চট্টগ্রাম বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

চেতনায় একুশ

রোকেয়া হাসনাত

২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ | ৮:২৯ অপরাহ্ণ

আমাদের সামাজিক, সাংস্কৃতিক চেতনার অমূল্য সব সম্পদ নিহিত রয়েছে একুশের পটে। ভাষা, জাতীয়তা, বিজয় সব। জাতিরূপে আমরা এভাবে আমাদের কালের পরিক্রমাকে চিহ্নিত করতে শিখেছি। তরুণ প্রজন্ম এর শিক্ষার্থী। যে শিক্ষা তরুণ প্রজন্ম পাচ্ছে তা খুবই গৌরবের এবং অহংকারের। কেননা এই একুশের চেতনার রঙে রঞ্জিত মাতৃভাষা হচ্ছে প্রকৃত শিক্ষার বাহন। বাঙালি জাতির ঐতিহ্য গৌরবের জায়গা। সব কাজে এর গুরুত্ব অপরিসীম।

একুশে ফেব্রুয়ারি বলতে অনেক দায়িত্ব, কর্তব্য, অনেক রক্তদানের স্মৃতি, অনেক শহীদ বীর, অনেক সংগ্রাম, ইতিহাস আমাদের ব্যক্তি, সমাজ এবং জাতীয় জীবনে। একুশের ভাবান্তর নতুন প্রজন্মকে জানানোর জন্য দায়িত্ব বোধে উজ্জীবিত করা। একুশ আসে, যায়। আমাদের দেশের ভাগ্যবান শিশুরা কিন্ডারগার্টেনে জীবনের প্রথম পাঠ ভাষাজ্ঞান অর্জন করে। কিন্তু পথশিশু, ছিন্নমূল, ভাসমান, গৃহহারা, সহায়-সম্বলহীন শিশুরা যাদের সংখ্যা বাংলাদেশে প্রায় চার কোটির মতো। তারাতো ভাষার জ্ঞান, চেতনা বোঝে না।

আমাদের মমতাময়ী প্রধানমন্ত্রী কিছুদিন পূর্বে প্রত্যেক শিশুর সুন্দর ও নিরাপদ জীবনের নিশ্চয়তার কথা বলেছেন। সেজন্য তিনি দেশে শিশুনীতিমালা প্রণয়ন করেন। সেখানে স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে, কোন শিশুকে ঝুঁকিপূর্ণ এবং রাজনৈতিক কাজে ব্যবহার করা যাবে না। কোন শিশু তার মৌলিক অধিকার শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত যেনো না হয়। ছিন্নমূল হয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে না বেড়ায়।
বঙ্গবন্ধুকন্যার ও উদ্যোগ যদি আস্তে আস্তে দেশে সাফল্যমন্ডিত হয় তাহলে ক্রমান্বয়ে পথহারা শিশুদের জীবন অনন্য সুন্দর খাতে প্রবাহিত হবে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে যে কোন মূল্যে একুশ উদ্যাপনের বৈচিত্র্যপূর্ণ অনুষ্ঠান, একুশের ঐতিহ্যবাহী বইমেলা, বিভিন্ন পদক-পুরস্কার আরো ব্যাপক ও বৈচিত্র্যময় করে তুলতে হবে। তাতে একদিন পুরো দেশের সমাজব্যবস্থা সাক্ষরযুক্ত হবে।
বইমুখী জ্ঞানচর্চা ও দেশপ্রেমে জাতিকে উদ্বুদ্ধ হবে। কেননা, মহান একুশ একজন বাঙালি ও আধুনিক মানুষ হিসেবে পরিচয়ের সুত্রিতা স্পষ্টভাবেই বুঝিয়ে দেয়। মানুষের মাতৃভাষা যে কত বড়, তা বাঙালি জাতি নিজেদের এবং সেই সঙ্গে সমস্ত পৃথিবীকে জানিয়ে দিয়েছে। পৃথিবীর কোন জাতির এমন গৌরবের একুশ নেই।
এমন ঐতিহ্যের বিশেষ করে মাতৃভাষার জন্য যুদ্ধের ইতিহাস আমাদের ব্যতিত বিশে^ কোথাও নেই। এই ইতিহাসের বড় শিক্ষা মনুূষ্যত্বের শিক্ষা, অসাম্প্রদায়িকতা, উদারতা ও মুক্তচিন্তার শিক্ষা, একুশের এই আন্দোলনের পূর্ব পর্যন্ত বাংলা ভাষা ও বাংলা অক্ষর যে এতো আপন, তা ঠিক উপলব্ধি করতে পারেনি বাঙালি।

এই যে ফেব্রুয়ারি মাস। এটা একটা ইংরেজি মাস। বাঙালি এই ফেব্রুয়ারি শব্দটিকে বাংলা করে নিয়েছে। এ যেনো ফাল্গুন-চৈত্রেরই মতো একটা বাংলা মাস।
এটাই বাংলা ভাষার শক্তি। সাধারণ মানুষের মুখের ভাষা বাংলা। জীবনযাপনের ভাষা ও বাংলা। তাই শিশু-কিশোর, তরুণের জ্ঞানাজর্নের প্রধান বাহন এবং আবাল-বৃদ্ধ বনিতার প্রধান মাধ্যম করে তুলতে হবে বাংলাভাষাকে। বাংলাভাষাকে বাঙালি আপামর জনসাধারণের কাছে সুদৃঢ় ও বলীয়ান করতে, তাকে সাফল্যের শিখরে পৌঁছে দিতে একান্তভাবে অপরিহার্য শিক্ষিত জনশক্তি, যেহেতু প্রকৃত শিক্ষার কোন বিকল্প নেই।
তাই সরকার শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে বাংলাভাষার প্রচলন প্রাথমিক শিক্ষা থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত করেছে সন্দেহ নাই। কিন্তু মানের উন্নতি কি হয়েছে? যত দিন যাচ্ছে শিক্ষার বাহন হিসেবে বাংলা ভাষার ততই পঙ্গু ও অকার্যকর বলে মনে হচ্ছে কেন?
এখনো বহু জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিষয় মোটামুটি মানসম্পন্নভাবে আয়ত্ব করতে গেলে বাংলাদেশ দ্বারা তা সম্ভব হচ্ছে না। বিশ^বিদ্যালয় পর্যায়ে বাংলা প্রচলন শিক্ষার মানকে অনেক নীচে নামিয়ে এনেছে, আমরা তো শিক্ষার অবনমন ঘটিয়ে বাংলা প্রচলন, বাংলা ভাষার প্রসার চাইনি। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ভাষা থেকে বাংলায় অনুবাদের পরিমান এতই ক্ষীণ যে, মাত্র ইংরেজী ভাষা ছাড়া অন্যকোন ভাষার উল্লেখ করা সম্ভব নয়। খোঁজ নেওয়া যেতে পারে, আমাদের দেশের পাবলিক বিশ^বিদ্যালয় এবং প্রাইভেট বিশ^বিদ্যালয়গুলোর বাংলা ভাষার জায়গাটি কেথায়?
প্রকৃতপক্ষে, আলাদা করে চর্চার মাধ্যম কোন ভাষার প্রচলন বাড়ানো যায় না, তাতে শুদ্ধতর করা যায় না, উন্নততর করা যায় না। ভাষার কাছ এক ধরনের প্রতিফলন মাত্র। প্রতিফলনটি সমগ্র জীবনের। জনগোষ্ঠীর কর্ম জগতের তার বিত্ত, প্রতিপত্তি, সম্পদ বৃদ্ধি ও উৎপাদন যেখানে যতটা অগ্রগতি ঘটে, ভাষা তারই প্রতিফলন ঘটায়।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট