চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

বহুকাক্সিক্ষত বে টার্মিনাল

নির্মাণ শুরু হচ্ছে না এ বছরও

এপ্রিলে ফিজিবিলিটি স্টাডি, শেষ হতে সময় লাগবে নয় মাস হ জিটুজি কারা বাস্তবায়ন করবে এখনও নির্ধারণ হয়নি।

সারোয়ার আহমদ

৯ জানুয়ারি, ২০২০ | ৫:১৪ পূর্বাহ্ণ

২০২০ সালেও শুরু হচ্ছে না বহুল কাক্সিক্ষত বে টার্মিনাল প্রকল্পের নির্মাণ কাজ। কারণ এপ্রিল নাগাদ শুরু হবে এই প্রকল্পের ট্রানজেকশনাল এডভাইজার নিয়োগসহ ডিটেইলড ফিজিবিলিটি স্টাডির কাজ, যা শেষ করতে সময় লাগবে নয় মাস। এ কাজ শেষ হলে চট্টগ্রাম বন্দরের ফোরকাস্ট ও ডিমান্ড নির্ধারণ, বে টার্মিনালের জেটি ও ইয়ার্ডের সংখ্যা নির্ধারণ, ব্রেক ওয়াটার ও ড্রেজিং এর পরিমাণ নির্ধারণ এবং অপারেশনের ধরণ নির্ধারণ হবে। এরই মধ্যে ঠিক হবে কোন দেশের কোন প্রতিষ্ঠান বে টার্মিনালের নির্মাণ কাজ করবে। এসব কাজের অগ্রগতি থেকে ধারণা করা যায় এ বছরেও শুরু করা সম্ভব নয় বে টার্মিনালের নির্মাণ কাজ।

জানা যায়, মূলত পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) ও গভর্নমেন্ট টু গভর্নমেন্ট (জিটুজি) প্রক্রিয়ায় বে টার্মিনালের কাজ করার সিদ্ধান্ত হলে নতুন করে আবার ট্রানজেকশনাল এডভাইজার নিয়োগসহ ডিটেইলড ফিজিবিলিটি স্টাডির প্রয়োজন পড়ে। আর এ কাজের জন্য খরচ হবে প্রায় ১৬ কোটি টাকা। আগ্রহী আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ট্রানজেকশনাল এডভাইজার নিয়োগসহ ডিটেইলড ফিজিবিলিটি স্টাডির জন্য প্রস্তাব চাওয়া হয়েছিল। প্রস্তাব জমা দেওয়ার শেষ দিন ছিল গত ৫ ডিসেম্বর। বিভিন্ন দেশ থেকে মোট ২১টি প্রস্তাব জমা পড়ে। সেগুলো যাচাই-বাছাইয়ের পর যোগ্য প্রতিষ্ঠানকে এ কাজ দেওয়া হবে। বন্দর কর্তৃপক্ষ আশা করছে এপ্রিলের মধ্যে যোগ্য প্রতিষ্ঠান বাছাইয়ের প্রক্রিয়া শেষ করে স্টাডির কাজ শুরু করতে পারবে।

এর আগে ২০১৬ সালে সাড়ে ৬ কোটি টাকা ব্যায়ে জার্মান প্রতিষ্ঠান শেল হর্নের নেতৃত্বে ওই দেশের এইচপিসি হামবুর্গ পোর্ট কনসালটিং এবং বাংলাদেশের কেএস কনসালট্যান্টস লিমিটেড যৌথভাবে এই প্রকল্পের প্রি ফিজিবিলিটি স্টাডি (প্রাক সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষা) করে। কিন্তু বে-টার্মিনাল প্রকল্পের কাজ পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের মাধ্যমে জিটুজি (সরকারের সঙ্গে সরকারের) পদ্ধতিতে বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেয়া হলে পুনরায় ডিটেইলড স্টাডির প্রয়োজন পড়ে।

এদিকে প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকার বে-টার্মিনাল প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণের কাজও শেষ হয়নি। বে টার্মিনালের জন্য ব্যক্তি মালিকানাধীন ৬৮ একর ভূমি এরইমধ্যে অধিগ্রহণ করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। এতে ইয়ার্ড ও ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণের প্রকল্প নেয়া হলেও নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ে ডিপিপি আটকে থাকায় কাজটি থমকে আছে।

গত এপ্রিলে প্রকল্পের অবশিষ্ট ৮০৩ একর জমি অধিগ্রহণের অনুমতি মিলেছে। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ার কাজ করছে। তবে খুব একটা অগ্রগতি নেই এ কাজে।
নগরীর পতেঙ্গা-হালিশহর এলাকায় সাগর উপকূল ঘেঁষে বে-টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে। ৮৭১ একর ব্যক্তি মালিকানাধীন ও সরকারি জমি ছাড়াও সমুদ্র থেকে জেগে উঠা আরও এক হাজার ৬০০ একরসহ দুই হাজার ৫০০ একর জমিতে টার্মিনালটি নির্মাণের কথা রয়েছে। এটি হবে চট্টগ্রাম বন্দরের বর্তমান অবকাঠামোর চেয়ে প্রায় পাঁচগুণ বড়।

দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রাম বন্দরের বর্তমান অবকাঠামো ৪৫০ একর জমির ওপর নির্মিত। এ বন্দরে বর্তমানে সাড়ে ৯ মিটার গভীরতা ও ১৯০ মিটার দৈর্ঘ্যের বড় জাহাজ প্রবেশ করতে পারে না। বে টার্মিনাল হলে টার্মিনাল হলে ভিড়তে পারবে ১২ মিটার গভীরতা ও ২৮০ মিটার পর্যন্ত দৈর্ঘের জাহাজ। ফলে বন্দরে প্রতি বছর যে পরিমাণ আমদানি-রফতানি পণ্য হ্যান্ডলিং হচ্ছে, বে-টার্মিনাল হলে হ্যান্ডলিং হবে তার চেয়ে পাঁচগুণ বেশি পণ্য।

বে টার্মিনালের জন্য ২১ হাজার কোটি টাকা বন্দরের একার পক্ষে জোগান দেয়া সম্ভব নয়। তাই প্রকল্পটি পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের মাধ্যমে জিটুজি (সরকারের সঙ্গে সরকারের) পদ্ধতিতে বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তবে এটি কারা বাস্তবায়ন করবে তা এখনও নির্ধারণ হয়নি।

যদিও বিদেশি সাতটি প্রতিষ্ঠান বে টার্মিনাল নির্মাণের প্রস্তাব দিয়েছে। প্রতিষ্ঠান সাতটি হল- পোর্ট অব সিঙ্গাপুর অথরিটি (পিএসএ), সংযুক্ত আরব আমিরাতের ডিপি ওয়ার্ল্ড, সৌদি আরবের রেড সি গেটওয়ে, ভারতের আদানি গ্রুপ, ডেনমার্কের এপিএম টার্মিনালস, চীনের চায়না মার্চেন্টস গ্রুপ এবং দক্ষিণ কোরিয়ার হুন্দাই গ্রুপ।
বন্দর সূত্র জানায়, প্রকল্প কাজ কোনো প্রতিষ্ঠানকে দেয়া হবে তা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট