চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

দায়ীদের চিহ্নিত করুন পুলিশবক্সে বিস্ফোরণ

৩ মার্চ, ২০২০ | ১:১৯ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামে শুক্রবার রাতে পুলিশবক্সে বিস্ফোরণ এবং দুই পুলিশসদস্য ও এক শিশুসহ ৫ জন আহত হওয়ার বিষয়টি উদ্বেগকর। পূর্বকোণসহ বিভিন্ন দৈনিকে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, ২ নম্বর গেট এলাকায় একটি পুলিশবক্সে রাত ১০টার দিকে এ হামলা চালানো হয়। দুই পুলিশসদস্য তখন বক্সে ছিলেন। হঠাৎ বিকট শব্দে বিস্ফোরণে বক্সটিতে আগুন ধরে যায়। ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক। লোকজন ভয়ে দিকবিদিক ছোটাছুটি শুরু করে। পুলিশ বলছে, এটা পরিকল্পিত হামলা। সেখান থেকে বিস্ফোরকের আলামত পাওয়া গেছে। তবে কারা, কেন, কীভাবে এ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটিয়েছে তা স্পষ্ট নয়। জানা গেছে, নগরীর ২ নম্বর গেট থেকে বহদ্দারহাট, ২ নম্বর গেট থেকে বায়েজিদ, ২ নম্বর গেট থেকে জিইসি মোড় ও ২ নম্বর গেট প্রবর্তক মোড়ের সবকটি সিসি ক্যামেরার ফুটেজ যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। ক্লু উদ্ধারের জন্য জোর তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে পুলিশের একাধিক টিম। বিস্ফোরণের পর নগরীর পুলিশি স্থাপনাগুলোতে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি ও নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। হয়তো কোনো ক্লু পাওয়া যাবে। তবে ঘটনাটিকে হালকাভাবে নেওয়ার অবকাশ নেই। কারণ ঘটনাটি জঙ্গিবাদী কোনো গোষ্ঠীর টেস্টকেসও হতে পারে।

গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, প্রথমে শর্টসার্কিট থেকে বিস্ফোরণ হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছিল। তবে বিস্ফোরকের আলামত পরীক্ষা করে এটাকে নাশকতা বলেই চিহ্নিত করা হয়। ধারণা করা হচ্ছে, দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের অগোচরে কেউ হয়তো বিস্ফোরক রেখে গিয়েছিল ট্রাফিক বক্সে। এ হামলায় আহত হয়েছেন একজন ট্রাফিক সার্জেন্ট, একজন পুলিশের সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই), স্থানীয় দুই যুবক এবং ১০ বছর এক শিশু। অনেকের ধারণা এ ঘটনার পেছনে বিভিন্ন জঙ্গিবাদী গোষ্ঠীর হাত থাকতে পারে। যদিও আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সাঁড়াশি অভিযানের মুখে সাম্প্রতিক সময়ে জঙ্গিরা কোণঠাসা হয়ে পড়েছে, তবে তারা একেবারে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে তা ভাবার কারণ নেই। তারা বিভিন্ন সময়ে নানা ‘ছোট’ ঘটনার মধ্য দিয়ে নিজেদের অস্তিত্বের জানান দিয়েছে এবং দিয়ে চলেছে। সবারই স্মরণে থাকার কথা, গত বছরের দ্বিতীয়ার্ধে ঢাকা ও খুলনায় অন্তত সাতটি এলাকায় পুলিশবক্সে বা টহলগাড়িতে এভাবে বিস্ফোরণ ঘটেছিল বা বিস্ফোরক পাওয়া গিয়েছিল। আর তখনই বিশেষজ্ঞরা বলেছিলেন, ওসব জঙ্গি-অস্তিত্বের জানান-চিহ্ন। এভাবে হামলার মধ্য দিয়ে নতুন কোনো জঙ্গিগোষ্ঠী আত্মপ্রকাশ করতে চাইছে বা পুরোনো জঙ্গিগোষ্ঠী নতুন পন্থা অবলম্বন করছে। শুক্রবারের বিস্ফোরণে ধরন দেখে এর নেপথ্যে নব্য জেএমবি রয়েছে বলে সন্দেহ করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। উল্লেখ্য, আগের সাতটি ঘটনায় ব্যবহৃত বিস্ফোরকের সঙ্গে চট্টগ্রামের পুলিশবক্সে ব্যবহৃত বিস্ফোরকের মিল রয়েছে। এটা চরম উৎকণ্ঠার বিষয়। যদি এ ঘটনার সাথে জঙ্গিদের সংশ্লিষ্টতা থেকে থাকে তাহলে তাতে উদ্বেগের যথেষ্ট কারণ আছে। এত অভিযানের পরও জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোর দৌরাত্ম্য কেনো কমছে না, তা বিচার-বিশ্লেষণ করার যথেষ্ট যুক্তি আছে। গতকাল দৈনিক পূর্বকোণে প্রকাশিত ‘নতুন নাশকতার ছক নগরে!’ শীর্ষক এক প্রতিবেদন বলছে, গত চারবছরে পুলিশের টানা অভিযানে নব্য জেএমবির বেশিরভাগ সদস্য হয় নিহত হয়েছেন, নয়তো কারাগারে বন্দী আছেন। তবে কয়েকজন জঙ্গির অবস্থান এবং তাদের কাজকর্ম নিয়ে পুলিশ কখনো নিশ্চিত হতে পারেনি। নিখোঁজ ব্যক্তিদেরও হালনাগাদ তথ্য নেই নগরপুলিশের কাছে। ধারণা করা হচ্ছে, পুলিশের অভিযানের শিথিলতার সুযোগ নিয়ে তারা নতুন করে হামলা ও নাশকতার প্রস্তুতি নিচ্ছে। বিষয়টি আমলে নিয়ে নতুন কৌশলে জঙ্গিবিরোধী অভিযান জোরদার করার উচিৎ।

হাল সময়ে জঙ্গিবাদ একটি খুব পরিচিত শব্দ। আজ পৃথিবীর বিশাল ভূ-খ- জঙ্গিবাদ নামক ভয়াবহ মহামারীতে আক্রান্ত। আজ পৃথিবীর বড় রাষ্ট্রপ্রধানদের চোখের ঘুম কেড়ে নিয়েছে জঙ্গিবাদ। জঙ্গিদের ঠেকাতে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার ব্যয় করা হচ্ছে, নতুন নুতন আইন প্রণয়ন করা হচ্ছে, জঙ্গিদেরকে জেলে দেয়া হচ্ছে, সাজা বৃদ্ধি করা হচ্ছে, ফাঁসিতে ঝুলানো হচ্ছে; অর্থবল, অস্ত্রবল ও মিডিয়া- তিন শক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার করে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে আপাতদৃষ্টে এক অসম লড়াই চলছে পৃথিবীব্যাপী, কিন্তু ফলাফল শুন্য। জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে যেসব ব্যবস্থাগ্রহণ করা হচ্ছে সেসবের অসারতা প্রমাণ হচ্ছে। দিন দিন জঙ্গিরা শক্তিশালী হয়ে উঠছে বিশ্বব্যাপী। বিপরীতে বাড়ছে জন-আতংক ও জন-উৎকণ্ঠা। যদিও বর্তমান সরকারের বেশ কিছু বাস্তবভিত্তিক পদক্ষেপের কারণে বাংলাদেশ এখন অনেকটাই নিরাপদ, কিন্তু জঙ্গিবাদের এ মহামারী থেকে বাংলাদেশকে পুরোপুরি হুমকিমুক্ত বলা যাবে না। যার কারণে স্বস্থির নিঃশ্বাস না ছেড়ে জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় গণমাধ্যমকে পুরোপুরি ব্যবহার করা সহ বছরব্যাপী কর্মসূচি গ্রহণ করাই শ্রেয়। আর চট্টগ্রামে পুলিমবক্সে হামলা সেই তাগিদই দিয়ে গেল।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট