চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

সর্বত্র বাংলা ভাষার ব্যবহার চাই

২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ | ১:৩৮ পূর্বাহ্ণ

মাতৃভাষার জন্য আমরা লড়াই করেছি। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা বাংলার জন্য প্রাণ দিয়েছিল রফিক, সালাম, বরকত, জব্বার। তাদের মহান আত্মত্যাগের ফলে বাংলা পেয়েছে রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি। বায়ান্নর একুশে সারা বিশ্বে গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত হয়ে আছে। ১৯৯৯ সাল থেকে একুশে ফেব্রুয়ারি বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে উদযাপিত হচ্ছে। এ দিবসের উদ্দেশ্য স্ব স্ব জাতির মাতৃভাষার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন, ভালোবাসা জাগিয়ে তোলা। এক্ষেত্রে আমাদের দেশের দায়িত্ব অনেক। অথচ সর্বস্তরে বাংলা ভাষার ব্যবহার আমরা নিশ্চিত করতে পারিনি।

অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানেরই নামকরণ করা হয়েছে বিদেশি ভাষায়। কোথাও বিদেশি শব্দ লেখা হয়েছে বাংলায়। আবার কোথাও অহেতুক বাংলা শব্দকে ইংরেজিতে লেখা হয়েছে। আবার কোথাও বা বাংলা-ইংরেজির মিশেল আর ভুল বানানের ছড়াছড়ি। ফেসবুক থেকে শুরু করে সর্বত্র ইংরেজি বা বাংলার মতো করে ইংরেজি (বাংলিশ) ভাষা ব্যবহার করা হচ্ছে। অনেক শিক্ষিত ব্যাক্তিদের মধ্যে দেখা যায় বাংলা লেখার সময় ভুলে ভরা থাকে লেখার বৃহৎ অংশ জুড়ে। অফিস থেকে শুরু করে ছোট ছোট শিশুদের স্কুলেও ব্যবহার করা হচ্ছে ইংরেজি ভাষা।

বাংলাকে অনেকটা অবহেলার চোখে দেখে শহরের আনাচে-কানাচে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল। স্কুলের শিক্ষার্থীরা নিজের নাম ছাড়া অনেক কিছুই বাংলায় বলতে ব্যর্থ হয়। তাদেরকে বাংলা বুঝাতে হলে ইংরেজিতে বলতে হয়। এ চিত্রপুত্তলিকা দেখার জন্য কী ভাষা জন্য রক্ত দিয়েছিল? নেই আমাদের কাছে তার কোন স্পষ্ট উত্তর। বাস্তব অবস্থা এমন যে এসব দেখার যেন কেউ নেই। বাংলা ভাষা প্রচলন আইন না মানলে অসদাচরণের অভিযোগে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা। কিন্তু কারো বিরুদ্ধে এমন কোনো ব্যবস্থা নেয়ার নজির নেই। এই আইন ছাড়াও সব সরকারের সময় আদেশ-নির্দেশের মাধ্যমে সর্বস্তরে বাংলা ব্যবহারের জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কিন্তু কাজ হয়নি। ভাষা সৈনিকরাই বলছেন, বাংলার ব্যবহার দিন দিন কমছে আর বাড়ছে ভুল বাংলার প্রয়োগ।

সর্বত্র বাংলার প্রচলন করতে চাইলে এসব বিষয়ে নজর দিতে হবে। বাংলাভাষায় উচ্চ শিক্ষা ও বিশেষায়িত শিক্ষার বই প্রকাশে সচেষ্ট হতে হবে। বই পড়া, পাঠাগার আন্দোলনের বিস্তৃৃতি ঘটানো প্রয়োজন। প্রমিত বাংলা বানানরীতির ব্যবহারে অভ্যস্ত হতে হবে। মনে রাখতে হবে, ভাষার বিকৃতি এক ধরনের মানসিক ব্যাধি, এ থেকে রক্ষা পেতে রাষ্ট্র-সমাজ, পরিবার ও শিক্ষক, পেশাজীবী সম্প্রদায়ের ভূমিকা ব্যাপক, সর্বোপরি ভাষার প্রতি ভালবাসা থাকতে হবে আমাদের।

শামীম শিকদার
কুষ্টিয়া।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট