চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

নিয়ন্ত্রণে চাই কঠোর পদক্ষেপ অস্থির চালের বাজার

২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ | ১:৩৮ পূর্বাহ্ণ

আবারো মুনাফাশিকারি সিন্ডিকেটগুলোর লোলুপ দৃষ্টি পড়েছে চালের বাজারে। তাদের কারসাজিতে অনেকটা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে চালের দাম। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর বলছে, মিলমালিক ও সংশ্লিষ্ট সিন্ডিকেটের কারসাজিতেই চালের দাম বাড়ছে। গত এক মাস ধরে চালের বাজার অস্থির। বিভিন্ন অজুহাতে মোকামগুলোতে দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন মিলমালিকরা। গত মাসের শেষের দিকে সরকার চাল রপ্তানিতে ১৫ শতাংশ প্রণোদনা ঘোষণা দিলে চালের দাম আরো এক দফা বেড়ে যায়। গত দুই সপ্তাহে সব ধরনের চালের দাম বস্তায় ১০০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে গেছে। যদিও অবস্থা বিবেচনায় সরকার সোমবার চাল রপ্তানির সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে, তবে বাজারে এর প্রতিফলন নেই তেমন। পাইকারি ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, মিলমালিকরা সিন্ডিকেট করে চালের দাম বাড়াচ্ছেন। এ অবস্থায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষ। সন্দেহ নেই পেঁয়াজ, শাক-সবজি, ডাল, তেলসহ বিভিন্ন নিত্যপণ্যে বেশি দাম দেয়ার পাশাপাশি চড়া দামে চাল কেনার কারণে স্বল্প আয়ের পরিবারগুলো বাড়তি চাপের শিকার হচ্ছে। চালের বাজারের এমন চিত্র দুঃখজনক। এতে স্বল্প আয়ের মানুষদের দুর্ভোগের পরিধি আরো বাড়বে। বাজারের ওপর এবং বাজার কুশীলবদের ওপর সরকারি নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা কার্যকর থাকলে এমন চিত্র দেখতে হতো না নিশ্চয়ই।

চাল রপ্তানির অনুমোদন দেয়ার পর দাম বাড়লে সরকার রপ্তানিতে প্রণোদনা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় এই ভেবে যে, এতে ব্যবসায়ীরা হয়তো দাম বাড়ানোর পথ থেকে সরে আসবেন। কিন্তু বাস্তবে ঘটেছে তার উল্টোটা। মুনাফাশিকারিরা বেপরোয়া হয়ে উঠে। তারা নানা কৌশলে চালের বাজার অস্থির করে তোলে। প্রসঙ্গত, চাল রপ্তানি ও রপ্তানিতে প্রণোদনার সিদ্ধান্ত ঘোষণার আগে সরকার বাজারদরের তুলনায় বেশি দামে ধান-চাল কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এতে প্রথম দফায় চালের দাম বাড়ে। সেই সময় বস্তায় সর্বোচ্চ ২০০ টাকা পর্যন্ত চালের দাম বেড়েছে। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের হিসাবে, গত এক মাসে শুধু সরু চালের দামই ৫ শতাংশ বেড়ে গেছে। সরু চালের কেজি ৫০ থেকে বেড়ে ৫৫ টাকা পর্যন্ত হয়েছে। মোটা চালের দাম ৩০ থেকে ৩২ টাকা ছিল এক মাস আগে। তা বেড়ে এখন ৩৫ টাকা হয়েছে। অন্যান্য চালের দামও কমবেশি বেড়েছে। গত সপ্তাহে বাংলাদেশ পুলিশের বিশেষ শাখা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে দেওয়া গোপন প্রতিবেদনে জানায়, ব্যবসায়ী, আড়তদার ও মিলমালিকদের সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে নিত্যপণ্যের বাজার। আবার চালের দাম বাড়ানোর পাশাপাশি পর্যাপ্ত উৎপাদন ও মজুদ থাকা সত্ত্বেও আসন্ন রমজান মাস ঘিরে ছোলা, মটর ডালসহ আরো কয়েকটি পণ্যের দাম বাড়ানোর পাঁয়তারা করছেন অতি মুনাফালোভী সিন্ডিকেটগুলো। চীনের করোনাভাইরাসে ‘আমদানি বন্ধের’ গুজব ও অজুহাত তুলে মসলাজাতীয় পণ্যের দাম বাড়ানোরও অপচেষ্টা অব্যাহত আছে। পেঁয়াজের বাজারে এখনো স্বাভাবিক চিত্র ফিরে আসেনি, পাশাপাশি একযোগে বেড়ে চলেছে ডাল ডিম তেল ও মাছ-মাংস থেকে শুরু করে প্রতিটি পণ্যের দাম। এতে নাভিশ্বাস উঠেছে স্বল্প আয়ের সাধারণ মানুষের। এ অবস্থায় চালের দামও লাগামহীন বাড়তে থাকলে সাধারণ মানুষের জীবন আরো দুর্বিষহ হয়ে উঠবে।

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর কঠোর নজরদারীর অভাবে মুনাফাশিকারিদের অপতৎপরতায় বার বার লাগামহীন হয়ে পড়ছে চালের বাজার। এতে বিপাকে পড়ছে নিম্ন আয়ের মানুষ। এমতাবস্থায় সরকারের উচিত হবে জনস্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়ে অনতিবিলম্বে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা। মনে রাখা দরকার, চাল এ দেশের মানুষের প্রধান খাদ্য। সংগত কারণে এর অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি সাধারণ মানুষের জীবনে দুর্ভোগ বয়ে আনে। তাই এ ব্যাপারে কোনো ধরনের খামখেয়ালির সুযোগ নেই। চালের বাজার সহনীয় করতে কার্যকর কর্মপন্থা অবলম্বন জরুরি। চালের বাজার তদারকিতে মাঠপর্যায়ে বাড়াতে হবে কঠোর নজরদারি। পাশাপাশি টিসিবির ডিলারদের কার্যক্রমও জোরদার করতে হবে। নিয়মিত করা দরকার খোলাবাজারে চালবিক্রি, ওএমএস কার্যক্রম। একইসঙ্গে নিশ্চিত করা প্রয়োজন সরকারের সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনী কর্মসূচিগুলোর মাঠপর্যায়ে কঠোর নজরদারি। অতি মুনাফালোভীচক্রের কারণে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর জীবনে দুরবস্থা নেমে আসবে, তা কারো কাম্য হতে পারে না। যেভাবেই হোক, জনগণকে এই জিম্মিদশা থেকে উদ্ধার করতে হবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট