চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

বাংলা চালু হোক সর্বস্তরে

কাজী আবু মোহাম্মদ খালেদ নিজাম

২৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ | ২:৩২ পূর্বাহ্ণ

ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি। এ মাস এলেই মনে পড়ে যায় বাংলাভাষার জন্য প্রাণ দেওয়া শহীদদের কথা, তাদের নি:স্বার্থ আত্মত্যাগের কথা। আমাদের এই মাতৃভাষা বাংলাকে ‘রাষ্ট্রভাষা’ হিসেবে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য তাঁরা প্রাণ দিয়েছেন। পৃথিবীতে এমন উদাহরণ আর একটিও খুঁজে পাওয়া যাবে না। প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত হওয়ায় ২১শে ফেব্রুয়ারিকে শহীদ দিবস হিসেবে পালন করি আমরা। ভাষা আন্দোলন শোক ও গৌরবোজ্জ্বল স্মৃতি বিজড়িত একটি দিন হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। প্রিয় ভাষা দিবস আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি পাওয়ায় বিশ্বব্যাপী তা পালন করা হয় আড়ম্বরভাবে।

পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার আগে থেকেই বিগত শতকের চল্লিশের দশকে ভাষাবিতর্ক শুরু হয়ে যায়। তখনকার কিছু মুসলিম লীগ নেতা ও বুদ্ধিজীবী বাংলাকে বাদ দিয়ে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার পক্ষে মত দেয়, এ প্রসঙ্গে আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. জিয়াউদ্দিন এবং খ্যাতনামা বাঙালি প-িত ড. মুহম্মদ শহীদল্লাহর বিতর্ক উল্লেখযোগ্য। ভাষার প্রশ্নে ১৯৪৭ সালে সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘তমুদ্দন মজলিস’ এর উদ্যোগে সর্বপ্রথম গঠিত হয় ‘রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’। পরে গঠিত হয় ‘সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’। ১৯৪৮ সালে ঢাকায় মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা ঘোষণার প্রতিবাদে পূর্ববাংলার ছাত্র-জনতা বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। এই বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশে। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে ঢাকার রাজপথে মিছিলের ওপর পুলিশ বেপরোয়া গুলি চালায়। এতে সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার সহ অনেকে শহীদ হন। এই শহীদদের রক্তের সিঁড়ি বেয়েই পাকিস্তান সরকার বাধ্য হয় বাংলাকে ‘রাষ্ট্রভাষা’ হিসেবে স্বীকৃতি দিতে। আর এই আন্দোলন-সংগ্রামের পথ ধরেই এসেছে বাংলাদেশের কাক্সিক্ষত স্বাধীনতা। ডানা মেলেছে মুক্ত আকাশে এদেশের মুক্তিকামী কোটি জনতা। ‘২১ ফেব্রুয়ারি’ পেয়েছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি।

কানাডার ভ্যানকুভার শহরে (কাকতালীয়ভাবে ভাষাশহীদদের নামের সাথে মিলে যাওয়া) বসবাসরত দুই বাঙালি রফিকুল ইসলাম ও আবদুস সালাম প্রাথমিক উদ্যোক্তা হিসেবে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষণার জন্য ১৯৯৮ সালে তৎকালীন জাতিসংঘের মহাসচিব কফি আনানের কাছে আবেদন জানিয়েছিলেন। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে অবশেষে ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর অনুষ্ঠিত ইউনেস্কোর প্যারিস অধিবেশনে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ২০০০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রসমূহ এবং ২০১১ সাল থেকে জাতিসংঘ একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে যথাযথ মর্যাদার সাথে পালন করে আসছে।

একুশে ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে মর্যাদা পেয়েছে সত্য কিন্তু তা আজো আমাদের দেশের সকল স্তরে সেভাবে চালু হয়নি। আমাদের মাঝে ইংরেজি, হিন্দি প্রীতিই বলে দেয় বাংলা ভাষা ব্যবহারের বর্তমান অবস্থা। সর্বত্রই বানান ভুল, ভুল শব্দ ব্যবহারের আধিক্য। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দোকান,শপিংমল, ব্যানার, ফেস্টুনে ইংরেজি ভাষা, শব্দ, বাক্য ব্যবহারেই অভ্যস্ত। আর বিদেশি চ্যানেলগুলো এবং এফএম রেডিও আমাদের প্রজন্মকে বাংলা ভাষায় কথা বলাটাই ভুলিয়ে দিতে চাইছে! ইংরেজি আন্তর্জাতিক ভাষা হিসেবে তা আয়ত্ত করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। তাই বলে নিজের মাতৃভাষাকে বিসর্জন দিয়ে নয়।আগে আমাদের মাতৃভাষায় পরিপূর্ণ ও সঠিকভাবে জানতে হবে। বাংলা ভাষার ওপর গবেষণা, চর্চা বাড়াতে হবে। আদালতসহ দেশের সব প্রতিষ্ঠানে বাংলাভাষা চালুর উদ্যোগ নিতে হবে। সরকারকে সর্বস্তরে বাংলা ভাষা চালু করার বিষয়টি নিশ্চিত করতে উদ্যোগ নিতে হবে। সমুন্নত থাকুক বাংলা ভাষার মর্যাদা। যে কোন দেশের মানুষ তাদের মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার রাখে। আমরা এ অধিকার আদায়ের জন্য রক্ত দিয়েছি। পৃথিবীর বুকে ভাষার নামে একমাত্র একটি দেশ ‘বাংলাদেশ’। বাংলা ভাষার নামে প্রতিষ্ঠিত এই দেশটির সকল স্তরে ‘বাংলা ভাষা’ চালু হোক এ দাবি সকলের।

কাজী আবু মোহাম্মদ খালেদ নিজাম শিক্ষক ও প্রাবন্ধিক।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট