চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

সম্পাদকীয়

প্রধানমন্ত্রীর ব্রুনাই সফরে সহযোগিতার দুয়ার খুলে গেলো

২৭ এপ্রিল, ২০১৯ | ১:২২ পূর্বাহ্ণ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তিন দিনের ব্রুনাই সফরের নানামাত্রিক তাৎপর্যপূর্ণ রয়েছে। এই সফর সুযোগ তৈরি করেছে দুই দেশের বাণিজ্য সম্প্রসারণের। মসৃণ করেছে বাংলাদেশে ব্রুনাইয়ের বিনিয়োগের পথ। সফরকালে আমাদের প্রধানমন্ত্রী ব্রুনাইয়ের সুলতান হাজী হাসান আল বলকিয়ার সঙ্গে বৈঠকে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় অঞ্চলে ইসলামী সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) পাঁচ সদস্য রাষ্ট্র বাংলাদেশ, মালদ্বীপ, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ও ব্রুনাইয়ের সমন্বয়ে ‘সাউথ-ইস্ট এশিয়া কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন’ (সিয়াকো) নামে একটি নতুন আঞ্চলিক অর্থনৈতিক ফোরাম গঠনেরও প্রস্তাব দিয়েছেন। ‘অনুকূল বিবেচনা’র কথা বলে প্রস্তাবটির প্রতি ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছেন সুলতান। দু’দেশের মধ্যে কৃষি, মৎস্য, পশুসম্পদ, সংস্কৃতি ও ক্রীড়া এবং এলএনজি সরবরাহের ক্ষেত্রে সহযোগিতা জোরদার করার উদ্দেশ্যে স্বাক্ষরিত হয়েছে সাতটি চুক্তি। এর মধ্যে আছে ছয়টি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) এবং একটি বিনিময় নোট। সব বিবেচনায় বলতে হয় প্রধানমন্ত্রীর এই সফর ভ্রাতৃপ্রতিম দুই দেশের সুসম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে।

ব্রুনাই দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একটি ধনী রাষ্ট্র। এটি একটি রাজতান্ত্রিক মুসলিম দেশ। ব্রুনাইয়ের সুলতান হলেন একাধারে রাষ্ট্র ও সরকারের প্রধান। সরকারের হাতে নির্বাহী ক্ষমতা ন্যস্ত। দেশটিতে ২০ সদস্যবিশিষ্ট একটি আইন প্রণয়ন কাউন্সিল আছে, তবে এর সদস্যেরা আইন প্রণয়নে কেবল পরামর্শদাতা হিসেবে কাজ করেন। ব্রুনাইয়ের সংস্কৃতি মালে সংস্কৃতি এবং ইসলাম ধর্ম দ্বারা প্রভাবিত। দেশটি ভৌগোলিক দিক দিয়ে ক্ষুদ্র হলেও তেলসম্পদে সমৃদ্ধ এবং বিশে^র অন্যতম ধনী দেশ হিসেবে স্বীকৃত। অন্যদিকে বাংলাদেশও দক্ষিণ এশিয়ার একটি উদীয়মান অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে আবির্ভুত হয়েছে এখন। উচ্চপ্রবৃদ্ধির মধ্য দিয়ে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্বে বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন একটি সুদৃঢ় সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, গতিশীল বেসরকারী খাত এবং বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ক্রমবর্ধমান প্রবণতা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। সারাবিশে^ গণ্য হচ্ছে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে। এখন বাংলাদেশ বিদেশী বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে বহুমাত্রিক উদ্যোগ নিয়েছে। সম্প্রতি সৌদি আরব বাংলাদেশে বিদ্যুৎ ও জনশক্তিসহ ১৬টি খাতে প্রায় আড়াই হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগ করার ইচ্ছা ব্যক্ত করেছে। এ লক্ষে দুটি চুক্তি ও চারটি সমঝোতা স্মারকও সই হয়েছে। আরো কয়েকটি দেশও বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এখন প্রধানমন্ত্রীর সফরের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে ব্রুনাইয়ের উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগেও একটি সুযোগ সৃষ্টি হলো।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ এখন দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে উদার বৈদেশিক বিনিয়োগ সুবিধাসম্পন্ন দেশ। বাংলাদেশ এখন আইন দ্বারা বিদেশি বিনিয়োগের সুরক্ষা, উদার করনীতি ও যন্ত্রপাতি আমদানির ওপর সুবিধাজনক শুল্কব্যবস্থাসহ বিদেশি বিনিয়োগে নানা সুবিধা দিচ্ছে। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য গড়ে তোলা হয়েছে ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চল। ব্রুনাইয়ের বিনিয়োগকারীরাও এসব সুবিধা নিতে পারে। আমাদের বিশ^াস, প্রধানমন্ত্রীর সফরকালে চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সইয়ের পর দেশটির উদ্যোক্তারা এ ব্যাপারে এগিয়ে আসবেন। ব্রুনাইয়ের শ্রমবাজারেও বাংলাদেশি কর্মীর প্রচুর চাহিদা রয়েছে। যথাযথ উদ্যোগ নেয়া হলে দেশটিতে বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য শ্রমবাজার সম্প্রসারিত হওয়ার সুযোগ তৈরি হবে, সন্দেহ নেই। এতে দুই দেশই উপকৃত হবে।

শিল্পখাতের দ্রুত সম্প্রসারণের ফলে বাংলাদেশ গত পাঁচ বছরে বার্ষিক রফতানি আয় দ্বিগুণ করেছে। গার্মেন্টস খাতে বাংলাদেশের সাফল্য বিশ্বব্যাপী পরিচিত। চীনের পর বাংলাদেশই বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম রেডিমেড গার্মেন্টস রফতানিকারক দেশ। মানসম্মত ওষুধের জন্য একটি বড় বৈশ্বিক কেন্দ্র হিসেবেও বাংলাদেশ দ্রুত গড়ে উঠছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া এবং আফ্রিকাসহ ১০০রও বেশি দেশে বাংলাদেশ ওষুধ রফতানি করছে। বিশ্বমানের সমুদ্রগামী জাহাজ নির্মাণ করে বাংলাদেশ বৈশ্বিক মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। বাংলাদেশী কোম্পানিগুলো ইউরোপসহ ১৪টি দেশে যাত্রী ও মালবাহী জাহাজ সরবরাহ করছে। সফটওয়্যার হচ্ছে বাংলাদেশের আরেকটি প্রতিশ্রুতিশীল শিল্প। বাংলাদেশের কৃষিভিত্তিক পণ্য, গৃহস্থ যন্ত্রপাতি, হালকা প্রকৌশল পণ্য এবং ইলেক্ট্রনিক গেজেট বিশ্ববাজারে স্থান করে নিয়েছে। এসব বিবেচনায় বাংলাদেশকে দ্রুত বিকাশমান সোর্সিং গন্তব্য, উদীয়মান উৎপাদন ও বিতরণকেন্দ্র এবং একটি বর্ধমান ভোগ অর্থনীতি হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে। প্রবৃদ্ধি ও সমৃদ্ধির লক্ষ্যে অভিন্ন যাত্রায় বাংলাদেশের ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের সঙ্গে ব্রুনাইয়ের ব্যবসায়ীদের একটি অংশীদারিত্ব গড়ে উঠলে দু’দেশই লাভবান হবে। আমাদের প্রত্যাশা, প্রধানমন্ত্রীর সফরের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ও ব্রুনাইয়ের ভ্রাতৃপ্রতীম সম্পর্কের উত্তরোত্তর শ্রীবৃদ্ধি ঘটবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট