চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

অননুমোদিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছেয়ে গেছে নগরী

নিচে গ্যারেজ, উপরে স্কুল এন্ড কলেজ

ইমরান বিন ছবুর

২১ জানুয়ারি, ২০২০ | ৫:১৬ পূর্বাহ্ণ

কোথাও গ্যারেজের উপরে স্কুল। আর কোথাও মাংসের দোকানের উপরে। স্কুলের কোন পরিবেশ না থাকলেও একটি ফ্ল্যাট বা ফ্লোর ভাড়া নিয়ে চলছে স্কুল। নগরীর অধিকাংশ বেসরকারি স্কুল বা স্কুল এন্ড কলেজের চিত্র এটি। পাঠদানের অনুমতি এবং একাডেমিক স্বীকৃতি না থাকলেও কৌশলে শিক্ষার্থী ভর্তি করাচ্ছে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। নগরীতে ২০২টি অনুমোদিত স্কুল থাকলেও নগরীর অলিগলিতে অনুমোদনহীন স্কুল রয়েছে প্রায় হাজারের কাছাকাছি। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে পাবলিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ না থাকায় অন্য স্কুল থেকে পরীক্ষায় অংশ নেয় শিক্ষার্থীরা। জেএসসি বা পিইসি’র মত পাবলিক পরীক্ষার আগে শিক্ষার্থীদের কথা ভেবে এক প্রকার বাধ্য হয়েই পরীক্ষার অনুমতি দেন বলে জানান শিক্ষা বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক।

নগরীর মুরাদপুরের সামান্য পূর্বে একটি চারতলা ভবনের দ্বিতীয় তলায় নর্দান পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ। স্কুলের নিচে রয়েছে মোটর সাইকেল মেরামতের গ্যারেজ। যেখানে শিক্ষার্থীদের দাঁড়ানোর বা বসার কোন জায়গা নেই। আরেকটু ব্যতিক্রম দৃশ্য দেখা যায়, শাহ আমানত সংযোগ সড়কের কালামিয়া বাজার অংশে। মাংসের দোকানের উপরে রয়েছে মহানগর মডেল স্কুল এন্ড কলেজ। প্রতিষ্ঠানের নামের শেষে কলেজ থাকলেও কলেজের কোন শিক্ষার্থী নেই, শিক্ষা কার্যক্রমও নেই। চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের স্কুল শাখা সূত্রে

জানা যায়, পাঠদানের অনুমতি এবং একাডেমিক স্বীকৃতি ছাড়াই এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

এছাড়াও, নগরীর বিভিন্ন স্থানে অনুমোদনহীন স্কুলে ছেয়ে গেছে নগরী। ডিসি হিলের সামনে পলেন গ্রামার স্কুল, জামানখান অরবিট গ্রামার স্কুল এন্ড কলেজ, চকবাজার মেট্রোপলিটন সায়েন্স কলেজ, মুরাদপুর ইডেন সিটি স্কুল, বহদ্দারহাট প্রাইম স্কুল এন্ড কলেজ, হালিশহর এলাকায় চাইল্ড হেভেন ডে-কেয়ার স্কুল, ট্রাস্ট স্কুল, ফ্লাওয়ার ফ্লো স্কুল এন্ড কলেজ ইত্যাদি। এসবের বাইরে নগরীর বিভিন্ন স্থান ও অলিগলিতে অনুমোদন ছাড়া গড়ে উঠেছে অসংখ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
বোর্ডের বিদ্যালয় শাখা সূত্রে জানা যায়, ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণী (নি¤œ মাধ্যমিক) পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করতে মেট্রো এলাকায় ০.২০ একর, পৌর এলাকায় ০.৩০ একর এবং মফস্বল এলাকায় ০.৫০ একর পরিমাণ জমি থাকতে হবে। নবম থেকে দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) ও দাখিল মাদ্রাসা স্থাপন করতে মেট্রো এলাকায় ০.২৫ একর, পৌর এলাকায় .৫০ একর এবং মফস্বল এলাকায় .৭৫ একর জমি থাকতে হবে। এছাড়াও, থাকতে হয় প্রয়োজনীয় ক্লাসরুম, পাঠাগার, বিজ্ঞানাগার, শিক্ষক-কর্মচারী এবং আশপাশের প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রাখলেই নতুন স্কুল-কলেজ অনুমোদন দেওয়া হয়।

এ সম্পর্কে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক ডা. বিপ্লব গাঙ্গুলী জানান, নগরীতে পাঠদানের অনুমতি এবং একাডেমিক স্বীকৃতপ্রাপ্ত বিদ্যালয়ের সংখ্যা ২০২টি। এগুলোর মধ্যে কোতোয়ালী থানায় রয়েছে ৪২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ডবলমুরিং থানায় ৩৭টি, বন্দর থানায় ২৬টি, পাঁচলাইশ থানায় ৩৮টি, চান্দগাঁও থানায় ২৬টি এবং পাহাড়তলী থানায় ৩৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এরবাইরেও নগরীতে অসংখ্য অনুমোদনহীন স্কুল রয়েছে।
তিনি বলেন, অনুমোদনহীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান বা সংশ্লিষ্টরা পাবলিক পরীক্ষার আগে আমাদের কাছে আসে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার সুযোগ দেয়ার জন্য। পরে অন্য অনুমোদিত স্কুল থেকে রেজিস্ট্রেশন করে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে সেসব শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনুমোদনে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ : শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রাথমিক অনুমতি না নিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন বা চালু করা যাবে না। চলতি মাসের ২ জানুয়ারি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। উপ-সচিব আনোয়ারুল হকের সই করা বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সম্প্রতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে বেসরকারি উদ্যোগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপনের লক্ষ্যে উদ্যোক্তারা মন্ত্রণালয় থেকে প্রতিষ্ঠান স্থাপন বা চালুর প্রাথমিক অনুমতি না নিয়েই পাঠদানের অনুমতির জন্য আবেদন করছেন। ফলে প্রতিষ্ঠান স্থাপন, চালু করা ও স্বীকৃতি দেওয়ার ক্ষেত্রে জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন, পাঠদান ও স্বীকৃতির জন্য ১৯৯৭ সালের নীতিমালা অনুযায়ী স্থাপনের অনুমতি নেওয়ার বিধান রয়েছে। তাই সংশ্লিষ্ট সবাইকে অবহিত করা হচ্ছে যে নীতিমালার ৪(৩) ও ৪(৬) অনুযায়ী মন্ত্রণালয় থেকে প্রাথমিক অনুমতি ছাড়া কোনও প্রতিষ্ঠান স্থাপন ও চালু করা যাবে না। স্বীকৃতি পাওয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাধ্যমিক পর্যায়ে উন্নীত করতে হলেও এই শর্ত পালন করে পাঠদানের অনুমতির জন্য আবেদন করতে হবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট