চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

চার সিদ্ধান্তে আয় দ্বিগুণ

ইমাম হোসাইন রাজু

১৯ জানুয়ারি, ২০২০ | ৪:৩৩ পূর্বাহ্ণ

চার সিদ্ধান্তে দুই বছরের ব্যবধানে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের পরীক্ষাগার (ল্যাবরেটরি) থেকে আয় বেড়েছে দ্বিগুণ। আধুনিক যন্ত্রপাতি স্থাপন, তদারকি বাড়ানো, দালালের দৌরাত্ম্য নিয়ন্ত্রণ এবং চিকিৎসকদের আন্তরিকতার ফলেই এ আয় বেড়েছে বলে দাবি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের।

২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল পরীক্ষা-নিরীক্ষা খাত থেকে আয় করেছে প্রায় পাঁচ কোটি টাকা। দুই বছরের ব্যবধানে ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে একই খাত থেকে চমেক হাসপাতাল আয় করেছে প্রায় সাড়ে ৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ দুই বছরেই দ্বিগুণ আয় করেছে বৃহত্তর চট্টগ্রামের সরকারি একমাত্র চিকিৎসা কেন্দ্রটি। আয়বৃদ্ধির পেছনে চার সিদ্ধান্ত বড় ভূমিকা রেখেছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
তবে, এই আয় আরও বাড়ানোর সুযোগ আছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. আখতারুল ইসলাম। তিনি পূর্বকোণকে বলেন, ‘হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় যদি তাদের তদারকি এবং কাজের ক্ষেত্রে আরও আন্তরিক হয়, তাহলে আয় আরও কয়েকগুণ বাড়ানো সম্ভব। জনবল কাঠামোসহ আরও সেবামুখী সিদ্ধান্তের ওপর গুরুত্ব দিলে আলোচ্য আয় বেড়ে যাবে’।

চমেক হাসপাতালের হিসাব কক্ষের তথ্য মতে, ২০১৬-২০১৭ অর্থ বছরে হাসপাতালের বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষাসহ বিভিন্ন খাতে আয় হয় পাঁচ কোটি টাকা। পরবর্তী বছরে তথা ২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরে আয় হয় ৭ কোটি ৫২ লাখ ১৯ হাজার ৯৭৭ টাকা ২২ পয়সা। এরমধ্যে ৬ কোটি ৯৮ লাখ ৫২ হাজার ৯৪০ টাকাই হচ্ছে পরীক্ষা-নিরীক্ষার। আর ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে (জুন ১৯ পর্যন্ত) দাঁড়িয়েছে সাড়ে ৯ কোটিতে। হিসেব অনুযায়ী দুই বছরের ব্যবধানে হাসপাতালের আয় বেড়েছে দ্বিগুণ।
যদিও সংশ্লিষ্টদের মতে, এ আয় হাসপাতালে ভর্তি থাকা মাত্র শুধু মাত্র ১৫ শতাংশ রোগী থেকে হয়েছে। তবে সবার চেষ্টায় আরও কয়েকগুণ বৃদ্ধি করা সম্ভব। এছাড়া বর্তমানে হাসপাতালের ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ল্যাবগুলোকে একস্থানে করা, সেবায় সহজীকরণ, জনবল বৃদ্ধি, টেকনিশিয়ান নিয়োগ, সেবাদানে সবার মানসিকতা থাকলেই আয় আরও বাড়বে বলেও অভিমত তাদের।

বর্তমানে চমেক হাসপাতালের নতুন ভবনের চতুর্থ তলায় বিভিন্ন প্যাথলজির পরীক্ষা-নিরক্ষী করা হয়। কিন্তু কোন রোগীর যদি এক্স-রে করতে হয়, তাকে আবার পুরাতন ভবনের তিন তলায় যেতে হয়। তারমধ্যে সিরিয়াল ও নানা কার্যক্রমে অনেকবেই বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়। এছাড়া হাসপাতালের জরুরি বিভাগের পাশেই নতুন কার্ডিয়াক সার্জারি বিভাগে সিটি স্ক্যান, হাসপাতালের পশ্চিম গেট সংলগ্নে ব্লাড ব্যাংক, নতুন বিল্ডিংয়ের ইসিজি। এমন ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকায় অনেকটাই দিন পার হয় রোগীদের। তবে সংশ্লিষ্টদের মতে এসব পরীক্ষা-নিরীক্ষাগুলো একই ছাদের নিচে কিংবা একস্থানে আনা গেলে রোগীদের বাইরে গিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার প্রবণতা কমে আসবে।
এ প্রসঙ্গে চমেক হাসপাতালের হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা মো. শাহাজাহান পূর্বকোণকে বলেন, ‘এখনো হাসপাতালে অনেক যন্ত্রপাতি নেই। তাছাড়া বর্তমানে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হলে হাসপাতালে এদিক-ওদিক ছুটতে হয় রোগীদের। যার কারণে সবাই বাইরের বেসরকারি ডায়াগনস্টিকের দিকে ছুটেন। একটির জন্য গেলেও তারা সবগুলোই সেখান থেকে করে আসেন। কিন্তু এসব যন্ত্রপাতি যদি হাসপাতালে থাকে তাহলে আয় আরও বাড়বে। তাছাড়া জনবল কাঠামোগত সমস্যায় আয় বৃদ্ধিতে বড় একটি বাধা। এ সমস্যা কাটতে পারলে আয় বৃদ্ধি পাবে। সেবায় সহজীকরণ করা গেলেও আয় দিনদিন বৃদ্ধি করা সম্ভব’।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, আগে চমেক হাসপাতালে যন্ত্রপাতির সংখ্যা কম থাকলেও গত দুই বছরে তা অনেকহারে বেড়েছে। তাছাড়া দীর্ঘদিন থেকেই হাসপাতালজুড়ে দালালদের আনাগোনা থাকলেও গত বছরের শুরু থেকে হাসপাতালের প্রতিটি ওয়ার্ডসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সিসিটিভি স্থাপনের ফলে তা অনেকাংশেই দূর হয়েছে। এর বাইরে আগে রোগীরা বাইরে তাদের প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে থাকলেও বর্তমানে চিকিৎসকদের আন্তরিকতায় ও তদারকির কারণেই এখন হাসপাতালে করে থাকেন অনেকেই। যার জন্যই দিনদিন আয় বৃদ্ধি পাচ্ছে।

এসব প্রসঙ্গে চমেক হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. আখতারুল ইসলাম পূর্বকোণকে বলেন, ‘আগে হাসপাতালের দালাল থাকলেও তা এখন অনেকাংশেই কমে গেছে। চারদিকেই সিসিটিভি থাকা ও নিয়মিত তদারকির ফলেই দালাল অনেকাংশেই দূর হয়েছে। যার ফলে এখন আর রোগীকে বাইরে গিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হয় না’।
যে মাসে হাসপাতালে সিসিটিভি বসানো হয়েছে, অন্য মাসের তুলনায় সে মাসেই ২৯ লাখ টাকা বেশি আয় হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এসব বিষয় জোর দেয়াতে আয় বেড়েছে। তবে পর্যাপ্ত জনবল থাকলে আয় আরও বাড়ানো সম্ভব। যা হয়েছে তাও শুধুমাত্র ১৫ শতাংশ রোগী থেকে। জনবল কম থাকায় সেবাও দেয়া যাচ্ছে না’।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট