চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

প্রসঙ্গ করোনাভাইরাসের বিস্তার ও মানব-আচরণ

ডা. মোহাম্মদ ওমর ফারুক

৬ মার্চ, ২০২০ | ১:২৭ পূর্বাহ্ণ

এ জমিন মহান আরশে আজিমের অধিকর্তা, মহান শক্তিধর, আসমান জমিনের একচ্ছত্র মালিক আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত এর। এ জমিনের প্রতিটি অণু-পরমাণু, বৃক্ষগুল্ম, মৎস্যকূল, প্রাণীকূল-সবই তাদের মালিকের প্রশংসায় অবিরত নিয়োজিত। আমরা প্রাণীকূলের ভাষা বুঝি না-বৃক্ষরাজির ভাষা বুঝি না, অথচ কতই না কৃতজ্ঞতার আবাহনে নিরবচ্ছিন্নভাবে প্রার্থনা করে যাচ্ছে সর্বশক্তিমান আল্লাহ-মালিকের। প্রাণীকূল থেকে জন্ম নিলে সেটি সংশ্লিষ্ট প্রাণী হিসেবেই পরিচিতি লাভ করে। কিন্তু মানুষ জন্মের পর তা পরিপূর্ণ মানুষ হয়ে উঠে না-তাকে মানুষ করতে হয়-এটাই সৃষ্টির ব্যতিক্রমী লীলা-খেলা।

এ জমিন যাঁর-আইন চলবে তাঁর-এ অমোঘ সত্যকে বুকে ধারণ করে যুগে যুগে নবী-পয়গম্বরগণ দুনিয়াতে এসেছিলেন বিপদগামী মানুষদের আলোর দিশা দেখানোর জন্যে। কিন্তু পরক্ষণেই সেই সৃষ্টির সেরা জীব মানুষগুলো সবকিছুই যেন নিমিষেই ভুলে যায়। ‘এ মানুষগুলো কি দেখে না যে, আমি তাদের একটি (ক্ষুদ্র) শুক্রকীট থেকে পয়দা করেছি, অথচ (ক্ষুদ্র কীটের) সে (ক্ষুদ্র মানুষটিই একদিন আমার সৃষ্টির ব্যাপারে) খোলাখুলি বিতন্ডাকারী হয়ে পড়লো’- সূরা ইয়াসিন আয়াত- ৭৭।

সম্প্রতি বিশ্বের শক্তিধর পারমাণবিক রাষ্ট্র চীনে মরণঘাতি করোনাভাইরাসের আবির্ভাব ঘটেছে। এখন বিশে^র ৮০টি দেশেই তা ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকে এটাকে আসমানী গজব হিসেবেই বিবেচনা করছেন। এর পেছনে নানাবিধ ঘটনা ও যুক্তিও আছে অবশ্য। চীনে গত কয়েক যুগ ধরে মুসলিম মহিলাদের ইজ্জত-আব্রুর প্রতীক হিজাবের উপর নিষেধাজ্ঞা আর উইঘুর প্রদেশের মুসলিমদের উপর বর্বর নির্যাতন চলছে।
উইঘুরদের ধর্মাচার চর্চায় আছে কঠোর নিষেধাজ্ঞা। গুপ্তহত্যা আর পাশবিক নির্যাতন তো চলছেই। গণতন্ত্রকামীদের ওপরও নির্যাতন-নিপীড়ন চলছে সেখানে। ফলে করোনাভাইরাসকে আল্লাহর গজব বিবেচনা করার যথেষ্ট যুক্তি আছে। অতীতেও বিশে^র বিভিন্ন সম্প্রদায়েরর ওপর আসমানী গজব নাজিল হয়েছিল। এখন হুবেই প্রদেশের উহান শহরের রাজপথ ফাঁকা। স্বামী স্ত্রীকে ছুঁতে পারছে না- এ ভেবে যে, না জানি ভয়ংকর ভাইরাসটি পরস্পরের কাছে সংক্রমিত হয়ে যায়। এ ভাইরাসটি এ পর্যন্ত ৮০ দেশ ও অঞ্চলে সংক্রমিত হয়েছে। চীনের বাইরে সবচেয়ে বেশি মারা গেছে ইরানে। চীনে এ পর্যন্ত মৃত্যুর সংখ্যা ৩ হাজার ছাড়িয়েছে। কোভিড-১৯ নামক ভাইরাসটি ছড়িয়েছে চীনের বাইরের দেশগুলোতে। দক্ষিণ কোরিয়ায় করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৪ হাজার ছাড়িয়েছে। বিভিন্ন দেশে এ সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে।
পৃথিবী সৃষ্টির পর থেকে যতগুলো জাতি (আদ, সামুদ, লুত, নমরুদ, ফেরাউন) আল্লাহর নাফরমানী করেছে তাদের পরিণতি হয়েছিল অত্যন্ত ভয়াবহ। দুঃখজনক হলেও সত্যি, আমরা এ থেকে কোন শিক্ষা নিই না। একবিংশ শতাব্দির এ সময়ে করোনাভাইরাস এখন টক অব দ্যা ওয়ার্ল্ড।
এ ভাইরাসের প্রভাবে ভাটা পড়েছে পর্যটন, অর্থনীতি, শিক্ষানীতি-সবক্ষেত্রে পুরো বিশ্বব্যাপী। চীন পারমাণবিক শক্তিধর দেশ হলেও কোন পারমাণবিক বোমা দিয়ে ভাইরাসটি ধ্বংস করতে পারছে না। কারণ এ সংক্রমণ তো তাদের কৃতকর্মেরই প্রতিফলন, আসমানী আজাব। এই ভাইরাস শুধু মানবমৃত্যু নয়, অর্থনীতিসহ সবকিছুকেই ধংসস করে দিচ্ছে।

আল্লাহ কখনো কাউকে ছেড়ে দেয় না-শুধু ছাড় দেয়। ‘তারা যেন এটা কখনো মনে না করে, আমি যে তাদের ঢিল দিয়ে রেখেছি এটা তাদের জন্যেই কল্যাণকর হবে, (আসলে) আমি তো তাদের অবকাশ দিচ্ছি যেন তারা তাদের গুনাহ (এর বোঝা) আরো বাড়িয়ে নিতে পারে, তাদের জন্যেই রয়েছে লাঞ্চনাদায়ক আজাব। সূরা ইমরান আয়াত ১৭৮। পবিত্র কাবাঘর আল্লাহতায়ালা বানিয়েছিলেন গোটা মানবজাতির জন্যে, শুধুমাত্র মুসলিমদের জন্যে নয়; অথচ এই কাবাঘর তাওয়াফ করার জন্যে যে গুণাবলী একজন মানুষের থাকা দরকার, তা বিশ্বের অধিকাংশ মানুষের কাছেই অনুপস্থিত-‘নিশ্চয়ই গোটা মানবজাতির জন্যেই সর্বপ্রথম যে ঘরটি (বানিয়ে) রাখা হয়েছিল তা ছিল বাক্কায় (মক্কা নগরীতে), এ ঘর হচ্ছে মানবকূলের জন্যে কল্যাণ ও হেদায়াত’। সূরা আল্-ইমরান আয়াত-৯৬। ‘(স্মরণ করো) যখন তারা তোমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছিলো যে তারা তোমাকে বন্দী করবে অথবা তোমাকে হত্যা করবে কিংবা তোমাকে (আপন ভূমি থেকে) নির্বাসিত করে দেবে; তারা তোমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছিল, আল্লাহতায়ালাও (তোমাকে উদ্ধারের) কৌশল চালিয়ে যাচ্ছেন; আল্লাহতায়ালা হচ্ছেন সর্বোৎকৃষ্ঠ কৌশলী। যারা মানবতারর বিরুদ্ধে অবস্থান নেবে সেসব শক্তিধর রাষ্ট্রগুলোও আল্লাহর আজাব থেকে রক্ষা পাবে না। রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘যখন দেখতে পাও যে, আল্লাহর কোনো বান্দাকে সে যা পছন্দ করে তা দিয়ে যাচ্ছেন, অথচ সে আল্লাহর নাফরমানী অব্যাহত রেখেছে, তখন বুঝতে হবে যে, তাকে সময় দেয়া হচ্ছে এবং তার উপর আজাব নাযিল হওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র’।
করোনাভাইরাস নামক ভয়ংকর প্রাণঘাতি ভাইরাস এখন পুরো বিশ্বটাকেই টালমাটাল করে দিচ্ছে। বিশ্ব নেতারা খেই হারিয়ে ফেলছে আর ওদিকে মজুলমেরা আর্তনাদ করছে অবিরত, ‘তোমাদের এ কি হয়েছে, তোমারা আল্লাহর পথে সেসব অসহায় নর-নারী ও (দুস্থ) শিশু সন্তানদের (বাঁচাবার) জন্যেই লড়াই করো না, যারা (এ বলে) ফরিয়াদ করছে, হে আমাদের রব, জালেমদের এ জনপদ থেকে তুমি আমাদের বের করে নাও, অতপর তুমি আমাদের জন্যে তোমার কাছ থেকে একজন অভিভাবক বানিয়ে দাও, তোমার কাছ থেকে আমাদের জন্যে একজন সাহায্যকারী বানিয়ে দাও’- সূরা আন নিসা আয়াত- ৭৫।

ডা. মোহাম্মদ ওমর ফারুক সভাপতি, রাউজান ক্লাব; জুনিয়র কনসালটেন্ট (ইএনটি), জেনারেল হাসপাতাল, রাঙ্গামাটি।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট