চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

বই হোক সমাজ পরিবর্তনের হাতিয়ার

জোবায়ের আহমেদ

১ মার্চ, ২০২০ | ৩:২৫ পূর্বাহ্ণ

একজন মানুষকে সরাসরি কোন কিছু বুঝাতে গেলে সে ব্যক্তিটি বক্তার বক্তব্যকে ইতিবাচক হিসেবে নিতে পারে কিংবা নাও পারে, অনেক সময় বক্তব্যের আসল মানেও বুঝতে পারেনা অনেক শ্রোতা, বুঝলেও তা গভীরভাবে উপলব্ধি করে বাস্তব জীবনে প্রয়োগে ব্যর্থ হন অনেকে, বিভিন্ন অনুপ্রেরণামূলক বক্তব্য ও ওয়াজ মাহফিলের মাধ্যমে মানুষকে সত্য ও ন্যায়ের বাণী এবং দৈনন্দিন জীবনে চলাফেরাসহ সকল বিষয়ে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য রাখা হলেও এবং অনেক মানুষ বাস্তবিক জীবনে প্রয়োগ করলেও সরাসরি বক্তব্যের চেয়ে একটি বইয়ের মাধ্যমে যেভাবে সবকিছু বিস্তারিত তুলে ধরা সম্ভব হয় এবং একজন পাঠক বই পড়ার জন্য পরিবেশ তৈরী করে বই পড়ে যে জ্ঞান অর্জন করে তা বাস্তবিক জীবনে প্রয়োগে বেশ সহজ হয়ে যায়। বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞানভিত্তিক কথাগুলো হৃদয়ে সহজে ধারণ করতে সক্ষম হয়।

প্রথিতযশা সাহিত্যিক সৈয়দ মুজতবা আলী তার “বই পড়া” প্রবন্ধে লিখেছিলেন “বই কিনে কেউ দেউলিয়া হয়নি, বই কেনার বাজেট যদি আপনি তিনগুণও বাড়িয়ে দেন, তবুও তো আপনার দেউলে হওয়ার সম্ভাবনা নেই”। আসলেই তাই, বই কিনে কেউ দেউলিয়া হয়েছে এমন কোন খবর পাওয়া যায়নি কখনো কিন্তু বই পড়ে জ্ঞানভান্ডার সমৃদ্ধ হয়েছে, দেশ ও জাতি এবং মানবতার কল্যাণে নিজেকে নিবেদিত করতে পেরেছে, এমন মানুষের সংখ্যা অধিক। জগৎবিখ্যাত কবি ওমর খৈয়াম বলেছিলেন, “রুটি মদ ফুরিয়ে যাবে, প্রিয়ার কালো চোখ ঘোলাটে হয়ে আসবে, কিন্তু একখানা বই সব সময় অনন্ত-যৌবনা, যদি তেমন বই হয়”। পবিত্র কোরআনেও উল্লেখ আছে “পড় তোমার প্রভুর নামে, যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন”। রাসুল (সা.) এক হাদিসে বলেছেন, ঘণ্টাখানেকের জ্ঞানসাধনা সমগ্র রজনীর ইবাদত অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। আর জ্ঞানসাধনার অন্যতম মাধ্যমই হলো বই। আল্লামা শেখ সা’দী বলেন জ্ঞানের জন্য তুমি মোমের মতো গলে যাও। কারণ জ্ঞান ছাড়া তুমি খোদাকে চিনতে পারবে না”। সনাতন, খ্রিস্টানসহ অন্যান্য ধর্মীয় গ্রন্থগুলোতেও বই পড়ার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। খ্রিস্টানদের ধর্মগ্রন্থ বাইবেল শব্দের অর্থই হলো বই। বৃটিশ দার্শনিক ও যুক্তিবিদ বারট্রান্ড রাসেল বলেছিলেন, “সংসারে জ্বালা-যন্ত্রণা এড়ানোর প্রধান উপায় হচ্ছে, মনের ভেতর আপন ভুবন সৃষ্টি করে নেওয়া এবং বিপদকালে তার ভেতর ডুব দেওয়া। যে যত বেশি ভূবন সৃষ্টি করতে পারে, ভবযন্ত্রণা এড়ানোর ক্ষমতা তার ততই বেশি হয়”। একটি বই জীবনের কথা বলে, বই মানুষের কথা বলে, বই বিপথগামী মানুষ ও সমাজকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনার রসদ যুগায়, বই মানুষকে ন্যায়নীতি ও আদর্শিক জীবন গঠনে অনুপ্রান্বিত করে।

আমরা যে যতটুকু লেখাপড়াই করি না কেনো, পাঠ্যবইয়ের বাইরে বিভিন্ন বিষয়ে বিখ্যাত-অখ্যাত লেখকদের বইপড়ার মানসিকতা তৈরী দরকার, একটি ভালো বই মানুষকে আদর্শ সমাজ ও আদর্শ জীবন গঠন করতে সহায়তা করে, ধর্মীয় বই ছাড়াও পৃথিবীতে অসংখ্য বই আছে, যা থেকে জ্ঞান অর্জন করে মানবজীবন আলোকিত করা সম্ভব। মানুষের ভেতরের হিংসা, বিদ্বেষ, ঘৃণা ভুলে মানুষের প্রতি মানুষের ভালোবাসা তৈরী হওয়ার মতো উদার মানসিকতা তৈরী সম্ভব। সুন্দর ও আদর্শ সমাজ এবং দেশ গঠনে বইয়ের কোন বিকল্প নেই।
অনলাইনের প্রভাবের ফলে বহু মানুষ এখন বই থেকে মুখ ফিরিয়ে অনলাইনেই দীর্ঘসময় ব্যয় করলেও আশার কথা ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দের ৮ ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশের প্রকাশনা শিল্পের একজন পৃথিকৃৎ চিত্তরঞ্জন সাহা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বর্ধমান হাউজ প্রাঙ্গণে বটতলায় এক টুকরো চটের উপর কলকাতা থেকে আনা ৩২টি বই সাজিয়ে যে বইমেলার শুরু করেছিলেন, সে বইমেলা আজ পর্যন্ত নিয়মিত আয়োজন হচ্ছে। শুধুমাত্র ঢাকাতেই নয় অন্যান্য বিভাগীয় ও জেলা শহরগুলোতেও বইমেলার আয়োজন হয়, যার ফলে বইপড়ার প্রতি আগ্রহ তৈরী হয় ফেব্রুয়ারি মাসকে ঘিরে। জ্ঞানার্জন ব্যতীত কোন জাতিই কাঙ্খিত উন্নতি সাধন করতে পারেন না। তাই আসুন, শত কর্মব্যস্ততার মাঝেও বই পড়ি, প্রিয়জনকে বই উপহার দেই, বই হোক সমাজ পরিবর্তনের অন্যতম হাতিয়ার।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট