চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

যৌতুকের অভিশাপ, কন্যাদায়গ্রস্ত পরিবার ও জনসচেতনতা

আ ব ম খুরশিদ আলম খান

২ মার্চ, ২০২০ | ২:৫৯ পূর্বাহ্ণ

চিটাগাং টু দ্যা ফোর- চট্টগ্রাম সব সময় অগ্রগামী কথাটি বহু আগেই বলেছিলেন উপমহাদেশের নন্দিত ব্যক্তিত্ব মহাত্মা গান্ধী। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, ৫২ সনে মাতৃভাষা প্রতিষ্ঠার আন্দোলন, ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান, ৭১ সনের মহান স্বাধীনতা আন্দোলনে চট্টগ্রাম ছিল অগ্রবর্তী ভূমিকায়। নানা সংকটে-দুর্দশায় দেশবাসীকে পথ দেখিয়েছেন চট্টগ্রামের বরেণ্য ব্যক্তিত্বগণ। ঠিক তেমনি চট্টগ্রামের বুজুর্গ ব্যক্তিত্ব আল্লামা আবুল কাশেম নূরীর নেতৃত্বে চট্টগ্রাম থেকে সূচিত যৌতুক ও নারীনিপীড়ন বিরোধী আন্দোলন আজ সবার নজর কেড়েছে। দেশ, সমাজ, মানুষ তথা নারীজাতির প্রতি দরদ, মমত্ববোধ ও দায়বদ্ধতা থেকে ২০০৮ সনে চট্টগ্রামের লালদীঘি ময়দানে সর্বপ্রথম যৌতুক ও নারীনিপীড়নবিরোধী মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। যা পরবর্তীতে চট্টগ্রামসহ দেশের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে। গত ২৯ ফেব্রুয়ারিও চট্টগ্রামের জমিয়তুল ফালাহ ময়দানে অনুষ্ঠিত হলো যৌতুক ও মাদকবিরোধী মহাসমাবেশ। নারী নিপীড়ন বন্ধ করা, যৌতুক দেয়া-নেয়া বন্ধ করা, বরযাত্রী ভোজন নয়-ওয়ালিমা প্রথা চালু করা, যুবক-যুবতীদের জন্য ম্যারেজ ফান্ড গঠন করা, বিবাহিত যুবকদের জন্য বিশেষ ঋণ সুবিধা প্রদান ও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সরকারি-বেসরকারি চাকরির ব্যবস্থা করা, যৌতুকমুক্ত বিয়ে সামাজিকভাবে চালু করা, কন্যা সন্তানের প্রতি অমানবিক নিষ্ঠুর আচরণ বন্ধ করা এবং নারীদের সুুশিক্ষিত করে আদর্শ সুনাগরিক গড়ার পথ তৈরি করাসহ নানা দাবিতে যৌতুকবিরোধী এই মহাসমাবেশ আয়োজিত হচ্ছে প্রতি বছর।
যৌতুকবিরোধী মহাসমাবেশের পাশাপাশি প্রতিবছর ধারাবাহিকভাবে তাফসিরুল কুরআন মাহফিলও আয়োজন করে আসছেন আল্লামা নূরী (মজিআ)। কুরআন মজিদের অপব্যাখ্যা রোধ এবং সঠিক দর্শন তুলে ধরাই তাফসিরুল কুরআন মাহফিল আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য। সমাজের নেতৃস্থানীয় শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি হলেন আলেম সমাজ। আলেম সমাজ মাঠে ময়দানে, মসজিদে-ওয়াজ মাহফিলে ও গণমাধ্যমে কোনো বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে জনমত তৈরি করতে চাইলে তাতে সুফল মিলবে শতভাগ-এতে কারো সংশয় নেই। আল্লামা নূরী সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকেই যৌতুকের অভিশাপমুক্ত সমাজ গড়তেই যৌতুকবিরোধী আন্দোলন শাণিত করে তুলেছেন। তাঁর উদ্দেশ্য মহৎ। লক্ষ্য সুনির্দিষ্ট। গন্তব্য নির্ধারিত। যৌতুকের অভিশাপ থেকে এবং নানাভাবে চলা নিপীড়ন থেকে নারীসমাজকে বাঁচানোই তার এ আন্দোলনের মূল লক্ষ্য। নিজ উপার্জিত টাকা থেকে যৌতুকবিরোধী সভা-সমাবেশ তিনি বছর বছর ধরে আয়োজন করে আসছেন। যা ইতিমধ্যে গণমাধ্যমেও ফলাও করে প্রচার পেয়ে আসছে। স্বার্থমুখী কোনো কাজে না জড়িয়ে তিনি গণমুখী কাজে নিজেকে উৎসর্গীত রেখেছেন। নারীসমাজের মতো মাতৃস্থানীয় মর্যাদাতুল্য একটি বিশেষ শ্রেণিকে সামাজিক কুপ্রথা যৌতুকের গ্লানি থেকে উদ্ধারে জাতীয় জাগরণ গড়ে তোলা এবং রাষ্ট্রের কর্তাব্যক্তিদের দৃষ্টি আকর্ষণÑএই হচ্ছে যৌতুকবিরোধী মহাসমাবেশ আয়োজনের বড় লক্ষ্য। যৌতুকের কারণে ঘরে ঘরে চলা গরিব পরিবারগুলোর নীরব কান্না ও আহাজারি থামাতেই এ আন্দোলন ফলপ্রসূ ভূমিকা রাখবে নিঃসন্দেহে।

সমাজের মর্যাদাতুল্য ব্যক্তি আলেমগণের অনেকেই অপ্রয়োজনীয় কিংবা কম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে নিজেদের মাতিয়ে রাখেন। এতে যেমন তাদের মর্যাদাহানি ঘটে, তেমনি মানুষের কল্যাণে আলেম সমাজের দায়িত্ব-কর্তব্য পালনের দিকটিও উপেক্ষিত থেকে যায়। যৌতুকের অভিশাপ থেকে নারী সমাজ ও কন্যাদায়গ্রস্ত পরিবারগুলোকে বাঁচাতে চাই সামাজিক সচেতনতা ও গণজাগরণ। সেই সাথে দরকার রাষ্ট্রীয় কঠোর পদক্ষেপ। যৌতুকবিরোধী আইন দেশে রয়েছে। যৌতুক দেয়া-নেয়ার জন্য আইনগত শাস্তির বিধানও রয়েছে। যৌতুকজনিত কারণে নারীনির্যাতন ও হত্যা করা হলে যাবজ্জীবন ও মৃত্যুদন্ডের বিধান রেখে ২০১৭ সালে ৩০ জানুয়ারি আরেকটি আইন সংসদে পাস হয়েছে। আমরা মনে করি, যৌতুকবিরোধী আন্দোলনের ফসল হলো এ আইন। যৌতুকবিরোধী আইনের কঠোর প্রয়োগ ছাড়া এ দুষ্টক্ষত থেকে নারীসমাজের রেহাই মিলবে না। শুধু আইন প্রণয়ন যথেষ্ট নয়, আইনের যথাযথ প্রয়োগ চাই। সবাই সচেতন হলে, নিজ নিজ অবস্থান থেকে সবাই দায়িত্ব পালন করলে যৌতুকমুক্ত স্বদেশ গড়ার স্বপ্ন পূরণ হবে।

আ ব ম খুরশিদ আলম খান সাংবাদিক

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট