চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

শিশুর হাতে স্মার্ট ফোন নয়

অধ্যাপক রতন কুমার তুরী

১ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ | ২:২৩ পূর্বাহ্ণ

পৃথিবী এগিয়ে গেছে অনেক দূর, তার সাথে পাল্লা দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে মানুষ। এক সময়ের গুহাবাসী মানুষ নিজেদের চেষ্টায় মহাকাশ চষে বেড়াচ্ছে। নিজেদের প্রয়োজনে বিজ্ঞানকে ব্যবহার করে একের পর মানবসভ্যতাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। এক সময় মানুষ একটি খবর পাওয়ার জন্য দিনের পর দিন অপেক্ষা করতে হতো। এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাওয়ার জন্য একমাসের খাবার দাবার সাথে করে নিয়ে তারপর রওনা হতো। বর্তমানে দিন পাল্টে গেছে এখন পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তের মানুষের খবর নেয়া সেকেন্ড কিংবা মিনিটের ব্যাপার। মানুষ তার মেধাকে কাজে লাগিয়ে বিজ্ঞানকে পৃথিবীর মানুষের কাছাকাছি নিয়ে এসেছে ফলে মানুষ এর ব্যবহার করে নিজেদের জীবন যাত্রার মানকে অনেক উন্নত করেছে।

এখন মানুষ কম্পিউটার কিংবা মোবাইল টেকনোলজি ব্যবহার করে পৃথিবীর সকল প্রান্তের মানুষের খবর নিমিষেই নিয়ে নিচ্ছে। তাছাড়া কম্পিউটার টেকনোলজি বর্তমান বিশ্বে এতো বেশি জনপ্রিয় হয়েছে যে এই টেকনোলজি ছাড়া বর্তমান বিশ্ব প্রায় অচল বলা যায়। অফিস, আদালত, স্কুল,বিশ্ববিদ্যালয় সবখানেই কম্পিউটার টেকনোলজির জয়জয়কার। এখন অফিস আদালতে আর গাদা গাদা ফাইল দেখা যায়না, ট্রেন কিংবা গাড়ির টিকেটের জন্য দীর্ঘ লাইন ধরে কাউকে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় না এক মিনিটেই অনলাইনে টিকেট সংগ্রহ করা যায়। এমন টেকনলোজি থেকেই আজ আমরা স্মার্ট ফোনের জগতে আছি। একটি স্মার্ট ফোন বলা যায় মিনি কম্পিউটার। এই স্মার্ট ফোন দিয়েই বর্তামন বিশ্বে সব কিছুই করা যায়। একসময় কম্পিউটার, মোবাইল, ইলেক্ট্রনিকস যন্ত্রপাতি সব এনালগ ছিল বর্তামানে তা পাল্টে গিয়ে অধিক কার্যকরি হয়েছে। মানুষ স্মার্ট ফোন দিয়ে বিশ্বের একপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তের মানুষের সাথে একজন অন্য জনকে দেখে কথা বলছে যা এক দশক আগেও সম্ভব ছিলনা। মোবাইল ফোনেই লাখ লাখ নথি সংগ্রহ করে রাখছে।

এখন মোবাইলে এমন অনেক অসংখ্য এ্যাপস যুক্ত হয়েছে যা দিয়ে মানুষ তার দৈনন্দিন জীবনের সব কাজেই করতে পারে। তবে এসব স্মার্ট ফোন নিয়ে দেখা দিয়েছে চরম বিপত্তি। অপ্রাপ্ত বয়সের ছেলে মেয়েরা এর অপব্যবহার করতে শুরু করেছে। মোবাইল ফোন নিয়ে তারা ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটিয়ে দিচ্ছে। কোনো গেইম কখনওবা ফেসবুক এদেরকে যেনো দিন দিন অন্ধকারে নিমজ্জিত করছে। একজন শিশু তার মা বাবার মোবাইল ফোন নিয়ে প্রথম দিকে নড়াচড়া করলেও ক্রমেই সে এর ব্যবহারে পারদর্শী হয়ে ওঠে। নিত্যদিন মা বাবার গোচরে কিংবা অগোচরে সে মোবাইল ফোনে গেইম খেলতে খেলতে একসময় সে মোবাইলে নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে ফলে তার মধ্যে দেখা দেয় নানা মানষিক প্রতিক্রিয়া। এমন সময় তাকে দ্রুত এর থেকে ফেরাতে না পারলে তার জীবনে নেমে আসে অন্ধকার। আমরা আমাদের আশেপাশে এমন অনেক ভালো ছাত্রদের মোবাইল নেশার কারণে ঝড়ে পড়তে দেখেছি।

আমরা অনেক সময় লক্ষ্য করি না আমাদের সন্তানটি লুকিয়ে লুকিয়ে মোবাইলে কি গেইম খেলছে, মোবাইলে কার সাথে কথা বলছে এবং কোথায় যাচ্ছে। এই মোবাইল গেইমের কারণে অনেক ছেলে মেয়ের মৃত্যু পর্যন্ত হচ্ছে। প্রকৃত একটি নির্দিষ্ট বয়স পর্যন্ত সন্তানদের স্মার্ট ফোন কখনও দেয়া উচিত নয়। কারণ অল্প বয়সে স্মার্ট ফোন হাতে আসলে সে মোবাইলের ভালো দিকগুলোর চাইতে খারাপ দিকগুলোর দিকে আকৃষ্ট হবে বেশি। কারণ তার বয়সই হয়নি ভালো খারাপ বোঝার। সকল মানুষই বিজ্ঞানের সুফল পাবে। কিন্তু অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে-মেয়েদের হাতে স্মার্ট ফোন তুলে দিয়ে তাদের সর্বনাশ ডেকে না আনাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। কারণ এরাই দেশের ভবিষ্যৎ।

রতন কুমার তুরী কলেজ শিক্ষক, প্রবন্ধিক, মানবাধিকারকর্মি।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট