চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

প্রসঙ্গ গার্মেন্টকর্মীদের জীবনমানের উন্নয়ন

অধ্যাপক রতন কুমার তুরী

১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ | ৭:১৯ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশে ৮০’র দশকের পর থেকে গার্মেন্টস শিল্পে যে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হয়েছিল তা বর্তমানেও অব্যাহত রয়েছে। যদিও বিভিন্ন দেশে কোটার কারণে এই শিল্পের কিছুটা সমস্যা রয়েই গেছে। তবুও সার্বিক বিবেচনায় গার্মেন্টস শিল্পটি এখনও ভালো অবস্থানেই আছে।

এই শিল্পটির সবচেয়ে কার্যকরি এবং প্রয়োজনীয় উপাদান হলো শ্রমিক, আর গার্মেন্টস শিল্পে প্রায় ৯৫% শ্রমিক হলো নারি। নারিদের শ্রমে এবং ঘামে গার্মেন্টস শিল্পটি আজ বাংলাদেশের অন্যতম বৈদেশিক অর্থ উপার্জনের ক্ষেত্র হিসেবে পরিণত হয়েছে।
এই সেক্টরে বর্তমানে লক্ষ লক্ষ নারিশ্রমিক কাজ করছে। এতো বিপুলসংখ্যক নারিশ্রমিকদের জীবনমানের উন্নয়নের জন্য বিদগ্ধজনদের তেমন ভাবনা-চিন্তা দেখা যায়না। একেবারে সস্তামূল্যে শ্রম দেয় এ সমস্ত নারিশ্রমিকরা।

সকাল থেকে অনেক সময় রাত অবধি এদের শ্রম দিতে হয়। বিনিময়ে এরা যা পারিশ্রমিক পায় তা দিয়ে সংসার চালানো কষ্টকর। অনেক ক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রী উভয়ে চাকরি করেও সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়। গার্মেন্টস সেক্টরসমূহে বর্তমানে হাজার হাজার কোটি টাকার ইনভেস্ট করে চলেছে মালিকপক্ষ। কিন্তু গার্মেন্টস শ্রমিকদের জীবনমানের উন্নয়নের দিকে তাদেরকে নজর দিতে তেমন দেখা যায় না। বিশেষ করে গার্মেন্টস সেক্টরে নারিশ্রমিকদের মালিকপক্ষ ঠকায় বেশি। গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিগুলোতে অসংখ্য স্বল্প শিক্ষিত নারি কাজ করার সুযোগ থাকায় এই সেক্টরে এরা কম মজুরীতে চাকরিতে ঢুকে পড়ে। পরে দেখা যায় বেশ কয়েক বছর চাকরি করলেও তাদের বেতন বাড়ে না। বেতন বাড়ানোর কথা বললে তাদের চাকরি থেকে ছাঁটাইয়ের হুমকি দেয়।

অভিযোগ আছে, অনেক সময় দেখা যায় গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিগুলোতে অমানবিকভাবে নারিশ্রমিকদের খাটাচ্ছে কিন্তু বেতন দিচ্ছে অনেক কম। দেশে নারিদের জন্য অন্য কোনো চাকরির জায়গা তেমন গড়ে না ওঠায় নারিরা গার্মেন্টেসই বেশি ঝুঁকছে। নারীশ্রমের কারণে আজ বাংলাদেশের গার্মেন্টসশিল্প এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু গুটিকয় ছাড়া বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই লভ্যাংশ থেকে নারীশ্রমিকদের উন্নয়নে দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেই। এতে প্রচুর শ্রম দিয়ে পোশাকখাতের উন্নয়ন সাধন করলেও তারা জীবনমানে পিছিয়ে যাচ্ছে। বিশ^ প্রতিযোগিতায় পোশাককাতকে দাপটের সাথে প্রতিষ্ঠা করতে নারীশ্রমিকদের নিরাপত্তা, মর্যাদা ও জীবনমান বৃদ্ধির প্রতি নজর দেয়া জরুরি।

আমাদের দেশে কিছু গার্মেন্টস নারিশ্রমিকদের জীবনমানে নানামাত্রিক পদক্ষেপ নিয়েছে। তারা শ্রমিকদের জন্যে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন, ছেলেমেয়েদের পড়ালেখার ব্যবস্থা করেন, চিত্ত-বিনোদন ব্যবস্থা করেন, যৌক্তিক বেতন-ভাতা দেন, কর্মস্থলে নিরাপদে ও সম্মানের সাথে আসা-যাওয়ার ব্যবস্থাসহ প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেন। তাদের পদাঙ্ক অনুসরণে অন্যদেরও এগিয়ে আসা উচিত। মনে রাখা দরকার, শ্রমিকদের ন্যায্য সুযোগ-সুবিধা দিলে মালিকরাই বেশি লাভবান হবেন। কারণ শ্রমিকরা তখন মনপ্রাণ উজাড় করে প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নের জন্যে কাজ করবেন। মালিক-শ্রমিক সম্পর্ক সুদৃঢ় হলে প্রতিষ্ঠানের অস্থিরতাও তৈরি হবে না। এতে প্রতিষ্ঠান লাভবান হবে। অনেক সময় আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের শর্ত থাকে গার্মেন্টস শ্রমিকদের জীবন মানের উন্নয়ন, ফ্যাক্টরির আধুনিকিকরণ এবং গার্মেন্টস সেক্টরের পরিবেশ উঁচুমানের করা কিন্তু এসমস্ত বিষয়ে অনেক মালিক তেমন এগিয়ে আসতে দেখা যায়না। প্রকৃতপক্ষে তাদের বুঝা উচিত বাংলাদেশের গার্মেন্টস সেক্টরসমূহে লক্ষ লক্ষ নারিশ্রমিক অবিরামভাবে তাদের শ্রম দিয়ে চলেছে। তাদের একনিষ্ঠ আন্তরিকতা ও শ্রমের উপরই দাঁড়িয়ে আছে সেক্টরটি। তাই তাদের জীবনমানের উন্নয়নও জরুরি।

অধ্যাপক রতন কুমার তুরী কলেজ শিক্ষক, প্রাবন্ধিক, মানবাধিকারকর্মি।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট