চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

করোনা ভাইরাসের বিস্তার : আতঙ্ক নয়, সচেতনতাই কাম্য

ডা. মোহাম্মদ ওমর ফারুক

২ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ | ১:০৫ পূর্বাহ্ণ

বর্তমানে বিশ্বে টক অব দ্যা ওয়ার্ল্ড করোনাভাইরাস। সারা বিশ্ব এখন ভয়ে জড়োসড়ো-কম্পমান পৃথিবীর প্রতিটা অণু পরমাণু। চীনের ছোট্ট একটি শহর উহান-যেন এক জীবন্ত জাহান্নাম। আবাল-বৃদ্ধ-বণিতার বসবাস এখন মৃত্যুর শহরে। ডেঙ্গু নামক আরেকটি মরণঘাতি ব্যাধি তোলপাড় করেছিল এ দেশে, যা কষ্টের শহরে বসবাসরত মানুষগুলোর ঘুম হারাম করে দিয়েছিল। অনেক মানুষের মৃত্যু সুজলা-সুফলা-শস্য শ্যামলা, লাল পতাকার এই সবুজ দেশটাকে করেছে ক্ষত-বিক্ষত। তবুও শেষটা যেন হয় না।

প্রতিদিনকার অপরাধগুলো খুন, ধর্ষণ, রাহাজানি, বেহায়াপনা, দেশের মানুষকে করে তুলেছে চরম বিপর্যস্ত। ‘যখনই কোন জাতির ভেতর অশ্লীলতা, বেহায়াপনা ও ব্যভিচারের প্রচলন ঘটবে, আল্লাহ তাদের মধ্যে মৃত্যু (অর্থাৎ অস্বাভাবিক ও অপরিণত বয়সে মৃত্যু) ব্যাপক করে দেবেন। যখনই কোন জাতি মাপে ওজনে কম বেশি করবে আল্লাহ তাদেরকে দুর্ভিক্ষ আর অজন্মার কবলে ফেলবেন। যখনই কোন জাতি যাকাত দেয়া বন্ধ করবে আল্লাহ তাদেরকে অনাবৃষ্টির কবলে ফেলবেন’- তাবারানীতে বর্ণিত রাসূল (সা.) উক্ত হাদিসটি বর্তমান বিশ্বে চলমান ঘটনাসমূহের জীবন্ত প্রতিচ্ছবি। করোনাভাইরাস-ভাইরাসগুলির মধ্যে এমন একটি গ্রুপ, যা বিভিন্ন পশু-পাখিসহ স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মাধ্যমে ছড়ায়। শুধু তাই নয়, আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশির মাধ্যমেও এটি ছড়ায়। এটির সংক্রমণের ফলে প্রচন্ড শ্বাসকষ্টের সম্মুখীন হতে হয় ভূক্তভোগীদের, যা প্রথমদিকে হালকা হলেও পরবর্তীতে প্রাণঘাতি হতে পারে।

গরু এবং শুকুরের মাধ্যমে ছড়ালে আক্রান্ত ব্যক্তির প্রচন্ড ডায়রিয়া এবং মুরগির মাধ্যমে ছড়ালে উচ্চ শ্বাসকষ্টের কারণ হতে পারে। দেহের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ অবশ হয়ে যাওয়া এবং নিউমোনিয়া-করোনাভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তির একটি উল্লেখযোগ্য লক্ষণ। করোনাভাইরাস প্রাথমিকভাবে স্তন্যপায়ী প্রাণী এবং পাখির উপরের শ্বাসযন্ত্র এবং গ্যাস্ট্রোইন্টেস্টাইনাল ট্র্যাক্টকে সংক্রমিত করে। এগুলো খামার প্রাণী এবং পোষা প্রাণীগুলোতেও বিভিন্ন ব্যাধির সৃষ্টি করে-যার মধ্যে কিছু মারাত্মক হতে পারে এবং এটি কৃষি শিল্পের জন্য হুমকিস্বরূপ। মুরগীতে সংক্রামক ব্রঙ্কাইটিস ভাইরাস-যা একটি করোনাভাইরাস, কেবল শ্বাসযন্ত্রের ট্র্যাক্টকেই নয়, ইউরোজেনিটাল ট্র্যাক্টকেও লক্ষ্য করে। ভাইরাসটি মুরগীর বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গেও ছড়িয়ে যেতে পারে। ইতোমধ্যে উহান শহরে উক্ত ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রায় দু’শতাধিক বনি আদমের মৃত্যু এবং ৮ হাজারের অধিক আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

চীন থেকে এক বাংলাদেশী যুবক তীব্র জ্বর নিয়ে ঢাকা বিমানবন্দরে রাত যাপন করেছেন গত ৩০ জানুয়ারি। বিগত ২৪ ঘণ্টায় চীন থেকে ৪০৬ জন বাংলাদেশী এসেছেন-তার মধ্যে ৭ জনের লালা পরীক্ষা করা হয়েছে। তবে কারো করোনাভাইরাস সনাক্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন আইইডিসিআরর পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা। দেশের বিভিন্ন বিমানবন্দর ও সীমান্ত অঞ্চলে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য থার্মো স্ক্যানার বসানো হয়েছে। চীন ছাড়াও বিশ্বের অনেক দেশের মানুষ এ ভাইরাসে ইতিমধ্যে আক্রান্ত হয়েছে। ফ্রান্স, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া, নেপাল, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান, থাইল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও ভিয়েতনামে এই ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী সনাক্ত করা গেছে। চীনে ইতিমধ্যে সার্স এবং আফ্রিকান সোয়াইন জ¦রের মতন বিভিন্ন প্রাণঘাতি রোগের প্রাদুর্ভাবের ঘটনা ঘটেছে।
করোনাভাইরাস চীনের উহান শহরে একটি মহামারি হিসাবে এর মধ্যেই পরিচিতি লাভ করেছে। এটি আরএনএ ভাইরাসের মধ্যে বৃহত্তম। এ ভাইরাস প্রাপ্তবয়স্ক এবং শিশুদের মধ্যে সর্দি, কাশি, জ্বর, গলা ফোলা উপসর্গ নিয়ে ধরা পড়ে। প্রধানত: শীতকাল এবং বসন্তে এটির প্রাদুর্ভাব ঘটে। ২০০২-২০০৩ সালে সার্স তথা ঝবাবৎব ধপঁঃব ৎবংঢ়রৎধঃড়ৎু ংুহফৎড়সব মহামারি আকারে বিস্তার ঘটেছিল চীনের দেশে।

এ রোগের প্যাথোজেনেসিস হল : এটি উপর এবং নি¤œ উভয় শসনতন্ত্রে সংক্রমণ ঘটে। উক্ত সার্স রোগে ৮ হাজারের বেশি মানুষ সংক্রমিত হয়েছিল-যার মধ্যে ৮০০ মানুষ মারা গিয়েছিল। এ সার্স মহামারি ঘটনার পরও চীন শিক্ষা লাভ করেনি। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনাটি চীনা সরকার ধামাচাপা দেওয়ার জন্য ইন্টারনেট, মিডিয়া ও নাগরিক সমাজের উপর কঠোর নিয়ন্ত্রন আরোপ করেছে। চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে এ ভাইরাসে আক্রান্ত প্রথম মৃত্যুর ঘটনাটি ঘটে ১১ জানুয়ারী এবং পরবর্তীতে এটি ছড়িয়ে পড়ে বেইজিং ও গুয়াংদংয়ে। মানব করোনাভাইরাসগুলোর ৭ টি স্ট্রেন রয়েছে : (১) হিউম্যান করোনাভাইরাস ২২৯ঊ (ঐঈড়া-২২৯ঊ) (২) হিউম্যান করোনাভাইরাস ওসি ৪৩ (৩) ঝধৎং- ঈড়ঠ (৪) হিউম্যান করোনাভাইরাস এনএল ৬৩ (৫) হিউম্যান করোনাভাইরাস এইচকিউ ১ (৬) মধ্যপ্রাচ্যের শ্বাসযন্ত্রের সিন্ড্রোম করোনাভাইরাস (৭) উপন্যাস করোনাভাইরাস (২০১৯-হঈড়ঠ)।

এ ভাইরাসগুলো আবিষ্কৃত হয়েছে ১৯৬০ এর দশকে। সর্বাধিক আবি®ৃ‹ত ভাইরাসটি হল : মুরগীর মাধ্যমে সংক্রামিত ব্রঙ্কাইটিস ভাইরাস, যা মানুষের সর্দির মাধ্যমে অনুনাসিক গহ্বর থেকে ছড়ায়। উক্ত দু’টি ভাইরাস হিউম্যান করোনাভাইরাস ২২৯ এবং হিউম্যান করোনাভাইরাস ওসি ৪৩ নামে পরিচিত। করোনাভাইরাস সনাক্তকরণের সুনির্দিষ্ট রাসায়নিক বা রিএজেন্ট বাংলাদেশে নেই বললেই চলে। কুর্মিটোলা হাসাপাতাল ও সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালকে এ ধরণের রোগীর চিকিৎসার জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

এটি প্রতিরোধের জন্য কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যেই কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন, যেমন : মাস্ক ব্যবহার করা, হ্যান্ডশেক করা থেকে বিরত থাকা, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন জীবনযাপন করা, সাবধানতার সাথে হাঁচি-কাশি দেওয়া, পশু পাখির সংস্পর্শে না আসা ইত্যাদি। চীনা সরকার যতই চেষ্টা করুক ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার জন্যে কিন্তু আরশের মালিক মহান আল্লাহতায়ালা ঠিকই দেখছেন। চীনের উইগুর মুসলমানদের উপর বছর বছর ধরে যে নির্যাতনের চিত্র আমরা গণমাধ্যমে দেখতে পাই, এ করোনাভাইরাস নামক মরণঘাতি আপদটি চীনা কমিউনিস্ট নেতাদের উপর মহাশক্তিধর আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বার্তা মাত্র। ‘তুমি কি দেখনি তোমার মালিক (কাবা ধ্বংসের জন্য আগত) হাতিওয়ালাদের সাথে কি ব্যবহার করেছেন? তিনি কি (সেদিন) তাদের যাবতীয় ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দেননি? তিনি তাদের উপর ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি পাঠিয়েছেন, এ পাখিগুলো তাদের উপর (নুড়ি) পাথরের টুকরো নিক্ষেপ করছিল আর তিনি তাদের জন্তু জানোয়ারের চর্বিত (ঘাসপাতা) এর মত করে দিলেন। সূরা ফিল ১-৫।

ডা. মোহাম্মদ ওমর ফারুক সভাপতি, রাউজান ক্লাব জুনিয়র কনসালটেন্ট (ইএনটি), জেনারেল হাসপাতাল, রাঙ্গামাটি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট