চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

মোটামুটি শান্তিপূর্ণ ভোট

নিজস্ব প্রতিবেদক

১৪ জানুয়ারি, ২০২০ | ৩:৩০ পূর্বাহ্ণ

বিচ্ছিন্ন কয়েকটি ঘটনা ছাড়া মোটামুটি শান্তিপূর্ণ ভোটগ্রহণের মধ্যদিয়ে শেষ হয়েছে চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপ-নির্বাচন। বিএনপি প্রার্থীর অভিযোগ, বহিরাগত দিয়ে কেন্দ্র দখল করে ‘গোপন কক্ষে’ প্রকাশ্যে ভোট নেওয়া হয়েছে। আর আওয়ামী লীগ প্রার্থী বলেন, সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচন হয়েছে।

গতকাল সকাল ৯টার দিকে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মোছলেম উদ্দিন ও বিএনপি প্রার্থী আবু সুফিয়ান নগরীর বহদ্দারহাট এখলাছুর রহমান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শন করেন। দুই প্রার্থীর কুশল বিনিময়, হাস্যোজ্জ্বল কথাবার্তা ও কোলাকুলিতে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। এর কিছুক্ষণ পরই বহদ্দারহাট ও খাজা রোড এলাকায় ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। খাজা রোড এলাকায় কিরিচ-লাঠি নিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে একদল যুবক। চান্দগাঁও এনএমসি আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে পুলিশ ওবিএনপির সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।

সকাল ১০ টার দিকে চান্দগাঁও আবাসিকের সিডিএ পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ কেন্দ্রে ভোট দিতে যান বিএনপি প্রার্থী আবু সুফিয়ান। সুফিয়ানকে ভোট দিতে বাধা দেয় আওয়ামী লীগের লোকজন। তাদের দাবি ছিল, সাধারণ ভোটারের মতো সুফিয়ানকে লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দিতে হবে। সুফিয়ানও ভোট দেওয়ার জন্য লাইনে দাঁড়ান। কেন্দ্র ও কেন্দ্রের বাইরে হৈ চৈ শুরু হয়। এ সময় আবু সুফিয়ান সাংবাদিকদের বলেন, ‘বহিরাগত সন্ত্রাসীদের এনে কৃত্রিম লাইন বানিয়ে রাখা হয়েছে। ভোটারদের কেন্দ্রে আসতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও অধিকাংশ কেন্দ্র কেন্দ্র থেকে বিএনপির এজেন্ট বের করে দেওয়া হয়েছে।
বিএনপি প্রার্থী সুফিয়ান ছাড়াও তার পরিবারের সদস্যদের ভোট দিতে বাধা দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন সুফিয়ানের ছেলে ব্যারিস্টার তানজিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ছাত্রলীগের বহিরাগত শতাধিক নেতাকর্মী কেন্দ্র দখল করে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। ভীতিকর পরিস্থিতিতে ভোট দিয়েছি। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নগরীর খাজা রোড এলাকায় কিরিচ-লাঠি নিয়ে শোডাউন করে একদল যুবক। তাদের অনেকের মুখ রুমাল দিয়ে বাঁধা ছিল।
বোয়ালখালী উপজেলা ও নগরীর ৫টি ওয়ার্ড মোহরা, চান্দগাঁও, পাঁচলাইশ, পূর্ব ও পশ্চিম ষোলশহর) নিয়ে চট্টগ্রাম-৮ নির্বাচনী এলাকা।
বোয়ালখালী ও নগরীর অংশে দেখা যায়- সকাল থেকে প্রতিটি কেন্দ্রের বাইরে বিপুল সংখ্যক লোকের সমাগম ছিল। তবে অধিকাংশ কেন্দ্রে ভোটারের উপস্থিতি ছিল কম। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভোটারের উপস্থিতিও বাড়তে থাকে।

বিভিন্ন কেন্দ্র ঘুরে দেখা যায়, অধিকাংশ কেন্দ্রে বিএনপির এজেন্ট ছিল না। সরকার দলীয় লোকজনের অবাধ প্রবেশ ছিল। নগরীর কেন্দ্রগুলো বিভিন্ন ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। বিএনপি প্রার্থী আবু সুফিয়ানের অভিযোগ, ভোটকেন্দ্র দখল করে বাহিরাগতরা ভোট দিচ্ছে। আমাদের সমর্থকদের ভোট দিতে দেওয়া হয়নি। আমার এজেন্টদের বের করে দিয়ে গোপন কক্ষে প্রকাশ্যে ভোট নিয়েছে সরকারদলের লোকজন।’
তবে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মোছলেম উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে ভোট শেষ হয়েছে। ভোটাররা স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিয়েছেন। এতে নৌকার বিজয় সুনিশ্চিত জেনে বিএনপি প্রার্থী নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য মিথ্যা অভিযোগ করেছেন।’ সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিএনপি হচ্ছে একটি নালিশ পার্টি।’ ইভিএমে ভোট গ্রহণ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ প্রার্থী বলেন, ‘প্রযুক্তির উন্নয়ন হয়েছে। মানুষের জীবনমানের উন্নতি হয়েছে। প্রযুক্তির মাধ্যমে খুব কম সময়ে ভোটদান পদ্ধতি আমার আগে জানা ছিল না। এতে জাল ভোট নেই। শান্তি ও সুষ্ঠুভাবে ভোট দিচ্ছেন ভোটাররা।’

চান্দগাঁও এলাকার এনএমসি আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ধানের শীষের এক সমর্থককে পিটিয়ে ভোটকেন্দ্র থেকে বের করে দিয়েছে ছাত্রলীগের কর্মীরা। তাকে পুলিশ গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়। এরপর ওই কেন্দ্রে পুলিশ ও বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। রাবেয়া বশর ইনস্টিটিউট কেন্দ্রে বিএনপির অভিযোগ, তাদের এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়। ধানের শীষ সমর্থকদের কেন্দ্রে ঢুকতে দেয়নি। নৌকার সমর্থকদের কেন্দ্রে ঢুকতে দেয়।
আমাদের বোয়ালখালী সংবাদদাতা জানান, সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, সকাল থেকে উপজেলার প্রায় কেন্দ্রে ভোটারদের লাইন দেখা যায়। কয়েকটি কেন্দ্রে উপস্থিতি ভালো ছিল। তবে বেলা বাড়ার সাথে সাথে তা ভোটার উপস্থিতি কমে আসে। ২টার পর থেকে ভোটারের উপস্থিতি ছিল একেবারেই কম। প্রতিটি কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সরব উপস্থিতি ছিল। প্রতি কেন্দ্রে আ. লীগের এজেন্ট থাকলেও অধিকাংশ কেন্দ্রে বিএনপির এজেন্ট ছিল না। সকাল ৯টায় পোপাদিয়া আকুবদ-ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পুরুষ ও মহিলা ভোটারের দীর্ঘ লাইন ছিল। প্রিসাইডিং অফিসার মো. সাইফুল ইসলাম জানান, ২৭৬৮ ভোটের মধ্যে বিকেল ৩টা পর্যন্ত কাস্টিং ভোট ৮০৫। পুর্ব কধুরখীল উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র, বশরত নগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র, চরণদ্বীপ দেয়ান বিবি উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র, পশ্চিম গোমদন্ডী উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র, সারোয়াতলী ইব্রাহিম নূর মোহাম্মদ উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র, চাঁন্দারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র, মীরপাড়া হামিদুল হক সকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র, পৌরসভার পশ্চিম কধুরখীল এলাকার তিন কেন্দ্রে এজেন্ট বের করে দেওয়ার অভিযোগ করেছে স্থানীয় বিএনপি নেতাদের। সকাল ১০টায় সৈয়দনগর আহছানিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোট পড়ে শতকরা ৫ ভাগ। ১২ টার দিকে পশ্চিম কধুরখীল উচ্চ বিদ্যালয়ে ভোট কাস্টিং হয় প্রায় সাড়ে ৯ শ’ বলে জানান এ কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার মো. ইউনুছ পাটোয়ারী। বিকেল ৩টায় শাকপুরা হাজী আজগর আলী উচ্চ বিদ্যালয়ে ভোট কাস্টিং হয় ১২২৫ বলে জানান প্রিসাইডিং অফিসার অলক কান্তি সেন। এ কেন্দ্রে মোট ভোটার ২৫৩৯। আহল্লা আছাদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার মাহমুদুল হক জানান বিকেল ৪টা পর্যন্ত এ কেন্দ্রে ২৪০৮ ভোটের মধ্যে ভোট পড়েছে ৯১০টি। এরকম পরিস্থিতি ছিল উপজেলার ৬৯টি ভোটকেন্দ্রে।

দেখা যায়, সকাল থেকে ভোটাররা ভোট কেন্দ্রে ক্ষণে ক্ষণে আসতে থাকলেও ছিল উদ্বেগ-উৎকন্ঠা। বিকেল ৪টার দিকে ভোট কেন্দ্রে আসা সৈয়দপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভোটার মোহছেনা বেগম পূর্বকোণকে জানান, সবাই ভোট দিতে পারছে, কোনো ঝামেলা নাই-এ খবরে ভোট দিতে আসছি। গতবার ভোট দিতে পারিনি। ইভিএমে অনেক সহজে ভোট দিলাম। ভাল লেগেছে।
উপজেলা বিএনপির সভাপতি মোস্তাক আহমদ খান বলেন, এ নির্বাচন প্রমাণ করে দলীয় সরকারের অধীনে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। কেউ নিজের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেননি। বিভিন্ন কেন্দ্রে ধানের শীষের এজেন্ট বের করে দেয়া হয়েছে। শতাধিক নেতাকর্মীকে হেনস্তা করা হয়েছে। প্রহসনের নির্বাচন বোয়ালখালীর জনগণ প্রত্যাখান করেছে।

উপজেলা আ. লীগ সভাপতি নুরুল আমিন চৌধুরী পূর্বকোণকে বলেন, উৎসবমুখর পরিবেশে শান্তিপূর্ণ এবং নিরপেক্ষ ভোট হয়েছে। ইভিএম-এ ভোট নিরাপদ। বিএনপির অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, কোনো কোনো কেন্দ্রে তারা এজেন্ট না দিলে আ. লীগের করণীয় কী ?
উপজেলা নির্বাহী অফিসার আছিয়া খাতুন পূর্বকোণকে বলেন- ভোট অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়েছে। যত অভিযোগ পেয়েছি, দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ভোটাররা স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোটে অংশগ্রহণ করেছেন।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট