চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

আমাদের প্রাণঢালা অভিনন্দন বাংলাদেশের উনিশের বিশ্বজয়

১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ | ৭:৩২ পূর্বাহ্ণ

১৩তম যুব ক্রিকেট বিশ্বকাপে উনিশের যুবাদের হাত ধরে বিশ্ব জয় করল বাংলাদেশ। পচেফস্ট্রুমে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের চরম উত্তেজনাপূর্ণ ফাইনালে চারবারের চ্যাম্পিয়ন ভারতকে ডিএল মেথডে ৩ উইকেটে হারিয়ে প্রথমবারের মতো শিরোপা নিজেদের করে নিলেন আকবর আলী-পারভেজ হোসেন, শরিফুল ইসলামরা, তানজীব হাসানরা। যুবক্রিকেটের শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট এখন বাংলাদেশের। মেধা, প্রজ্ঞা, প্রচেষ্টা, প্রতিভার সম্মিলনে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের ভুবনজয়ী এই বাংলাদেশ। ঊনিশের এই যুব টাইগাররা ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং প্রতিটি বিভাগে অসামান্য নৈপুণ্য দেখিয়ে ভারতের বিপক্ষে শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট করায়ত্ত্ব করে ক্রিকেট দুনিয়াকে আগামিতে দাপটের সাথে লাল-সবুজের রাজত্বের সুস্পষ্ট বার্তা দিলেন। যুব ক্রিকেট বিশ^কাপ জয় করে যুব টাইগাররা জানান দিল তারা দুর্নিবার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। অসাধারণ এ জয়ের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ পৌঁছে গেছে অনন্য উচ্চতায়। এখন আনন্দে ভাসছে দেশবাসী। দেশের সোনার ছেলেদের নিপুণ ক্রিকেটশৈলীতে আমরাও উল্লসিত। বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে আমাদের প্রাণঢালা অভিনন্দন।

যুবক্রিকেট দলের হাত ধরেই প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের শিরোপা জিতলো লাল-সবুজের বাংলাদেশ। আজ পর্যন্ত বাংলাদেশের কোন ক্রিকেট দল শিরোপা জয় করে আনতে পারেনি। যুব ক্রিকেট দলই তা করে দেখিয়ে দিলো। পুরো বিশ্বকাপজুড়ে দাপট দেখিয়ে খেলেছেন বাংলাদেশ যুবারা। তবে বিশ্ব শিরোপা জয়টি সহজে আসেনি। ভারতকে ১৭৭ রানে গুটিয়ে দিয়ে এবং উদ্বোধনী জুটিতে ৫০ রান তুলে ফেলার পরও না। রবি বিষ্ণয়ের লেগস্পিন ভেলকি আর নিজেদের শট নির্বাচনের ব্যর্থতায় ১০২ রানেই চলে গিয়েছিল ৬ উইকেট। ১৭৮ রানের লক্ষ্যটা তখন বহু দূরের পথ। ব্যাটসম্যান বলতে অধিনায়ক আকবর আলী; সঙ্গে পেশির টানে মাঝপথে মাঠ ছেড়ে যাওয়া বাঁহাতি ওপেনার পারভেজ হোসেন ইমন। পেইন কিলার নিয়ে তিনি দলের প্রয়োজনে ফেরেন সপ্তম উইকেটে। সঙ্গ দেন আকবরকে। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে দু’জন মিলে দলের স্কোরবোর্ডে মহামূল্যবান ৪১ রান যোগও করেন। তবে ইমন ৭৯ বলে ৪৭ রান করে আউট হওয়ার পরও জিততে দরকার ছিল ৩৫ রান। যুব ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ ১৩ রান করা রকিবুল হাসানকে নিয়ে আকবর তখন প্রায় নিঃসঙ্গ নাবিকের মতো। আছে বৃষ্টির চোখরাঙানি। উইকেট পড়লে ডিএল মেথডে এসে পিছিয়ে পড়ার শঙ্কা আছে। তবে ঘাবড়ে যাননি আকবর। তিনি ধীরস্থির ভাবে দক্ষতার সাথে প্রতিকূল হয়ে ওঠা মুহূর্তটি মোকাবিলা করেন। ইমন আউট হওয়ার পর টানা ১৭ বলে কোনো রান নেননি তিনি। এরপর রকিবুলও পিচে কিছুটা গুছিয়ে ওঠার পর আস্তে আস্তে রানের জন্য শট খেলতে থাকেন। ফলে কোনো বিপদ ছাড়াই ডিএল মেথডে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। বৃষ্টিতে খেলা বন্ধের মুহূর্তে ৫৪ বলে ১৫ রান দরকার ছিল বাংলাদেশের। কিছুক্ষণ খেলা বন্ধের পর পরিবর্তিত লক্ষ্য দাঁড়ায় ৩০ বলে ৭ রানের। আকবর বিচক্ষণতার সাথেই লক্ষ পূরণ করেন। ৭ বল খরচায় তা নিপুণ দক্ষতায় তুলে নেন। আর এর মধ্য দিয়েই যুব ক্রিকেট বিশ^কাপের শ্রেষ্ঠত্বে মুকুট চলে আসে বাংলাদেশের হাতে।

উল্লেখ্য, দক্ষিণ আফ্রিকার পোচেফস্ট্রুমে টস জিতে আগে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ যুব দল। কারণ আগে ফিল্ডিং করে রান তাড়া করে জয়ের ক্ষেত্রে অসাধারণ করেছেন বাংলাদেশ যুব ক্রিকেট দল। শুধু গ্রুপপর্বে দক্ষিণ আফ্রিকা যুব দলের বিরুদ্ধে আগে ব্যাটিং করে জিতেছে বাংলাদেশ যুব দল। বাকি সব ম্যাচেই রান তাড়া করে জিতেছে। ফাইনালেও তাই আগে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্তই নেয়া হয়। দাপটের সাথে খেলে প্রতিপক্ষ ভারতকে মাত্র ১৭৭ রানে গুটিয়ে দেয়। ৪৭.২ ওভারে এই রান করে অলআউটও হয় ভারত যুব দল।শুরু থেকেই বাংলাদেশ যুবা বোলাররা অসাধারণ চাপে রাখেন ভারত যুবা ব্যাটসম্যানদের। পাওয়ার প্লে’র প্রথম ১০ ওভারে ২৩ রানের বেশি করতে পারেনি তারা। কি পরিমাণ যে চাপে রাখা গেছে তা বোঝাই যাচ্ছে। বোলারদের ঐক্যবদ্ধ বোলিং আর ফিল্ডারদের আত্মবিশ্বাসী ফিল্ডিংয়ে তছনছ হয়ে যায় ভারত যুব দলের ব্যাটিং লাইনআপ। তবে এত কম রান করেও পূর্বঅভিজ্ঞতার প্রেক্ষিতে ভারত যুব দল জেতার আশা করেছিল। কারণ গত বছর যুব এশিয়া কাপের ফাইনালে ১০৬ রান করেও ৫ রানে বাংলাদেশ যুব দলকে হারিয়েছিল। কিন্তু ভারতের আশা পূরণ হওয়ার সুযোগ দেয়নি লাল-সবুজের বাংলাদেশ। বাংলাদেশ যুব ক্রিকেট দল সব কৌশল, চেষ্টা ও আত্মবিশ^াসকে জয়ের জন্যে উৎসর্গ করেছে। এতে শেষ পর্যন্ত সাফল্য ধরা দিতে বাধ্য হয়। ৭ উইকেট হারিয়ে ১৭০ রান করেই জিতে যায় বাংলাদেশ যুব দল।

যে কোনো বিবেচনায় ৪ বারের চ্যাম্পিয়ন ভারত ছিল স্বাভাবিকভাবেই ফেবারিট। তবে যুবা টাইগারদের দুর্দান্ত পারফরমেন্সের কাছে তারা হার মানতে বাধ্য হয়। শুধু তাই নয়, বিশ^কাপ জুড়েই ছিল টাইগারদের দাপুটে বিচরণ। আর ফাইনালে ফেবারিট ভারতকে নাস্তানাবুদ করে শ্রেষ্ঠত্বে মুকুট ছিনিয়ে এনেছে। সংগতকারণে যুবা টাইগারদের সক্ষমতা বিবেচনায় এই অবিস্মরণীয় জয় সব ক্রিকেটপ্রেমীর কাছে প্রত্যাশিত ছিল। যুব টাইগাররা ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং প্রতিটি বিভাগে অসামান্য নৈপুণ্য দেখিয়ে ভারতকে হার মানতে বাধ্য করে শিরোপা জয়ের মাধ্যমে সে প্রত্যাশা পূরণ করলো। তবে শিরোপা জয়ের আনন্দে আত্মহারা না হয়ে ক্রিকেটের অগ্রগতির এই ধারাবাহিকতা অটুট রাখতে সংশ্লিষ্ট সবাইকেই আন্তরিক থাকতে হবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট