চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

শব্দদূষণের পরিণামে কানে শোঁ শোঁ আওয়াজ

ডা. মোহাম্মদ ওমর ফারুক

২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ | ৩:১৬ পূর্বাহ্ণ

ইদানিং কানের শোঁ শোঁ আওয়াজ এ দেশে এক মহামারি আকার ধারণ করেছে ইদানিং। পথে-ঘাটে, বাস টার্মিনাল, লঞ্চ টার্মিনাল, বিভিন্ন ওয়াজ মাহফিল, বিভিন্ন সংগীত অনুষ্ঠান, ব্যান্ড কনসার্ট অনুষ্ঠান ইত্যাদি থেকে সৃষ্ট গগণবিদারী আওয়াজ অতিষ্ট করে তুলেছে পথচারী জনগণকে। রাস্তার পাশে অবস্থিত বিভিন্ন মেশিনারী পার্টস এর দোকান, গ্যারেজ, ধান কল, গার্মেন্টস ফ্যাক্টরী ইত্যাদি থেকে সৃষ্ট প্রচ- আওয়াজ উক্ত পরিস্থিতির জন্য কোন না কোনভাবে দায়ী। ইদানিং এরহশমড় নরষড়নধ নামক জার্মানিতে উৎপাদিত ওষুধটি সম্প্রতি আবিষ্কৃত হয়েছে-এটি শোঁ শোঁ আওয়াজ দমনের জন্য মূল নিয়ামক হিসাবে কাজ করে থাকে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। এটি ব্যবহারের ফলে রোগীদের কিছুটা স্বস্থিবোধ হয় বটে, কিন্তু সেটি ক্ষণস্থায়ী।

কেইস স্টাডি -১
জনৈক প্রবাসী হন্তদন্ত হয়ে ঢুকলেন চেম্বারে। জানালেন কানের সমস্যার কথা। কানের শোঁ শোঁ আওয়াজে রাত্রে তাঁর ঘুম হয় না। অনেক ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জানতে পারলাম, তিনি প্রবাসে একটি মোটর গ্যারেজে চাকরি করেন প্রায় ৭-৮ বছর ধরে। কিন্তু ভালো কোন চিকিৎসকের কাছে যাননি। অগত্যা দেশে ফেরা এবং শরণাপন্ন আমার কাছে। আমি কানের কিছু পরীক্ষা দিলাম, পরীক্ষার রিপোর্টে দেখা গেল- দু’কানেরই শ্রবণশক্তির মাত্রা অবিশ্বাস্যভাবে কম। এর কারণ-দীর্ঘদিন মোটর গ্যারেজে চাকরী করা এবং ক্ষেত্র বিশেষে হেড-ফোন দিয়ে রাত- বিরাতে গান শোনা। ফলশ্রুতিতে উৎপত্তি হয় শোঁ শোঁ আওয়াজের মতন বিরক্তিকর অস¦স্থি। আমি ঠবংঃরনঁষধৎ ঝবফধঃরাবং দিয়ে ভদ্রলোককে বিদায় করলাম।

কেইস স্টাডি -২
জনৈক মধ্যবয়স্কা মহিলা শহরের চেম্বারে আসলেন। জানালেন-কানের শোঁ শোঁ আওয়াজের বিরক্তিকর সংকট। মনোযোগ দিয়ে শোনলাম তাঁর কথা। ঘটনাটি ঘটেছে অল্পদিন আগেই। গেরস্থালী কাজ করতে করতে হঠাৎ কান বন্ধ হয়ে যায় এবং পরবর্তীতে কিছুই শুনতে পাননি। ছেলে মেয়েরা ডাকলেও তা শোনেন না। নিজের কাছে কেমন যেন অপরাধী মনে হয়। এটাকে বলে ঝঁফফবহ ঝবহংড়ৎরহবঁৎধষ ফবধভহবংং-এর সাথে যোগ হয়েছে শোঁ শোঁ আওয়াজ বা ঞরহহরঃঁং। নির্দিষ্ট ব্যবস্থাপত্র দিয়ে বিদায় করলাম ভদ্রমহিলাকে। কানের শোঁ শোঁ আওয়াজে আক্রান্ত ব্যক্তিরা এটাকে প্রতিদিনকার সমস্যা হিসাবে বেছে নিয়েছে। সমস্যাটি শতকরা ১০ থেকে ১৫ ভাগ মধ্যবয়স্ক পুরুষ এবং মহিলাদের মধ্যে হয়ে থাকে। ১৯৯৯ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত আমেরিকার ঘধঃরড়হধষ ঐবধষঃয ধহফ ঘঁঃৎরঃরড়হ ঊীধসরহধঃরড়হ ঝঁৎাবুং- তে দেখা গেছে, ৫০ মিলিয়ন আমেরিকান এ সমস্যায় আক্রান্ত। একটি ব্রিটিশ গবেষণায় দেখা গেছে-মধ্য বয়স্ক ব্যক্তিদের ১০.১ ভাগ উক্ত রোগে আক্রান্ত, যেটি বয়সের সাথে সাথে বেড়ে যায়। কানের শোঁ শোঁ আওয়াজ ব্যাধিটি মহিলাদের চেয়ে পুরুষরাই আক্রান্ত হয় বেশি। সময়ের সাথে সাথে প্রায় শতকরা ২৫ ভাগ রোগীর মধ্যে ঞরহহরঃঁং এর মাত্রা বেড়ে যায়। অস্ট্রেলিয়ান ইষঁব গড়ঁহঃধরহং ঐবধৎরহম ঝঃঁফু তাদের ৫ বছরের গবেষণায় জানিয়েছে-দু’হাজার আক্রান্ত ব্যক্তিদের ১ পঞ্চমাংশ হলো বয়োঃজ্যেষ্ট ব্যক্তি। ঝঁনলবপঃরাব ঞরহহরঃঁং হয়ে থাকে বহিঃকর্ণের উত্তেজনা ছাড়াই আর ঙনলবপঃরাব ঞরহহরঃঁং হল বহিঃকর্ণের বাহিরে উৎপাদিত শব্দ থেকে-যেমন: মধ্য কর্ণের মাংসপেশি সমূহের সংকোচন থেকে। ঝঁনলবপঃরাব ঞরহহরঃঁং শুধুমাত্র ভূক্তভোগীরাই সনাক্ত করতে পারে। যেমন: ঈৎধপশষরহম, জরহমরহম, ডযরংঃষরহম। এটা সার্বক্ষণিক অথবা মাঝেমাঝে হতে পারে-শুরুটা শ্রবণশক্তির লোপ অথবা শ্রবণশক্তি লোপ ছাড়া হঠাৎ হতে পারে। এটি অনেকাংশে দূর হয়ে যেতে পারে কিন্তু ঞরহহরঃঁং একটি স্থায়ী সমস্যা হিসাবে অনেকের জীবনকে দূর্বিসহ করে তোলে। শোঁ শোঁ আওয়াজ অনেক ভূক্তভোগীর আবেগকে আন্দোলিত করে, ফলশ্রুতিতে এটির প্রভাবে হতাশা আর দুশ্চিন্তায় জড়িয়ে যায় অনেকেই-যেটি ঞরহহরঃঁং এর মাত্রাকে অধিকতর বৃদ্ধি করে দেয়। এটি স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে চরমভাবে ব্যাহত করে। অনেক ক্ষেত্রে পরিবারে দেখা দেয় বিশৃঙ্খলা, মনোমালিন্য শুরু হয় দম্পতির মাঝে-চাকুরী ও ব্যবসার ক্ষেত্রে দেখা দেয় চরম অস্থিরতা। ভূক্তভোগী খোঁজে একটু শান্তির পরশ-মুক্তি পেতে চায় শোঁ শোঁ আওয়াজের জীবনগ্রাসী চরম অস্থির পরিস্থিতি থেকে।

ডা. মোহাম্মদ ওমর ফারুক
সভাপতি, রাউজান ক্লাব, জুনিয়র কনসালটেন্ট (ইএনটি), জেনারেল হাসপাতাল, রাঙ্গামাটি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট