চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

‘শেখ হাসিনাকে বাঁচাতে গুলি বুক পেতে নেয় সে’

ফাঁসির রায় শুনে কাঁদলেন মহিউদ্দিন শামীমের মা

সৌমিত্র চক্রবর্তী হ সীতাকু-

২১ জানুয়ারি, ২০২০ | ৫:৩৪ পূর্বাহ্ণ

১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি চট্টগ্রামের লালদিঘির মাঠের সমাবেশে যাবার পথে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে লক্ষ্য করে এলোপাথাড়ি গুলি ছোড়ে তৎকালীন পুলিশ সদস্যরা। গুলিতে জননেত্রী শেখ হাসিনার ক্ষতি হতে পারে এমন আশংকায় তৎক্ষণাত তাকে ঘিরে নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরী করেন দলের নেতাকর্মীরা। ফলে পুলিশের গুলিতে বিদ্ধ হন তারা। এরমধ্যে ২৪ জন মারাও যান। নিহতদের একজন সীতাকু-ের বাসিন্দা তৎকালীন ডিগ্রি কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা ছাত্রলীগের প্রচার সম্পাদক মহিউদ্দিন শামীম।
তিনি সীতাকু- পৌরসভাধীন মধ্যম মহাদেবপুর গ্রামের মৃত মৌলভী ফজলুল হক ও নিলুফা হকের পুত্র। ৫ ভাই-বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার বড়। একই ঘটনায় গুরুতর আহত হন তৎকালীন যুবলীগ নেতা অমল দাশ। গুলিতে তার মুখম-ল বিকৃত হয়ে যায়। এরপর কেটে গেছে দীর্ঘ ৩২ বছর। কিন্তু মহিউদ্দিন শামীম বা অমলের পরিবার কোন সুখবর পায়নি। কেউ খোঁজ রাখেনি তাদের। মাঝে ১৯৯৭ সালে তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা একবার সীতাকু-ে মহিউদ্দিন শামীমের বাড়িতে এসে তার বিধবা মাকে সান্ত¡না দিয়ে যান। কিন্তু আর্থিক বা মানসিক আর কোন সমর্থন পায়নি তার পরিবার। এমনটি খুনের বিচারের সান্ত¡নাও ছিলো না।

এদিকে এ ঘটনার পর ১৯৯২ সালে ৫ মার্চ আইনজীবী শহীদুল হুদা বাদি হয়ে মামলা দায়ের করেন। দীর্ঘ অপেক্ষা শেষে ৩২ বছর পর গতকাল (সোমবার) এ মামলার রায় হয়। বিভাগীয় স্পেশাল জজ মো. ইসমাইল হোসেনের আদালত রায় ঘোষণা করেন। এতে ৫ পুলিশ সদস্যের ফাঁসির আদেশ হয়। এ রায় ঘোষণার কথা ছড়িয়ে পড়লে স্বস্তির নিঃশ^াস ফেলেন মহিউদ্দিন শামীমের সহপাঠী- নেতাকর্মীরা। কিন্তু রায় শুনে কেঁদে ফেললেন তার মা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ক্ষোভ ও হতাশা ব্যক্ত করেন নিলুফা হক। তিনি বলেন, একদিনের জন্যও ছেলেকে ভুলতে পারিনি আমি। আমি বিধবা ছিলাম। পরিবারের বড় ছেলে ছিলো শামীম। তার উপরই ভরসা ছিলো সবচেয়ে বেশি। কিন্তু সে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে বাঁচাতে গিয়ে পুলিশের গুলি বুক পেতে নেয়। আর আমি চরম অসহায় হয়ে পড়ি। তার ছোট ছোট ভাই-বোন নিয়ে খুব দুর্দিনের মধ্যে ছিলাম আমি। কিন্তু কেউ খবর রাখেনি। দলের কোন নেতাকর্মীও কিচ্ছু করেনি। ১৯৯৭ সালে একদিন জননেত্রী শেখ হাসিনা আমার বাড়িতে আসেন। আমাকে সান্ত¡না দিয়ে বলেন আমিও পরিবারের সবাইকে হারিয়েছি। দুই বোন ছাড়া আর কেউ নেই। সান্ত¡না দিয়ে তিনি চলে যান, কিন্তু সন্তান হারানোর ব্যাথা বয়ে চলেছি আমি একা। আর্থিক অনটনে ছিলাম। কেউ সাহায্যের হাত বাড়ায়নি। এখন খুনি কয়েকজনের ফাঁসি হলো, একথা শুনেছি। শুনে ছেলের জন্য বুক ফেটে যাচ্ছে। কিন্তু আমাদের কি হলো ? এমনকি একটি শোক সভা করতেও দেখি না। শুধু আমার ছেলের জন্য আমিই কাঁদি।

এদিকে ৫ আসামির ফাঁসির রায়ে স্বস্তির নিঃশ^াস ফেলেছেন শামীমের দলের নেতাকর্মীরা। সেদিনের স্মৃতিচারণ করে শামীমের কমিটির ডিগ্রি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি মো. জাহাঙ্গীর ভূঁইয়া বলেন, ‘আমি ও শামীম সেদিন নেতাকর্মীদের নিয়ে একটি বাসযোগে জননেত্রী শেখ হাসিনার জনসভায় যোগ দিতে লালদিঘি মাঠের দিকে যাচ্ছিলাম। কিন্তু সেখানে নেতাকর্মীদের যেতে দেওয়া হচ্ছিল না। আমরা জননেত্রী শেখ হাসিনার সাথে বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে দিয়ে যাবার সময় হটাৎ-ই গুলি শুরু হয়। সে গুলিতে ঘটনাস্থলেই মারা যান শামীম এবং গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর জখম হন যুবলীগ নেতা অমল দাস। সে ঘটনার পর প্রথম দিকে তার কবরে ফুল দিলেও পরে তাও আর হয় না। কেউ তার পরিবারের পাশে দাঁড়ায়নি কেউ। শামীমের মৃত্যুর পর তার মা অন্যদের দিয়ে চরম দুঃসময় কাটান। কিন্তু স্থানীয় নেতারাও তার পাশে এসে দাঁড়ায়নি। এসব কারণে তিনি এখনো দলের উপর চরম বিরক্ত। আমরাও হতাশ। তবুও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমলে যে শেষ পর্যন্ত বিচার হয়েছে এটাই সান্ত¡না। কিন্তু আমরা আরো খুশি হব যদি জননেত্রী শেখ হাসিনা শামীমের এই অবদানের কথা স্মরণ করে তার পরিবারের জন্য কিছু করেন। জননেত্রী একজন মমতাময়ী। তিনি শামীমের মায়ের পাশে এসে দাঁড়ালে তার কাছে আমার-আমাদের মাথা এত নিচু থাকত না’।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট