চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

কলকাতা বইমেলা দর্শন কালান্তরে দৃষ্টিপাত

আহমদুল ইসলাম চৌধুরী

২ মার্চ, ২০২০ | ২:৫৯ পূর্বাহ্ণ

কলকাতা শহরে বইমেলার কথা অনেক দিন ধরে শুনে আসছিলাম। বারে বারে কলকাতা যাওয়া হলেও যাওয়ার সাথে সময়টা মিলে না যাওয়ায় এ মেলা দেখা থেকে বঞ্চিত ছিলাম। কলকাতা মহানগরীর প্রাণকেন্দ্রে বইমেলা হয়ে আসছিল। ক’বছর থেকে তা নতুন বর্ধিত শহর সল্ট লেইকে সরিয়ে নেয়। বইমেলার আয়োজক পশ্চিমবঙ্গ সরকার। তারা বইমেলাকে আন্তর্জাতিক রূপ দিয়ে কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলা নামকরণ করে।
চলতি বছর ২৯ জানুয়ারি থেকে ৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১০দিনব্যাপী ৪৪তম আন্তর্জাতিক বইমেলা। গত ৩০ জানুয়ারি (২০২০) ৬ দিনের জন্য কলকাতা ও মালদা গমন করা হয়। মালদা থেকে ফিরে কলকাতা অবস্থানকালে ৩ ফেব্রুয়ারি সোমবার বিকালে বইমেলায় গমন করি। সল্ট সেন্ট্রাল পার্ক ময়দানে এ আয়োজন। আন্তর্জাতিক বইমেলা বলতে বাংলাদেশ বাদে অন্যান্য দেশের ৫/৭টি বুক স্টল চোখে পড়ে। দীর্ঘক্ষণ সময় নিয়ে এদিক-সেদিক ঘুরতে থাকি। ভারতীয় কয়েকটি স্টল থেকে বইও খরিদ করি। ঢাকা বাংলা একাডেমী আয়োজিত ফেব্রুয়ারি মাসব্যাপী বইমেলা আর কলকাতার বইমেলার মধ্যে কতেক ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম অনুভব করি। ঢাকার বইমেলায় অনেক প্রকাশক টাকা খরচ করে স্টলগুলোকে সাজায়। কলকাতায় স্টলগুলো সাধারণ, সাদামাটা বলা যাবে। এমনিতে ভারতীয়দের জীবনযাত্রা আমাদের তুলনায় সাধারণ বলতে পারি। এতেই তারা সন্তুষ্ট। ইহায় উত্তম। কলকাতা বইমেলায় বাংলাদেশের বইঘরটি আরও বড় আকারের হওয়া উচিত ছিল। মনে পড়ে এখানে ৪৪টি স্টল রয়েছে। সে তুলনায় পশ্চিমবঙ্গবাসীর কল্যাণে কলকাতা বইমেলাকে বাংলাদেশ আরও গুরুত্ব দিয়ে এগিয়ে আসা উচিত হবে। এ এরিয়ার ভিতর হাঁটাহাঁটি করতে সংকীর্ণ জায়গা বিধায় অস্বস্তি লাগছিল। স্টলগুলো ছোট ছোট। এখানে এনআরসি বিরোধী প্রভাব পরিলক্ষিত হচ্ছিল। পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি বাদে বাকী দুইটি বড় দল তথা কংগ্রেস ও বামফ্রন্ট তৃণমূল কংগ্রেসের সাথে একমতে। অর্থাৎ এনআরসি বিরোধী।
এমনিতে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন এলাকায় যেভাবে বড় রাস্তার মোড়ে মোড়ে ভারতের সংবিধানের মূলনীতি ইংরেজি ও বাংলা ভাষায় তুলে ধরা হচ্ছে তাতে যে কোন ভারতীয় এনআরসি নিয়ে ভাববে। পশ্চিমবঙ্গের গৌড়ে গেলে বাংলাদেশ সীমান্তে সময় থাকায় এ রকম শাসনতন্ত্র পড়বার সুযোগ হয়। এতে বুঝে আসে এনআরসি যে ভারতীয় শাসনতন্ত্রের মূল বিষয়ে সাংঘর্ষিক তা অনায়াসে বুঝে আসবে।
জানি ভারতের অন্যান্য রাজ্যগুলোতে কংগ্রেসসহ অন্যান্য দলগুলো শাসনতন্ত্রের মূল বিষয় নিয়ে এ রকম প্লে কার্ড দিচ্ছে কিনা, জানি না। পশ্চিমবঙ্গের বড় বড় সংবাদপত্রগুলোতে এনআরসি বিরোধী মতামত চোখে পড়তেছিল। বইমেলায়ও তার প্রতিফলন ঘটে। এখানে বিকালের দিকে একাধিক স্থানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন প্রোগ্রামে মাইক ব্যবহার করছিল। এখানে চলছে কবিতা আবৃত্তি, গান ইত্যাদি। বড় রাস্তার ধারে ময়দানে বইমেলায় প্রবেশ করতে অনেক প্রবেশ পথ রয়েছে। সম্ভবত ৬নং গেইটটি প্রধান প্রবেশপথ হবে। এখানে ৬ শত মত স্টল রয়েছে বলে জানতে পারি। অসংখ্য খাবার দোকান চোখে পড়ছিল। সন্ধ্যায় কপি চা নাস্তা খেতে গিয়ে ঠকলাম। বিব্রতকর অবস্থায় পড়ি মাগরিবের নামাজ পড়তে গিয়ে। একটি স্টলে পড়বার সুযোগ পেলাম।
বস্তুতঃ বইমেলা বিশে^ একটি ভাল উদ্যোগ। আমাদের দেশেও ঢাকার পাশাপাশি চট্টগ্রামসহ জেলা শহরগুলোতে বইমেলা হয়ে থাকে। সরকারের উচিত হবে বইমেলাকে আরও পৃষ্ঠপোষকতা দেয়া। দীর্ঘদিন পরে হলেও কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলা দেখে নতুন অভিজ্ঞতা লাভ করা হয়।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট