চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

স্মরণ: শাহ্ মাওলানা মাহমুদুর রহমান (রহ)

অধ্যক্ষ এম সোলাইমান কাসেমী

২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ | ১:৩৩ পূর্বাহ্ণ

অমানিশার অতল গহ্বরে তলিয়ে যাওয়া মানবগোষ্ঠীকে সত্যের সন্ধান দেওয়ার জন্য এই ভূম-লে যুগে যুগে আগমন ঘটেছে বহু মশালধারকের। এঁদের কেউ নবী, কেউ রাসূল, কেউবা অলি, কেউ মুজাদ্দিদ। ‘মানুষকে আপনার প্রভুর পথে আহ্বান করুন হিকমাত তথা প্রজ্ঞা এবং সুন্দরতম নসীহতের মাধ্যমে।’ মহান প্রভুর এই শাশ্বত ঘোষণা কিয়ামত অবধি যেমন বলবৎ থাকবে তেমনি মানুষকে এই পয়গাম পৌঁছে দেওয়ার জন্য যুগে যুগে বিভিন্ন বুজুর্গানে দ্বীনের শুভাগমনও ঘটবে, এটাই নিয়ম। তারই ধারাবাহিকতায় এদেশে ইসলামের দাওয়াত নিয়ে আসেন হযরত শাহজাজলাল, শাহ পরান, খান জাহান আলী, শাহ মখদুম, শাহ আমানত, শাহ আব্দুল মজিদ, শাহ আব্দুর রশিদ ও শাহ মোহছেন আউলিয়া (রাহ)-সহ আরো অনেকেই। যাঁদের পদধূলিতে ধন্য আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ।

কক্সবাজার জেলার চকরিয়া থানার উপকুলীয় ইউনিয়ন মগনামার এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে ১৯৩৬ সালে জন্মগ্রহণ করেন, পীরে কামেল আলহাজ্ব শাহসুফি মাওলানা মাহমুুদুর রহমান (রহ)। তিনি ১৯৭৫ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ২৩ বছর চিরিঙ্গা বাস স্টেশন জামে মসজিদের ইমাম ও খতিবের দায়িত্ব পালন করেন। একাধারে শিক্ষকতা এবং মসজিদের পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের ইমামতি ও মাহফিলের দাওয়াত রক্ষা করতে কোন দ্বিধাবোধ করেন নাই। তিনি ইসলামের এমন অনুরক্ত ছিলেন যে কখনও তাহাজ্জুদ নামাজ না পড়ে ঘুমাতেন না। তাঁর মধ্যে সবসময় দুটো বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান ছিল, এক অল্প আহার, দুই স্বল্প বাচন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি অত্যন্ত বিনয়ী ও মার্জিত স্বভাবের অধিকারী ছিলেন। তিনি কথা নয় কাজে বিশ্বাসী ছিলেন। বিলাসীতাকে পছন্দ করতেন না। ধনসম্পদ পদ-মর্যদা নয় রেয়াজতই তাঁর নিকট নৈকট্যের মাপকাঠি ছিল। তাঁর নিকট গরীব ও ধনীর কোন পার্থক্য ছিল না, সবাই তাঁর কাছে সমান ছিলেন। তিনি জীবনে কখনো কুরআন-সুন্নাহর নীতির পরিপন্থি কোন কাজে লিপ্ত ছিলেন না। তিনি পীর হিসেবে শরীয়ত ও ত্বরীকতের জ্ঞান দ্বারা পরিপূর্ণ ইলমে শরীয়তের যেমন নিঁখুত শিক্ষা দিয়েছেন, তেমনি এলমে ত্বরীকতেরও পরিপূর্ণ শিক্ষা দিয়ে গেছেন। তাঁর আদর্শবাদী জীবন তাঁকে সমাজের সর্বস্তরের লোকের নিকট গ্রহণযোগ্য ও শ্রদ্ধাশীল করে তুলেছে। প্রথাগত দ্বীনিশিক্ষা শেষ করার পর তাঁর অতৃপ্ত হৃদয় মাবুদের সন্ধানে ব্যাকুল হয়ে পড়ে। তখন তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে, বাতেনী শিক্ষা ছাড়া আল্লাহর নৈকট্য হাছিল করা কিছুতেই সম্ভব নয়। তাই বদরখালী মাদ্রাসা শিক্ষক মাস্টার মরহুম রশিদ আহম্মদ (রহ)এর প্রেরণায় ১৯৬৯ সালে তৎকালীন দেশের শ্রেষ্ঠ পীর গারাংগিয়ার হযরত শাহ মাওলানা আব্দুল মজিদ (রহ) (বড় হুজুর কেবলা) এর নিকট গিয়ে তাঁর দস্ত মোবারকে বায়াত গ্রহণ করেন। এক পর্যায়ে ১৯৭৪ সালে বড় হুজুর কেবলার কথামত খেলাফতের দায়িত্ব পালন করতে লাগলেন। তখন ছোট হুজুর কেবলাও তাঁকে ডেকে একে একে সব তরিকতের ৮ (তরিকার) খেলাফত প্রদান করেন। সর্বশেষ ত্বরীকায়ে মোহাম্মদীয়া নামে যে ত্বরীকতের প্রচার করেন তাঁর দায়িত্বও দিয়ে যান। তিনি মৃত্যুর আগমুহূর্ত পর্যন্ত মোট আট ত্বরীকতের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে গেছেন।

তিনি বিশ^াস করতেন, যুবসমাজই সমাজের পট পাল্টে দিতে পারে। তাই তিনি মজিদিয়া কমিটি নামে একটি সংগঠন করেন। তিনি ১৯৯৯ সালের ২৫ ফেব্রুযারি ইন্তেকালের আগ পর্যন্ত বাংলাদেশ ইমাম সমিতি চকরিয়া থানা সভাপতির দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। প্রতিবছর তাঁর বার্ষিক ইছালে সাওয়াব মাহফিলে হাজার হাজার মানুষ অংশগ্রহণ করে ফুয়ুজাত, বারাকাত ও কৃপাদৃষ্টি হাসিল করেন। আল্লাহ আমাদের প্রত্যেককে তাঁর খেদমত ও স্মরণকে কবুল করুন, তাঁর রুহানী ফুয়ুজাত ও মেহেরবানী আমাদের সকলকে নসীব করুন। আমিন! ওয়ামা তাওফীকী ইল্লা বিল্লাহ, ওয়ামা আলাইনা ইল্লাল বালাগ।

অধ্যক্ষ এম সোলাইমান কাসেমী ইসলামী গবেষক ও প্রাবন্ধিক।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট