের জন্য শিক্ষণীয়। সেই ব্রিটিশ আমলে সন্তানেরা মায়ের স্মৃতিতে মানবকল্যাণ এ দালান নির্মাণে অবদান রাখেন। দালানের দক্ষিণ সংলগ্ন প্রায় ৭তলা বিশিষ্ট প্রকান্ড নতুন দালান নির্মাণ কাজ সমাপ্তির পথে। এখনও তারা পুরাতন ভবনে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। নতুন ভবনে তাদের শিক্ষামূলক নানান কর্মকা- বাস্তবায়ন করবে। তৎমধ্যে স্বাস্থ্য সেবা, শিক্ষা ইত্যাদি। মালদা মুসলিম ইনস্টিটিউটে লাইব্রেরীটি খুবই সমৃদ্ধ। এখানে অনেক দুর্লভ গ্রন্থ সংরক্ষিত রয়েছে। এ মুসলিম ইনস্টিটিউটের সাথে ভারতের তথা এ অঞ্চলের বিখ্যাত ব্যক্তি জড়িত ছিলেন। মুন্সি এলাহী বক্স, মুন্সি গোলাম হোসেন, খান বাহাদুর কাদের বক্স, খান সাহেব আবদুল আজিজ খান, খান সাহেব আবিদ আলী খান, খান সাহেব আবদুল গণি, ডা. কাজী আজহার উদ্দিন আহমদ, নুর বক্স মোক্তার প্রমুখ স্বনামধন্য ব্যক্তিবর্গ।
বস্তুতঃ ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে ৯ মার্চ মালদা শহরের বিশিষ্ট ১১ জন মুসলিম ভদ্রলোক সমাজের জন্য একটি পাঠাগার স্থাপন করা জরুরী মনে করে এগিয়ে আসে। সে হতে ১/২/৫ টাকা কালেকশনের মাধ্যমে মুসলিম লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠিত হয়। ২১ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। পরের বছর ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের জুলাই মাসে এ কেন্দ্রীয় মসজিদ সংলগ্ন একটি ঘরভাড়া নিয়ে বইপত্র সরঞ্জামাদি এখানে সরিয়ে আনা হয়। পরবর্তীতে এখানে একটি নিজস্ব জমিও গৃহ নির্মাণে প্রয়াস চলছে।
আগেও পর পর ২ বার আমার মালদা যাওয়া হয়েছিল। যেহেতু মালদার নিকটে গৌড়ে শায়িত রয়েছেন হযরত ছৈয়দ আবদুর রহমান সিদ্দিকী (রহ.) ও তাঁর বংশধর। পবিত্র আরব ভূমি থেকে ইসলাম প্রচারের জন্য এখানে আসেন। আমি তাঁর বংশধর বিধায় গৌড়ে পান্ডুয়া যেতে মন থেকে তাড়িত হয়। ফলে গত ৩০ জানুয়ারি ২০২০ খ্রিস্টাব্দে বৃহস্পতিবার ঢাকা থেকে আকাশপথে কলকাতা এবং ঐ দিন দুপুরের ট্রেনে হাওড়া থেকে মালদা যাওয়া হয়। তাদের আমার সম্বন্ধে ধারণা থাকায় ছালেহা খাতুন চৌধুরানী মেমোরিয়াল হলে আমাকে সংবর্ধনা তথা সম্মাননার ব্যবস্থা করেন ১ ফেব্রুয়ারি শনিবার সন্ধ্যায়। ইনস্টিটিউটের সভাপতি আবদুর রকিবের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন সহ-সভাপতি একরামুল হক, সেক্রেটারি ববি আহমদসহ কমিটির অন্যান্য সদস্যবৃন্দ এবং স্থানীয় কতেক ব্যক্তিবর্গ।
কলকাতা থেকে প্রায় ৩৩০ কি.মি দূরত্বে মালদা। চাপাইনবাবগঞ্জ জেলার ছোট সোনা মসজিদ স্থল বন্দর থেকে এ শহরের অবস্থান। এখানেও গত কয়েকদিন আগে বইমেলা হয়ে গেল। গৌড় পান্ডুয়ার কারণে মালদা গর্ববোধ করতে পারে। যেহেতু এখানে বিশ^খ্যাত মহান ওলিগণ শায়িত। যেমন-দিল্লি হযরত খাজা নেজাম উদ্দিন (রহ.)’র অন্যতম খলিফা হযরত আঁখি সিরাজ উদ্দিন (রহ.), তাঁর খলিফা হযরত শেখ আলাউল হক পা-ভী, তাঁর মহান পুত্র হযরত শেখ নুর কুতবুল আলমসহ মহান ওলিগণ শায়িত। তবে সর্বসাধারণের কাছে আমের জন্য মালদার পরিচিতি রয়েছে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট