চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

পাহাড় কাটা বন্ধ হোক

সাইমুম চৌধুরী

২৮ জানুয়ারি, ২০২০ | ৫:২৮ পূর্বাহ্ণ

সরকারি জমি, পথচারীদের হাঁটার রাস্তা, পাহাড় টিলা বা নদীর পাশর্^বর্তী জমি দখল করে দোকানপাট, চাষাবাদ বা চলাচলের ব্যবস্থা করা দেশের মানুষের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। সম্প্রতি একটি জাতীয় দৈনিকে এরকম একটি খবর নজরে এলো।

প্রকাশিত খবরে জানা যায় ‘ইটভাটার পেটে আস্ত পাহাড়’ চলে গিয়েছে। প্রকাশিত সংবাদে জানা যায়, চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার পশ্চিমাংশে চূড়ামনি ও বাঁশখালী উপজেলার পূর্ব সীমানার লটমনি এলাকায় পাহাড়, টিলা ও বনের পাশেই গড়ে উঠেছে কয়েকটি ইটভাটা। স্থানীয় এলাকা বাসীর বরাতে জানা যায় প্রতিবছর ইট তৈরীর মৌসুমে পাশের পাহাড় ও টিলার মাটি কেটে ইট তৈরী হচ্ছে। ওই ইট তৈরীর পর নিয়মানুযায়ী সেগুলো পোড়ানো হচ্ছে বনের গাছের কাঠ দিয়ে। উল্লেখ্য একদিকে বিধাতার সৃষ্টি পাহাড় টিলার মাটি কেটে ধ্বংস হচ্ছে টিলা অন্যদিকে সেই ইট পোড়ানো হচ্ছে বনেরই গাছগাছালি দিয়ে। অতি সম্প্রতি পত্রিকার কলাম লেখক (মামুন মুহাম্মদ) সরেজমিনে ইটভাটা দেখতে যান। তিনি দেখতে পান লটমনি ও চূড়ামনি আধা কিলোমিটারের মধ্যে পাহাড় ও টিলার গা ঘেসে বিভিন্ন নামে ও মালিকানায় ৬টি ইটভাটায় পাহাড়ের মাটি দিয়ে তৈরী হচ্ছে ইট। আবার সেই ইট পোড়ানো হচ্ছে বনের গাছ কেটে। উল্লেখ্য, লটমনি মৌজার পূর্ব পাশে এবং চূড়ামনি মৌজার পশ্চিম পাশে একটি পাহাড় ছিল। পত্রিকার প্রতিবেদক ২০১৫ সালে গিয়ে সবুজ পাহাড় দেখেছিলেন। এই প্রতিবেদক ২০২০ এর ১৫ জানুয়ারি সেখানে গিয়ে পাহাড়ের কোন অস্তিত্ব দেখতে পেলেন না। এ আর বলার অপেক্ষা রাখে না বিগত কয়েক বছরে পুরো পাহাড়টাই পাহাড় খেকো মানুষেরা গিলে খেয়েছে। পত্রিকান্তে জানা যায়, ইট প্রস্তুত ও ইটভাটা স্থাপন আইন, ২০১৩ অনুযায়ী পাহাড় বা টিলা থেকে মাটি কেটে বা সংগ্রহ করে ইটের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না। তাছাড়া কোনো পাহাড় বা টিলার উপরিভাগে, ঢালে বা তৎসংলগ্ন সমতলে এবং পাদদেশ হতে আধা কিলোমিটারের মধ্যে কোনো ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না। কোনো ইটভাটায় কাঠ পুড়িয়ে ইট তৈরীর বিধান নেই। পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. ফেরদৌস আনোয়ার প্রথম আলোকে বলেন, গত বছর ইট পোড়ানোর মৌসুমে ওই এলাকায় ইটভাটাতে অভিযান চালিয়ে জরিমানা করা হয়েছিল। এখন প্রশ্ন জরিমানা করার পরও যখন ইটপোড়ানো বন্ধ হচ্ছে না তাহলে বলতে হয় বিদ্যমান আইন আরো কঠোর করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। বাংলাদেশ সহ সারা বিশে^র দেশে দেশে বহু পাহাড়, পর্বত টিলা রয়েছে যা মহান সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টি। আমাদের পৃথিবীটার আকৃতি গোলাকার। আবার গোলাকার এই পৃথিবীটা পানির উপর ভাসছে। তাই মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তাঁর বান্দারা যাতে এদিক ওদিক হেলে না যায় তার জন্য পৃথিবীতে অসংখ্য ছোট বড় পাহাড়, পর্বত, টিলা সৃষ্টি করে দিয়েছেন পেরেক সরূপ। আল্লাহপাক তাঁর প্রেরিত পাক কোরআনে সূরা আন্নাবায় বলেছেন Ñ “আমি যমিনকে বিছানা এবং পর্বত সমূহকে (যমিনের জন্য) পেরেক স্বরূপ নির্মাণ করি নাই”। তাই এটি সহজেই অনুমেয় কোন জিনিষে যেমন পেরেক মেরে দিলে তা এদিক ওদিক হেলে যায় না তদরূপ পৃথিবীকে আল্লাহ পাহাড় সমূহ দ্বারা স্থিরতা এনে দিয়েছেন। সবশেষে দেশবাসীর প্রতি অনুরোধ পাহাড়, পর্বত, টিলা ও বৃক্ষরাজি নিজেদের ক্ষুদ্র স্বার্থে কাটবেন না। আল্লাহ পাকের সৃষ্টি এ সুন্দর পৃথিবীটাকে মানুষ ও জীবজন্তুর জন্য বাসযোগ্য রাখার তাগিদে আসুন সবাই সচেতন হই।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট