চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

হাসানের নেতৃত্বে কর্ণফুলীতে ৭/৮ সদস্যের চক্র

সংঘবদ্ধ চোরচক্রের টার্গেট মালবোঝাই চলন্ত গাড়ি

চোরাই মালামালসহ ৩ সদস্য গ্রেপ্তার

মোর্শেদ নয়ন, কর্ণফুলী

১৪ জানুয়ারি, ২০২০ | ৩:১৪ পূর্বাহ্ণ

নগরীর খাতুনগঞ্জ, চাকতাই ও জুবিলী রোড এলাকার পাইকারি দোকান থেকে বিভিন্ন মালামাল গাড়িবোঝাই করে শাহ আমানত সেতু হয়ে পর্যটন জেলা কক্সবাজার, পার্বত্য জেলা বান্দরবান ও দক্ষিণ চট্টগ্রামের ৮ উপজেলায় পরিবহন করা হয়। আবার একইভাবে এসব জেলা উপজেলা থেকে গাড়িবোঝাই করে বিভিন্ন মালামাল নগরীর খাতুনগঞ্জ, চাকতাই ও জুবিলী রোড এলাকার বিভিন্ন পাইকারি দোকানে আসে। এসব গাড়িকে টার্গেট করে গড়ে ওঠছে একটি সংঘবদ্ধ চোরচক্র। এরা দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রাম শহরের প্রবেশদ্বার শাহ আমানত সেতু থেকে কর্ণফুলী উপজেলার শিকলবাহা এলাকার ক্রসিং এলাকায় চলন্ত মালবোঝাই গাড়ির পেছনে উঠে মালামাল চুরি করে আসছে। এসব চুরি করা মাল মহাসড়কের পাশে চার দেয়ালের প্রাচীরের মধ্যে গড়ে তোলা গোডাউনে সংরক্ষণ করে থাকে। পরে গোডাউনে সংরক্ষণ করা এসব চোরাইমাল বাজারে বিক্রি করে থাকে।

চলন্ত গাড়িতে চুরি হত, ফলে গাড়ির চালক বুঝে উঠতে পারত না কোথায় চুরির ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় থানায় কোন মামলা হত না। এতে চোরেরাও থেকে যেত ধরা ছোঁয়ার বাইরে। আর এ চক্রের মূলহোতা হচ্ছে কর্ণফুলী উপজেলার শিকলবাহা ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মৃত মো. সোলায়মানের পুত্র মো. হাসান প্রকাশ রফিক (২৭)। তার নেতৃত্বে কর্ণফুলীতে গড়ে ওঠেছে ৭/৮ সদস্যের এ সংঘবদ্ধ চোরচক্র। রোববার (১২ ডিসেম্বর) ভোরে কর্ণফুলী উপজেলার শিকলবাহা থেকে বিপুল পরিমাণ চোরাই মালামালসহ গ্রেপ্তার সংঘবদ্ধ চোরচক্রের তিন সদস্যের বরাত দিয়ে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য জানিয়েছে কর্ণফুলী থানা পুলিশ। গ্রেপ্তার এ চোরচক্রের তিন সদস্যকে পুলিশ গতকাল (সোমবার) আসামি করে মামলা দায়েরের পর আদালতে প্রেরণ করেছে। আদালত তাদেরকে জেল হাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন। গ্রেপ্তারকৃতরা হল, মো. দিদার হোসেন প্রকাশ বুলবুল (৩২), শাহজাহান বাদশা (৩৪) ও মো. আজম উদ্দিন (২১)। তারা সকলেই মালবোঝাই চলন্ত গাড়ির পেছনে উঠে মালামাল চুরি করে। তবে পালিয়ে গেছে তাদের মূলহোতা মো. হাসান প্রকাশ রফিক।

অনুসন্ধানে জানা যায়, চট্টগ্রাম শহর থেকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক দিয়ে প্রতিনিয়ত মাল বোঝাই গাড়ি যাওয়া-আসা করে। দীর্ঘদিন ধরে এসব গাড়িকে টার্গেট করে মাল চুরি করে আসছে একটি সংঘবদ্ধ চোরচক্র। চট্টগ্রাম শহরের খাতুনগঞ্জ, চাকতাই ও জুবিলী রোড এলাকার পাইকারি দোকান থেকে লোড করা গাড়িকে টার্গেট করে এ চক্রটি শাহ আমানত সেতু থেকে কলেজবাজার এলাকায় প্রতিনিয়ত মাল চুরি করে আসছে। এ চক্রটি যে গাড়িটিকে টর্গেট করে সে গাড়ির পিছনে একটি সিএনজি ট্যাক্সি নিয়ে ২-৩ জন চোর চক্রের সদস্য অপারেশনে অংশ নেয়। সুবিধামত উঠে পড়ে চলন্ত গাড়িতে। উঠেই গাড়ির পিছনের অংশের ত্রিপল কেটে মালামাল বের করে সড়কের পাশে ঝোপে ফেলে দেয়।

কর্ণফুলী থানার শিকলবাহা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আলমগীর হোসেন দৈনিক পূর্বকোণকে জানান, রোববার ভোরে সাতটি চোরাই টায়ার নিয়ে যাওয়ার সময় উপজেলার শিকলবাহা ৫ নং ওয়ার্ডের টাওয়ার ভবন এলাকা থেকে মো. দিদার হোসেন, শাহজাহান বাদশা ও ট্রাকচালক আজম উদ্দিনকে আটক করা হয়। আটক তিনজন স্বীকার করেছে মো. হাসান প্রকাশ রফিকের নেতৃত্বে তারা সংঘবদ্ধ একটি চক্রের সদস্য, তারা সড়কে চলমান ট্রাক ও পিকআপের পেছনে উঠে মালামাল চুরি করে। তাঁদের স্বীকারোক্তি মতো শিকলবাহার আলী সিকদারের বাড়িতে গিয়ে মো. হাসান প্রকাশ রফিকের ঘরে অভিযান চালানো হয়। ওই সময় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে হাসান ও তার সহযোগী মো. হোসেন প্রকাশ সুমন (২০) পালিয়ে যায়। তবে তার ঘর থেকে বিপুল পরিমাণ চোরাই শুঁটকি, মোটরসাইকেলের যন্ত্রাংশ, সিলিং ফ্যানের অংশবিশেষ ও নারিকেল তেলের বোতল উদ্ধার করা হয়েছে।

জানতে চাইলে কর্ণফুলী থানার অফিসার ইনর্চাজ (ওসি) মোহাম্মদ ইসমাইল হোসেন দৈনিক পূর্বকোণকে জানান, ‘আটক তিনজনসহ পাঁচ চোরের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে। তাদেরকে আদালতে প্রেরণ করলে আদালত জেলে পাঠানোর নির্দেশ দেন। চোরচক্রের মূলহোতা মো. হাসান প্রকাশ রফিকসহ বাকি সদস্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলে জানান তিনি।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট